Thursday 28th of March 2024
Home / পরিবেশ ও জলবায়ু / খাবার পানির তীব্র সংকটে দাকোপের উপকূলবর্তীবাসী

খাবার পানির তীব্র সংকটে দাকোপের উপকূলবর্তীবাসী

Published at এপ্রিল ১৬, ২০২১

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : খুলনার উপকূলবর্তী  দাকোপে শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই সুপেয় পানীয়জলের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। লবন পানির প্রভাবে বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাবে বাধ্য হয়ে অনেকেই ডোবা-নালার পানি খেয়ে ডায়রিয়াসহ নানা পানি বাহিত রোগে ভুগছে।

উপকূলবর্তী দাকোপের  বিভিন্ন এলাকা সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, ৩টি পৃথক দ্বীপের সমন্বয় সুন্দরবন কোল ঘেঁষা এই উপজেলার চার পাশে নদীতে লবণ পানির চাপ থাকায় খরা মৌসুমে সুপেয় পানির চরম সংকট দেখা দেয়। এবারও ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নের সর্বত্রই সুপেয় পানীয়জলের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। বর্তমানে ৩৬ হাজার ৫৯৭টি পরিবারের প্রায় দুই লাখ মানুষ সুপেয় পানির জন্য হা-হুতাশ করছে। এমনকি চায়ের দোকান, খাবার হোটেল, মিষ্টির দোকানে খরিদ্দারকে বিশুদ্ধ পানি দিতে না পেরে দোকানদাররা দিশেহারা হয়ে পড়ছে। এমনকি রবি মৌসুমে এঅঞ্চলের প্রধান ফসল তরমুজ ক্ষেতেও সেচ দিতে না পারায় গাছ মরাসহ ফল ভালো বড় না হওয়ার আশংঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এখানে কোথাও গভীর নলকুপ সফল না হওয়ায় রয়েছে অগভীর নলকুপ যা অধিকাংশ অকেজো। আবার কোন কোন নলকুপের পানিতে লবন, আর্সেনিক যুক্ত এবং অতিরিক্ত আয়রন। এছাড়া এ অঞ্চলে পর্যাপ্ত রেইন ওয়াটারও নেই। যে কারনে এলাকার মানুষের খাবার পানির একমাত্র ব্যবস্থা পুকুরের পানি ফিল্টার করে খাওয়া। কিন্তু অপ্রতুল পুকুরগুলোতে পানি স্বল্পতার কারনে প্রায় সকল ফিল্টার বা পিএসএফ গুলি অকেজো। এলাকার কতিপয় স্বচ্ছল ব্যক্তিরা খুলনাসহ বাহিরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি কিনে জীবন ধারন করছে। আর মধ্যবিত্ত এবং নিন্ম আয়ের মানুষ বাধ্য হয়ে জীবন বাঁচাতে যে পুকুরে পানি আছে সেখান থেকে সরাসরি পানি নিয়ে পান করছে। ফলে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র অভাবের কারনে একটি বৃহৎ জনগোষ্টি বাধ্য হয়ে অস্বাস্থ্যকর খাবার অনুপযোগী পানি খেয়ে জীবন ধারন করতে হচ্ছে। এতে অনেকেই ডায়রিয়াসহ নানা পানি বাহিত রোগে ভুগছে বলে জানা গেছে।

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের তথ্য মতে এখানে মোট ২ হাজার ২৭৪টি পানির আধার রয়েছে। এর মধ্যে রেইন ওয়টার হারভেটিং (ট্যাংকি) ১৮৪৭টি, পিএসএফ ৫৪৫টি মধ্যে সম্পর্ণ অকেজ ৪০০টি, ৬৮৯টি অগভির নলকূপের মধ্যে অতিরিক্ত লবনক্তাসহ বিভিন্ন কারনে অকেজ ৫০০টি, আরো পানির প্ল্যান্ট ১টি ও ২০টি পুকুর। এছাড়া মার প্রকল্পের ১০টি প্যান্টের প্রায় সবগুলো অকেজ এবং জেলা পরিষদের পুকুর রয়েছে ৬২টি। এাছাড়া কয়েকটি এনজিও কিছু পানির ট্যাংকি ও কয়েকটি পানি বিশুদ্ধ করণ প্যান্ট নির্মান করলেও প্রয়োজনের তুলনায় রয়েছে অনেক অপ্রতুল।

গুনারী কালি বাড়ি এলাকার অন্তরা সরদার তুলি, বিথিকা সরদারসহ অনেকে জানান প্রায় দুই থেকে আড়াই কিলোমিটার দুরের একটি পুকুর থেকে অতি কষ্টে পানি এনে খেতে হচ্ছে। আর যাদের ভাল অবস্থা টাকা পয়সা আছে তারা বাহিরে থেকে ভাল পানি কিনে খায়। তাদের মতো ওই এলাকার বহু গরিব মানুষ সরাসরি পুকুরের অবিশুদ্ধ পানি পান করে বলে জানান।

চালনা বাজার লঞ্চঘাট এলাকার হোটেল মালিক সমারেশ রায় বলেন পানি সংকটের কারনে খরিদ্দারদের পানি দিতে পারছিনা। পুকুরের পানি খাবার অনুপযোগী হওয়ায় তা দিয়ে পেলেট ধোয়া পালার কাজ চলছে আর খরিদ্দাদের ৪০ পয়সা লিটার পানি কিনে খেতে দিতে হচ্ছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোজাম্মেল হক নিজামী জানান প্রধানত বিশুদ্ধ পানির অভাবে ডায়রিয়া হয়ে থাকে। গত দুই মাসে ১০৯ জন মানুষ ডায়রিয়ায় গুরুতর আক্রান্ত হয়ে হাসপাতাল ভর্তি থেকে চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। এছাড়া কয়েক শত মানুষ ভর্তি বিহিন সেবা নিয়েছেন বলে জানান।

এবিষয় চালনা পৌর মেয়র সনত কুমার বিশ্বাস বলেন সুপেয় পানির সমস্যা নিরসনে ইতি মধ্যে একটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়েছে। কাজ শেষ হতে বেশ কয়েক মাস সময় লাগবে। আর কাজ শেষ হলেই পৌর এলাকায় সুপেয় পানি সংকট অনেকটা নিরসন হবে বলে তিনি মনে করেন।

এব্যাপারে উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী জয়ন্ত মল্লিকের সাথে আলাপকালে জানান ইতি মধ্যে জিসিএ প্রকল্পের মাধ্যমে ৩০০ পানির ট্যাংকি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যা ৩০০ পরিবারকে দেয়া হবে। এছাড়া প্রতি বছরের যে বরাদ্দ সেটা পেলে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন।

This post has already been read 2436 times!