Friday 29th of March 2024
Home / অর্থ-শিল্প-বাণিজ্য / ভারতে সয়াবিন মিল রপ্তানি বন্ধ চায় ফিআব

ভারতে সয়াবিন মিল রপ্তানি বন্ধ চায় ফিআব

Published at আগস্ট ২২, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক: পোলট্রি, মৎস্য ও ক্যাটল ফিড তৈরির অন্যতম উপাদান সয়াবিন মিল রপ্তানি বন্ধ চায় “ফিড ইন্ডাষ্ট্রিজ এসোসিয়েশন বাংলাদেশ (ফিআব)”। রবিবার (২২ আগস্ট) ফিআব সাধারণ সম্পাদক মো. আহসানুজ্জামান স্বাক্ষরিত একটি চিঠি ফিড তৈরির অন্যতম এ কাঁচামালটি রপ্তানি বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরারব পাঠানো হয়েছে ; এছাড়াও চিঠিটি প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর ও মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকগণকে সংযুক্ত করা হয়েছে। মূলত ভারতে সয়াবিন মিল রপ্তানির গুঞ্জনে দেশের বাজারে পণ্যটির দাম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে চিঠিটি ইস্যু করা হয়। সরকারের সার্বিক সহযোগিতায় বর্তমান সংকট উত্তরণ অবশ্যই সম্ভব হবে, বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে আশাবাদ ব্যাক্ত করা হয়।

এতে বলা হয়- মাছ, মুরগির মাংস, দুধ ও ডিম উৎপাদনে মোট ব্যয়ের প্রায় ৭০% খরচ হয় খাদ্যে। ফিডমিলে মৎস্য ও প্রাণিখাদ্য উৎপাদনে ৭০-৭৫ ভাগ ব্যয় হয় কাঁচামাল সংগ্রহে। ভুটা, সয়াবিন মিল, চাউলের কুড়া, আটা, ফিশ মিল, ময়দা, সরিষার খৈল, তেল, ভিটামিন ও মিনারেল ইত্যাদি ফিডের প্রধান কাঁচামাল। আমাদের দেশের ফিডমিলগুলোতে ব্যবহৃত কাঁচামালের অধিকাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। সয়াবিন মিল পোলট্রি ও মৎস্য খাদ্যের একটি প্রধান উপাদান এবং এর ব্যবহার ২৫-৩৫ ভাগ পর্যন্ত হয়ে থাকে। বর্তমানে চাহিদাকৃত সয়াবিন মিল দেশীয় সয়াবিন তৈল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ এবং ভারত, আমেরিকা, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা ইত্যাদি দেশ থেকে আমদানি করা হয়।

আমাদের সয়াবিনমিলের মোট চাহিদা বছরে ১৮-২০ লাখ মেট্রিক টন। ৫৫-৬০ ভাগ স্থানীয়ভাবে এবং বাকি ৪০-৪৫ ভাগ আমদানি করে চাহিদা পূরণ করা হয়। আমাদের দেশের সয়াবিন মিল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সয়াবিন সীড শুল্কমুক্ত (শূণ্য) ভাবে আমদানি করে সয়াবিন তৈল উৎপাদন করে এবং বাই প্রোডাক্টস হিসেবে সয়াবিন মিল দেশীয় বাজারে বিক্রি করে যার একমাত্র ব্যবহারকারী পোলট্রি, মৎস্য ও ক্যাটল ফিড উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং সাধারণ খামারীবৃন্দ।

চিঠিতে বলা হয়, বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন মিলের মূল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে স্থানীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের উৎপাদিত সয়াবিন মিলের মূল্য ক্রমাগত বৃদ্ধি করে চলেছে। অতীতে পাশ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে সয়াবিন মিল আমদানি করা হলেও বর্তমানে ঐ দেশে সয়াবিন মিলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আমেরিকা, ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনা হতে কিছু কিছু সয়াবিন মিল আমাদের দেশে আমদানি হচ্ছে। আমাদের মূলত নির্ভর করতে হচ্ছে স্থানীয় সয়াবিন মিল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর। বর্তমানে সয়াবিন মিল ও ভূট্টাসহ আমাদের শিল্পে ব্যবহৃত প্রতিটি কঁচামালের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধির ফলে ফিডের মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অন্যদিকে উৎপাদিত মাছ, মুরগি, দুধ, ডিম এবং গবাদিপশুর মূল্য নিম্ন পর্যায়ে থাকার কারণে খামারীরা চরম লোকসানের মধ্য দিয়ে খামার পরিচালনা করতে বাধ্য হচ্ছে; এমনকি অনেক খামার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে।

সেখানে আরো বলা হয়, বর্তমান দেশে সয়াবিন মিলের চরম সংকট থাকা সত্ত্বেও আমাদের দেশ হতে ভারতে সয়াবিন মিল রপ্তানির প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি এবং এ সংবাদ প্রচারের পর স্থানীয় সয়াবিন মিল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সয়াবিন মিলের দাম কেজি প্রতি ৪-৫ টাকা বৃদ্ধি করেছে এবং সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে ফলে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে প্রতিকেজি সয়াবিন মিল ৫২-৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ভারতে সয়াবিন মিল রপ্তানি শুরু হলে এ মূল্য আরো বৃদ্ধি পাবে এবং সয়াবিন মিলের অভাবে অনেক ফিডমিলের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাবে।

আমরা দীর্ঘদিন ধরে করোনাকালিন সংকটের মধ্যে আছি। দেশের চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা এ সময় অধিক পরিমাণে মাছ, মাংস, দুধ ও ডিম গ্রহণের পরামর্শ প্রদান করছেন। আমরা খামারীদের সাথে নিয়ে এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রেখে দেশের মানুষের প্রোটিনের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে সরকারকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। এই পরিস্থিতিতে মৎস্য ও প্রাণিখাদ্যের একটি প্রধান উপাদান সয়াবিন মিল ভারতে রপ্তানি হলে স্থানীয় বাজারে অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি এবং সংকট সৃষ্টি হবে। যা কার্যত এই শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্থ করবে। এখানে উল্লেখ্য যে, ভারত সবসময় অভ্যন্তরীণ সংকট এবং মূল্য বৃদ্ধি হলে চাউল এবং পেয়াজসহ অন্যান্য পণ্যের রপ্তানি বন্ধ করে দেয়।

“ফিআব” জয়েন্ট স্টক কোম্পানীজ এন্ড ফার্ম কর্তৃক এবং এফবিসিসিআই এর সদস্যভূক্ত সংগঠ এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ট্রেড অগনাইজেশন হিসেবে অনুমোদিত উল্লেখ করে চিঠিতে বলা হয়, ‘বর্তমানে দেশে প্রায় ২৫০টি ফিডমিল মৎস্য ও প্রাণিখাদ্য উৎপাদন করছে এর মধ্যে ৯১ টি ফিডমিল ফিআব -এর সক্রিয় সদস্য। ফিআব -এর সদস্যবৃন্দ “মৎস্যথাদ্য ও পশুখাদ্য আইন ২০১০; “পশুখাদ্য বিধিমালা ২০১৩”; “মৎস্যখাদ্য বিধিমালা ২০১১” অনুসরণ করে খাদ্য উৎপাদন ও সকল খামারীদের মধ্যে সুলভমূল্যে বিপণন করছেন, বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।

This post has already been read 4049 times!