Saturday 20th of April 2024
Home / এক্সক্লুসিভ / ব্রাহমা জাতের গরুগুলোর আমদানি প্রক্রিয়া ছিল সম্পূর্ণ বেআইনি -মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী

ব্রাহমা জাতের গরুগুলোর আমদানি প্রক্রিয়া ছিল সম্পূর্ণ বেআইনি -মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী

Published at জুলাই ৬, ২০২১

মো. খোরশেদ আলম জুয়েল: বিমানবন্দরে আটককৃত ব্রাহমা জাতের গরুগুলোর আমদানি ছিল সম্পূর্ণ বেআইনি প্রক্রিয়ায়। আমাদের অনুমতি ছাড়াই গরুগুলো আমদানি করা হয়েছিল। ফলে বিমানবন্দরে অবস্থিত ঢাকা কাস্টম হাউস সেগুলো জব্দ করে।

গতকাল (সোমবার, ৫ জুলাই) ঢাকা বিমানবন্দরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত ব্রাহমা জাতের ১৮টি গরু আটক প্রসঙ্গে এই প্রতিবেদকের সাথে আজ সন্ধ্যায় (মঙ্গলবার, ৬ জুলাই) মুঠোফোনে এসব কথা বলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম, এম.পি। মন্ত্রী বলেন, ‘আমার কথা পরিস্কার- আটককৃত ব্রাহমা গরুগুলো সম্পূর্ণ বেআইনি প্রক্রিয়ায় আমদানি করেছে বলেই সেগুলো ছাড়করণের জন্য বিমানবন্দর কাস্টমস কর্তৃপক্ষ বা আমাদের সাথে কেউ যোগাযোগ করেননি।  গরুগুলো এখন সাভারের কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে। আমরা পরবর্তী আইনি পদক্ষেপে যাবো।’

এদিকে আমদানিকৃত ব্রাহমা জাতের গরুগুলো সাদেক এগ্রো’র বলে এ প্রতিবেদকের সাথে স্বীকার করেছেন প্রতিষ্ঠানটির সত্বাধিকারি এবং বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মারস এসোসিয়েশন- এর সভাপতি মো. ইমরান হোসেন। তিনি বলেন, প্রায় ৭/৮ মাস আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র থেকে আটককৃত ব্রাহমা জাতের গরুগুলো আমদানি শুরু হয়। কিন্তু, আমরা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে আমদানির অনুমতি পাওয়ার আগেই গরুগুলো এসে পড়াতে এ জটিলতা তৈরি হয়েছে। আমরা শীঘ্রই গরুগুলো ছাড়করণের পদক্ষেপ নেবো এবং আশা করি খুব শীঘ্রই প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সেগুলোর এনওসি দিবে।

ব্রাহমা গরু আমদানি বৈধ কী না- এমন প্রশ্নের জবাবে মো. ইমরান হোসেন বলেন, যদি বৈধ না হয় তবে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ব্রাহমা জাতের গরুর সিমেন উৎপাদন ও বাজারজাত করছে কীভাবে?

অন্যদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ব্রাহমা জাতের গরু আমদানি আইনগতভাবে সরাসরি নিষেধ না থাকলেও দেশের ব্রিডিং পলিসিগত কারণে জাতটি আমদানির অনুমতি বন্ধ রাখা বা নিরুৎসাহিত করা হচ্ছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এখন মাংসে স্বয়ংম্পূর্ণ, ফলে ব্রাহমা জাতের মতো গরু এদেশে আমদানির আর প্রয়োজন নেই। আমরা এখন ‍দুধে স্বয়ংসম্পূর্ণতার পথে এগুচ্ছি, তাই ফ্রিজিয়ান জাতের গরুগুলোর দিকে মনোনিবেশ করছি। তাছাড়া ব্রাহমা জাতের গরুর সাথে অন্য জাতের গরুর সংকরায়নের ফলে হুমকির মুখে পড়তে পারে দেশে ডেইরি খাত।

আমদানি বন্ধ থাকলে সাদেক এগ্রো গরুগুলো নিয়ে আসলো কীভাবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমাদের অধিদপ্তরে এনওসি’র জন্য যে কেউ আবেদন করতে পারেন। এখন সেটি অনুমোদন হবে কী না, সে সিদ্ধান্তের জন্য উচ্চ পর্যায়ের আলাদা কমিটি রয়েছে। সাধারণ এসব আবেদনের ক্ষেত্রে আমাদের অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের মাধ্যমে সেটি জাতীয় উচ্চ পর্যায়ের কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয় এবং তাঁরা এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন।

উল্লেখ্য, গতকাল (৫ জুলাই) ১৩ থেকে ৬০ মাস বয়সী ১৮টি ব্রাহমা গরু যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির সময় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সেগুলো আটক করা হয়। গরুগুলো সোমবার দুপুরে তার্কিশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে ঢাকায় আসে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা সেখানে উপস্থিত হয়ে নিশ্চিত করেন গরুগুলো ব্রাহমা জাতের ।

বিল অব এন্ট্রিতে গরুগুলোর মূল্য ধরা হয়েছে সবগুলোর ৪০ হাজার ডলার। তবে কাস্টম কর্মকর্তারা ধারণা করছে গরুগুলো প্রতিটির মূল্য ১২-১৫ লাখ টাকারও বেশি। আনুষ্ঠানিকভাবে গরুগুলোর কোন দাবিদার না পাওয়া গেলে নিলামে বিক্রি করা হবে। গরুগুলোকে সাময়িকভাবে সংরক্ষণের জন্য সাভারের কেন্দ্রীয় গো-প্রজনন ও দুগ্ধ খামারে রাখা হয়েছে।

এর আগে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রুয়ারি হোলস্টাইন ফ্রিজিয়ান জাতের গরু আমদানির ঘোষণা দিয়ে ব্রাহমা জাতের ৩০টি গরু আমদানি করা আনা হলে সেগুলোও আটক করে কাস্টম হাউস। সে সময় খিলক্ষেতের ডেইরি সান প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি ফার্ম ওই গরুগুলো আমদানী করেছিলো।

This post has already been read 5691 times!