Friday 19th of April 2024
Home / পরিবেশ ও জলবায়ু / অতিথি পাখি নিধনে শিকারিদের নতুন কৌশল বাঁশির সুর

অতিথি পাখি নিধনে শিকারিদের নতুন কৌশল বাঁশির সুর

Published at নভেম্বর ১৮, ২০২০

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : শীত মৌসুম শুরু হতে উপকূলীয় খুলনা অঞ্চলের জলাশয়গুলোতে এখনই আসতে শুরু করেছে পরিযায়ী অতিথি পাখিরা। অন্যান্য বছরের মতো এবারও হিমালয় ও সাইবেরিয়াসহ শীত প্রধান দেশগুলো থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখি আসছে সুন্দরবন সংলগ্ন-এ উপকূলীয় অঞ্চলে। তবে এসব অতিথি পাখি আর পরিবেশের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে অবৈধ পাখি শিকারিরা।

অভিযোগ রয়েছে, আইনের তোয়াক্কা না করে নগদ অর্থেও লোভে অভিনব কৌশলে অতিথি পাখি নিধনে তৎপর হয়ে উঠেছে পাখি শিকারিরা। পাখি ধরতে নতুন কৌশল হিসেবে শিকারিরা কাজে লাগাচ্ছে বাঁশির সুর। শিকারের পর আকারভেদে এসব পাখি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি করছে তারা। একশ্রেণির শৌখিন মানুষ পরিবেশের কথা চিন্তা না করে এসব পাখি কিনে নিচ্ছে নিজেদের রসনাবিলাসের জন্য।

পরিযায়ী পাখি শিকারে পাখির ডাকের সঙ্গে মিলিয়ে বাঁশি তৈরির অভিনব এ কৌশল সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দাকোপ উপজেলার সুতারখালী গ্রামের একজন শিকারি জানান, তালপাতার সঙ্গে স্কচটেপ জড়িয়ে মোটরসাইকেলের হাইড্রোলিকের কভারের এক মাথায় সুপারগুলু লাগিয়ে রাবারের সাহায্যে তৈরি করা হয় অভিনব এই বাঁশি।

শীত প্রধান দেশগুলোতে তীব্র শীতের সময় পরিযায়ী পাখিদের জন্য অতিমাত্রায় খাদ্যসঙ্কট দেখা দেয়। একদিকে তুষারপাত অন্যদিকে খাদ্যসঙ্কটের কারণে পাখিদের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। তখন বাঁচার তাগিদে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে এসে অপেক্ষাকৃত কম শীতের এই বাংলাদেশকে সাময়িক আবাসভূমি হিসেবে বেছে নেয় এ অতিথি পাখি। শীত শেষ হলে আবার তারা নিজেদের দেশে ফিরে যায়। এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। ইতোমধ্যে খুলনার নয়টি উপজেলার বিভিন্ন খাল-বিল ও জলাশয় হাজার হাজার অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠেছে। এদের মধ্যে বালি হাঁস, বক, জলপিপি, কোম্বডাক, সরালী, কাস্তেচাড়া, পাতাড়ি হাঁস, পানকৌড়ি, কাদাখোঁচা, হুরহুর, খয়রা, সোনা রিজিয়া অন্যতম।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে উপকূলীয় খুলনা অঞ্চলের বিভিন্ন স্থানে সহ¯্রাধিক শিকারি রাতের বেলা অবাধে পাখি শিকার করে ভোরের আলো ফোটার আগেই তা বিক্রি করছে। পরিবেশের শত্রু এসব শিকারি রাতে জলাশয়ের পাশে ফাঁদ পেতে রেখে ধানখেতে বসে পাখির ডাকের সঙ্গে সুর মিলিয়ে বাঁশি বাজায়। এতে পাখি বিভ্রান্ত হয়ে অনেক পাখিই সেখানে উড়ে এসে শিকারির ফাঁদে পড়ে আটকে যায়। এ ছাড়া শিকারিরা নাইলনের সুতা দিয়ে তৈরি ছোট-বড় ফাঁদ পাখির চলার পথে পেতে রাখে। রাতে পাখিরা যখন উড়ে বেড়ায় তখন ওই ফাঁদে শত শত পাখি আটকা পড়ে। আবার চোখে আলো ফেলে, কেঁচো দিয়ে বড়শি পেতে, কোচ মেরে ও কারেন্ট জাল পেতেও পাখি শিকার করে থাকে কিছু শিকারি। শিকারিরা এক রাতেই নিধন করে কয়েকশ অতিথি পাখি।

অভিযোগ উঠেছে, স্থানীয় প্রশাসন এসব দেখেও না দেখার ভান করে থাকে। খুলনা জেলার যেসব অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি পাখি শিকার হয় তারমধ্যে তেরখাদা ও ডুমুরিয়া উপজেলা অন্যতম। তেরখাদা উপজেলায় দীর্ঘদিনের জলাবদ্ধ ভুতিয়ার বিল এলাকার নাচুনিয়া, ইন্দুহাটি, পাখিমারা, নৌকাডুবি, আড়কান্দি, আউরোবুন্নি, বাসুখালী বিল ও ডুমুরিয়া উপজেলার বিল ডাকাতিয়া, মাগুরখালী, শিবনগর, কাঠালিয়া, ঘুরুনিয়া, লাঙ্গলমোড়া, বগারখোর, কুলটি, জালেরডাঙ্গা, ভেল্কামারী, খড়িয়া, পশ্বিম বিলপাবলা, গগনা খাল, বাইসরাণী, রংপুর, বিল ডাকাতিয়া, মির্জাপুর, শোভনা ও মাগুরাঘোনা এলাকাসহ উপকূলীয় দাকোপ উপজেলার বিভিন্ন খাল-বিলে শিকারিরা রাতের বেলাই পাখি নিধনে নেমে যায়।

সরেজমিন গিয়ে ডুমুরিয়া ও চালনা বাজারের সুতা ও মোটরসাইকেলের যন্ত্রাংশের দোকানগুলোতে দেখা গেছে অসাধু শিকারিরা ওই বাঁশি তৈরির জন্য দোকানিদের কাছ থেকে এসব সরঞ্জাম কিনছে।

বটিয়াঘাটা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. রবিউল কবির মুঠোফোনে জানান, অতিথি পাখি নিধনের বিষয় জানা নেই। তবে যদি কেউ শিকার করে থাকে সেক্ষেত্রে সে অপরাধ করছে। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যাবস্থা নেয়া হবে।

দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান খান  জানান, পাখি শিকার করে তো অপরাধ করছে, আবার অন্যদিকে শিকারিরা রাতের আধাঁরে আমন খেতের ধান নষ্ট করে।

জানতে চাইলে ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) সঞ্জীব দাশ বলেন, পাখি নিধন দন্ডনীয় অপরাধ। অতিথি পাখি শিকারের বিষয়ে শোনা যায়, কিন্তু হাতেনাতে শিকারিদের ধরা যায় না। যদিও রাতে শিকারিরা পাখি নিধন করে থাকে, তবে সঠিত তথ্য পেলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।

This post has already been read 2076 times!