Friday 19th of April 2024
Home / খাদ্য-পুষ্টি-স্বাস্থ্য / জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করতে হবে

জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করতে হবে

Published at অক্টোবর ৪, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক: তরুণ-তরুণীদের অনেকে স্টাইলের কারণে ই-সিগারেট গ্রহণ করেন। অনেকে মনে করেন যে, ই-সিগারেট তাদের প্রচলিত সিগারেট ছাড়তে সাহায্য করতে পারে। আবার ই-সিগারেটকে প্রচলিত সিগারেটের তুলনায় স্বাস্থ্যের জন্য কম ক্ষতিকর বলেও কেউ কেউ মনে করেন। এ বিষয়গুলোই উঠে এসেছে ঢাকার দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর পরিচালিত ই-সিগারেট ব্যবহার বিষয়ক গবেষণার ফলাফলে। ক্যাম্পেইন ফর ট্যোবাকো ফ্রি কিডসের কারিগরি সহায়তায় ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন কর্তৃক পরিচালিত এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের আবদুস সালাম হলে সোমবার (৪ অক্টোবর) বেলা ১১টায় এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য ও ওয়াশ সেক্টরের পরিচালক ইকবাল মাসুদের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে প্রধান অতিথি ছিলেন অধ্যাপক ডা. আবদুল আজিজ, মাননীয় এমপি ও সদস্য, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। বিশেষ অতিথি ছিলেন মো. মোস্তাফিজুর রহমান, লিড পলিসি এডভাইজার, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস ও অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী, প্রতিষ্ঠাতা, মানস। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর পরিচালিত ই-সিগারেট ব্যবহার বিষয়ক গবেষণার ফলাফল উপস্থাপনা করেন ডা. মোহাম্মদ হায়াতুন নবী, সিনিয়র লেকচারার, পাবলিক হেল্থ বিভাগ, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়।

গবেষণা জরিপে দেখা যায়, প্রথমে ই-সিগারেট সেবনের সময়, বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারীরা নিশ্চিত ছিলেন না যে এতে নিকোটিন আছে কি না। জরিপে জানা যায় যে, অংশগ্রহণকারীরা ই-সিগারেটের সম্ভাব্য স্বাস্থ্যের ক্ষতি সম্পর্কে সচেতন ছিলেন না। তাদের অধিকাংশই বিশ্বাস করতেন যে, ই-সিগারেট সম্পর্কে পর্যাপ্ত বৈজ্ঞানিক গবেষণা ছিল না যে এটি স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। অংশগ্রহণকারীদের নিকোটিন সম্পর্কে মিশ্র জ্ঞান ছিল। তারা ই-সিগারেট এবং প্রচলিত সিগারেটের মধ্যে নিকোটিনের পার্থক্য সম্পর্কে নিশ্চিত ছিল না। আবার তাদের কেউ কেউ মনে করতেন যে ই-সিগারেটে প্রচলিত সিগারেটের তুলনায় নিকোটিন কম থাকে।

গবেষণা জরিপে আরো দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা প্রথমে সামাজিক মিডিয়া, বড় ভাইবোন, বন্ধু, পরিবারের অন্যান্য সদস্য, সিনেমা, শপিং মল বা উপহারের দোকান থেকে ই-সিগারেট সম্পর্কে শুনেছে। বেশিরভাগ অংশগ্রহণকারীরা ই-সিগারেটের বিজ্ঞাপনগুলি সোশ্যাল মিডিয়ায় বিশেষ করে ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রামে দেখেছেন। বেশিরভাগ শিক্ষার্থী বন্ধুদের সাথে তাদের প্রথম ই-সিগারেট চেষ্টা  (সেবন) করেছিল।

গবেষণায় সুপারিশ করা হয় যে, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের মাধ্যমে ই-সিগারেটসহ সকল ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্ট উৎপাদন, আমদানি-রপ্তানি, প্রচারণা-বিজ্ঞাপণ, বিপণন ও সেবন নিষিদ্ধকরণে পদক্ষেপ গ্রহণ করা। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের মাধ্যমে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি কঠোর করা।

অনুষ্ঠানে অধ্যাপক ডা. অরূপ রতন চৌধুরী বলেন, ভারত, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ডসহ প্রায় ৫০টি দেশ ই-সিগারেট উৎপাদন, আমদানি বা রপ্তানি, পরিবহন, বিক্রি, বাজারজাতকরণ, মজুদ এবং এ সংক্রান্ত সবধরণের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ করেছে। বাংলাদেশেও দিন দিন ই-সিগারেটের ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে। একারণে এখনই সময় জনস্বাস্থ্য বিবেচনায় বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করা।

প্রধান অতিথি সংসদ সদস্য অধ্যাপক ডা. আবদুল আজিজ বলেন, তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার স্বাস্থ্য, জাতীয় অর্থনীতি ও পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে। কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন প্রণয়ন, আইন বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ গ্রহণের পাশাপাশি এটি কার্যকর করার জন্যও সংশ্লিষ্ট সকলকে ভূমিকা রাখতে হবে।

This post has already been read 2407 times!