Tuesday 23rd of April 2024
Home / মৎস্য / ৭-২৮ অক্টোবর ইলিশ ধরলে জেল-জরিমানা

৭-২৮ অক্টোবর ইলিশ ধরলে জেল-জরিমানা

Published at অক্টোবর ৩, ২০১৮

নিজস্ব সংবাদদাতা: “মৎস্য সংরক্ষণ আইন” অনুযায়ী ইলিশসম্পদ সংরক্ষণে প্রতিবছরের ন্যায় ইলিশের প্রধান প্রজননমৌসুম অর্থাৎ ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর-২০১৮ পর্যন্ত মোট ২২দিন প্রজননক্ষত্রের ৭০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকায় সকল প্রকার মাছ আহরণ, পরিবহণ, মজুদ, বাজারজাতকরণ এবং ক্রয়-বিক্রয় সরকার সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। এ সময় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে ১-২ বছর মেয়াদে জেল কিংবা ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হবে। একই অপরাধ ২ বার করলে শাস্তি দ্বিগুণ হবে।

“ইলিশ সংরক্ষণ অভিযান-২০১৮ উপলক্ষে সংবাদসম্মেলনে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ন চন্দ্র চন্দ, এমপি বুধবার (৩ অক্টোবর) মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, ১১ শতাংশের অধিক লোক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এর ওপর নির্ভরশীল অর্থাৎ ৫ লাখ লোক ইলিশ আহরণে সরাসরি জড়িত এবং ২০-২৫ লাখ মানুষ ইলিশের পরিবহণ, বিক্রয়, জাল ও নৌকা তৈরি, বরফ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, রপ্তানি ইত্যাদি কাজে নানাভাবে জড়িত।  অন্যদিকে, ইলিশের জাটকানিধরোধে প্রতিবছর নভেম্বরমাস থেকে ৮ জুন পর্যন্ত ২৫ সেন্টিমিটার বা ১০ ইঞ্চি সাইজের ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইলিশের ব্যাপক উৎপাদনবৃদ্ধি ও সহজলভ্যতার জন্য জাটকা ও মা-ইলিশ নিধনরোধের এসব কর্মসূচি ব্যাপকভাবে ফলপ্রসু হয়েছে। তাই মেঘনা হতে জাটকামাছ এখন পদ্মা, মহানন্দা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, কুশিয়ারা ও সুরমানদীতেও বিস্তৃতিলাভ করেছে। বিশেষ করে পদ্মানদীর দু’পাড়ের জেলাসমুহ যেমন ফরিদপুর, রাজবাড়ী, পাবনা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী এবং যমুনানদীর তীরবর্তী জেলা সিরাজগঞ্জ, পাবনা ও কুড়িগ্রামে প্রচুর ইলিশমাছ ধরা পড়ছে।

মন্ত্রী জানান, ৭০০০ বর্গক্ষেত্রবিশিষ্ট প্রজনক্ষেত্রসমূহ হচ্ছে—মীরসরাই উপজেলার শাহের খালী হতে হাইতকান্দী পয়েন্ট, তজুমুদ্দীন উপজেলার উত্তর তজুমুদ্দীন হতে পশ্চিম সৈয়দপুর আওলিয়া পয়েন্ট, কলাপাড়া উপজেলার লতা চাপালি পয়েন্ট এবং কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর কুতুবদিয়া হতে গণ্ডামার পয়েন্ট। এছাড়াও চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, ফেনী, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বরিশাল, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা,  পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, শরিয়তপুর,  ঢাকা, মাদারীপউর, ফরিদপুর, রাজবাড়ী,জামালপুর, নারায়নগঞ্জ, নরসিংদী , মানিকগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মুন্সীগঞ্জ, খুলনা, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, নাটোর, পাবনা, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও গোপালগঞ্জ জেলার সকল নদ-নদীতে এসময় সকলপ্রকার মাছধরা বন্ধ থাকবে। তবে এর বাইরের অন্যান্য পুকুর-বিল বা হাওরবাওর ও জলাশয় মাছধরার জন্য উন্মুক্ত থাকবে। এছাড়াও দেশের সুন্দরবনসহ সমুদ্র উপকূলীয় এলাকা এবং মোহনাসমূহেও এই ২২দিন সকল প্রকার মাছ ধরা বন্ধ থাকবে। এমনকি দেশের সকল মাছঘাট, আড়ত, হাটবাজার, চেইনশপসহ সংশ্লিষ্ট এলাকায় এই ২২দিন মোবাইলকোর্টসহ অভিযানও পরিচালিত হবে।

তিনি উল্লেখ করেন, ইলিশের জাটকাকে বড় ইলিশে পরিণত করার লক্ষে দেশে ৬টি ইলিশের অভয়াশ্রম ঘোষণা করেছে সরকার। তা হচ্ছে- চাঁদপুর জেলার ষাটনল হতে লক্ষীপুর জেলার আলেকজান্ডার (মেঘনানদীর নিম্ন অববাহিকার ১০০ কিলোমিটার) পর্যন্ত, ভোলা জেলার মদনপুর/চর ইলিশা হতে চর পিয়াল (মেঘনানদীর শাহবাজপুর শাখানদীর ৯০ কিমিঃ) পর্যন্ত, ভোলাজেলার ভেদুরিয়া হতে পটুয়াখালী জেলার চ্চর রুস্তম (তেতুলিয়া নদীর ১০০ কিঃমিঃ) পর্যন্ত, পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার সমগ্র আন্ধারমানিক নদীর ৪০ কিঃমিঃ পর্যন্ত, পরীয়তপুর জেলার নড়িয়া ও ভেদরগঞ্জ উপজেলা এবং চাঁদপুর জেলার মতলব উপজেলাস্থ পদ্মানদীর ২০ কিমি. পর্যন্ত এবং বরিশাল জেলার হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ ও বরিশালসদর উপজেলার কালাবদর, গজারিয়া ও মেঘনানদীর প্রায় ৮২ কিঃমিঃ পর্যন্ত এলাকা।

মন্ত্রী বলেন, দেশের মৎস্যউৎপাদনে স্বয়ম্ভরতার্জনে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, নৌপুলিশ, নেভী, কোস্টগার্ড,বিজিবি, বিমানবাহিনী, মৎস্যজীবী সমিতি, জেলেসম্প্রদায় এবং মন্ত্রাণালয়াধীন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রমের পাশাপাশি সাধারণ জনগণের ভূমিকাও কম নয়। এ ব্যাপারে ব্যাপক প্রচারণা ও গণসচেতনতাসৃষ্টিতে গণমাধ্যমের অবদানও অনস্বীকার্য।

অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের সচিব রইছউল আলম মণ্ডল, মৎস্য অধিদফতরের ডিজি, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউটের ডিজিসহ উর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিৎ ছিলেন।

This post has already been read 2396 times!