Thursday 18th of April 2024
Home / অর্থ-শিল্প-বাণিজ্য / এলজিইডির ৬৯টি শস্যগুদামের মালিকানা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরে হস্তান্তর

এলজিইডির ৬৯টি শস্যগুদামের মালিকানা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরে হস্তান্তর

Published at নভেম্বর ৫, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক: কৃষি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এলজিইডির ৬৯টি শস্যগুদামের মালিকানা কৃষি বিপণন অধিদপ্তরে হস্তান্তর ও ১০৬টি উপজেলায় কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার বিভাগের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বা্ক্ষরিত হয়েছ। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক, এমপি, বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মো: তাজুল ইসলাম এমপি।

এলজিইডির মালিকানাধীন ৬৯টি শস্যগুদাম কৃষি বিপণন অধিদপ্তরে হস্তান্তরের সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেন কৃষি বিপণন অধিদপ্তরে মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ  এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো: আব্দুর রশীদ খান। এছাড়া,  দেশের ০৮টি বিভাগের ৪৭টি জেলার ১০৬টি উপজেলায় কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় সরকার বিভাগের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। স্বাক্ষর করেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো: মেসবাহুল ইসলাম।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কর্তৃক এলজিইডি’র ৬৯টি খাদ্য গুদামের মালিকানা হস্তান্তরের জন্য প্রস্তাব প্রেরণ করা হলে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় কর্তৃক ৬৯টি খাদ্য গুদাম কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি বিপণন অধিদপ্তরকে হস্তান্তর করার সম্মতি প্রদান করে।

কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশে শস্যগুদাম কার্যক্রমটি একটি জনপ্রিয় ও সফল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করছে। এ সাফল্যকে সামনে রেখে খাদ্য নিরাপত্তা ও ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে সারাদেশে আরও শস্যগুদাম নির্মাণ করা হবে। একই সাথে কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণও সারাদেশে সম্প্রসারিত ও বর্ধিত করা হবে। যাতে করে কৃষিকে আরও উন্নত করা যায়; কৃষকের জীবনমানকে উন্নত করার কাজে লাগানো যায়।

কৃষিমন্ত্রী আরো বলেন, বিএনপি’র নেতৃত্বে চার দলীয় জোটের শাসনামলে দেশে কৃষির উন্নয়নে কোন গুরুত্ব প্রদান করে নি, কৃষিতে চরম অবহেলা দেখিয়েছিল। সারসহ কৃষি উপকরণ নিয়ে চরম হাহাকার ছিল। শুধু সারের জন্য ১৮জন কৃষককে প্রাণ দিতে হয়েছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব  বর্তমান কৃষিবান্ধব সরকার কৃষিতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব প্রদান করছে। কৃষিবান্ধব নীতিগ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। সার, বীজসহ কোন কৃষি উপকরণ নিয়ে কোন সংকট নেই। ফলে, বিগত ১০ বছরে কৃষির অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটেছে যা সারা বিশ্বে প্রশংসিত ও নন্দিত হচ্ছে।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী মোঃ তাজুল ইসলাম বলেন, কৃষি খাতকে আরো আধুনিকায়ন, গুণগত পরিবর্তন এবং প্রযুক্তির বিকাশ ঘটাতে উপজেলা পর্যায়ে কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মাণ সঠিক সময়ের সঠিক সিদ্ধান্ত। এর মাধ্যমে কৃষকেরা সারা বিশ্বে উদ্ভাবিত নতুন প্রযুক্তি, তথ্য-উপাত্ত বিষযে প্রশিক্ষণ পেয়ে কৃষি জ্ঞানে সমৃদ্ধ হবেন। আর এভাবেই কৃষি ক্ষেত্রে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসবে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর দেশ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছেন, সেই স্বপ্ন ঘিরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে স্বমহিমায়।

কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের শস্যগুদাম ঋণ কার্যক্রমের আওতায় রংপুর, শেরপুর, মাগুরা ও বরিশাল অঞ্চলে ২৭টি জেলায় ৫৬টি উপজেলায় ৮১টি গুদাম পরিচালিত হচ্ছে। ৮১টি গুদামের মধ্যে ১২টি গুদাম কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের নিজস্ব এবং অবশিষ্ট ৬৯টি গুদাম স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের নিকট হতে বার্ষিক ভাড়ার ভিত্তিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। প্রতিটি গুদামের গড় ধারণ ক্ষমতা ২৫০ মেট্রিক টন। বাৎসরিক গড়ে ৪,৩৬৫ জন কৃষক পরিবারকে ৪,৯২১ মেট্রিক টন শস্য জমার বিপরীতে ৬০৪.৯১ লক্ষ টাকা ঋণ বিতরণ করা হয়ে থাকে। গুদাম পরিচালনা ব্যয় নির্বাহের জন্য কৃষকদের কাছ থেকে শস্য জমার বিপরীতে বর্তমানে কুইন্টাল প্রতি মাসিক ১০/- টাকা হারে ভাড়া আদায় করা হয়। আদায়কৃত ভাড়া হতে গুদামের ব্যয় নির্বাহ করা হয় এবং উদ্বৃত্ত অর্থ দ্বারা গুদাম তহবিল গঠন করা হয়।  কৃষকগণ সংরক্ষিত শস্যের মূল্যের বিপরীতে সর্বোচ্চ ৮০% ব্যাংক ঋণ গ্রহণ করতে পারেন। পরবর্তীতে ফসলের দাম বৃদ্ধি পেলে গুদামে রক্ষিত ফসল উত্তোলন ও তা বাজারে বিক্রি করে গুদাম ভাড়া ও ব্যাংক ঋণ পরিশোধ করেন। উল্লেখ্য, ঋণ আদায়ের হার ৯৮%।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপজেলা পর্যায়ে প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য কৃষক প্রশিক্ষণ (৩য় পর্যায়) প্রকল্প এর অধীনে ২০২২ সালের মধ্যে এসব কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। উপজেলা পর্যায়ে কৃষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্মিত হলে কৃষক প্রশিক্ষণ প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করবে এবং কৃষকের জন্য নির্ধারিত সময়ে প্রশিক্ষণ আয়োজন করা সহজ হবে। এর ফলে  দ্রুত সময়ে মাঠ পর্যায়ে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ সহজ হবে।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মো: হাসানুজ্জামান কল্লোল। এসময় কৃষি মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, সংস্থাপ্রধানসহ সারাদেশের বিভিন্ন উপজেলার প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের প্রায় চার শতাধিক কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন।

This post has already been read 1869 times!