Tuesday 19th of March 2024
Home / মৎস্য / ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মৎস্যসম্পদ রপ্তানিতে আয় ৪,২৫০ কোটি টাকা

২০১৮-১৯ অর্থবছরে মৎস্যসম্পদ রপ্তানিতে আয় ৪,২৫০ কোটি টাকা

Published at সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৯

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিগত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৭৩,১৭১ মে.টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে ৪,২৫০ কোটি টাকা আয় হয়েছে। দেশের মোট কৃষিজ আয়ের ২৫ দশমিক ৩০ শতাংশ যোগান দেয় মৎস্যখাত এবং দেশের প্রাণিজ আমিষের শতকরা ৬০ ভাগ মাছ থেকে।

বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (BFRI) কর্তৃক ‘বার্ষিক গবেষণা পরিকল্পনা প্রণয়ন ২০১৯-২০’ শীর্ষক দু’দিনব্যাপী কর্মশালার প্রথমদিনে এসব কথা বলেন বক্তারা। এছাড়াও প্রচুর লোকবলসহ অর্থ ব্যয় এবং সুশৃঙ্খল ও সমন্বিত উদ্যোগের ফলে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির প্রশংসা করে তাঁরা বলেন, এতে ইলিশের ব্যাপক উৎপাদন সম্ভব হলেও চিংড়িসহ অন্যান্য মাছের ক্ষেত্রে আমরা বেশ পিছিয়ে পড়ছি, যা এখন থেকেই মাথায় রাখা জরুরি।

কর্মশালায় বক্তারা জানান, অপ্রচলিত মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে ইনস্টিটিউটে ২টি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায়  সীউউড, ওয়েষ্টার, শামুক ও ঝিনুকের প্রজনন ও চাষাবাদ বিষয়ক গবেষণা-পরিচালনা করা হচ্ছে। সামুদ্রিক গবেষণা জোরদার করার লক্ষ্যে প্রায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১টি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে কক্সবাজারস্থ সামুদ্রিক মৎস্য গবেষণাকেন্দ্রের অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও গবেষণা জোরদার করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

কর্মশালার প্রধান অতিথি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী আশরাফ আলী খান খসরু, এমপি অপ্রচলিত মৎস্যসম্পদ উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে বৈদেশিক অর্থোপার্জন  এবং দেশীয় বিলুপ্তপ্রায় মাছের পুনরাবির্ভাবের জন্য গবেষণা কার্যক্রম জোরদারকরণের ওপর জোর দিয়েছেন।

তিনি বলেন, দেশের মোট জনগোষ্ঠীর ১১ শতাংশের অধিক মানুষ মৎস্যখাতের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় দেশের জিডিপির ৩.৫৭ শতাংশ অর্জিত হয় মৎস্যখাত থেকে। আশির দশকে মাছের মোট উৎপাদন ছিল ৮.০ লাখ মে. টন এবং এর প্রায় ৮০ শতাংশ ছিল নদ-নদী, হাওর-বাঁওড় ও বিলের মাছ। সরকারের অব্যাহত প্রচেষ্টায় এখন মাছের মোট উৎপাদন ৪২.৭৭ লাখ মে. টনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ৫৬ শতাংশ আসে চাষাবাদ থেকে, ২৮ শতাংশ নদ-নদী, হাওর-বাঁওড়সহ অন্যান্য অভ্যন্তরীণ মুক্তজলাশয় থেকে এবং ১৬ শতাংশ আসে সমুদ্র থেকে। মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট গবেষণা করে বিলুপ্তপ্রায় ৬৪টি মাছের মধ্যে ইতোমধ্যে ২১টি মাছের জীনপুল সংরক্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে।

তিনি জানান, ইলিশ উৎপাদনে এখন আমরা বিশ্বে ১ম, অভ্যন্তরীণ মুক্তজলাশয়ে মৎস্য উৎপাদনে ৩য়, মিঠাপানির মৎস্য উৎপাদনে ৪র্থ, চাষকৃত মাছ উৎপাদনে ৫ম এবং তেলাপিয়া উৎপাদনেও ৪র্থ অবস্থান অর্জন করে বিশ্বে গৌরবার্জন করেছি। এ কৃতিত্ব এদেশের সকলের। BFRI ইতোমধ্যে উপকূলীয় অঞ্চলের পারশে ও নোনাটেংরার প্রজনন কৌশল উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছে এবং চাকাচিংড়ি, হরিনাচিংড়ি, কাইন-মাগুর, ভেটকী, দাতিনা এবং চিত্রামাছের প্রজনন ও চাষাবাদের ওপর গবেষণা পরিচালনা করছে। এসব মাছের পোনা উৎপাদন ও চাষাবাদ কৌশল উদ্ভাবন সম্ভব হলে উপকূলীয় অঞ্চলে এসব মাছের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে। BFRI অপ্রচলিত মৎস্যসম্পদের মধ্যে কাঁকড়া ও কুচিয়ার পোনা উৎপাদনের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করায় কুচিয়া ও কাঁকড়ার জীববৈচিত্র্য-সংরক্ষণের ক্ষেত্রে নতুন দিগন্ত উন্মেচিত হয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

তিনি জানান, মৎস্য অধিদপ্তর কর্তৃক কক্সবাজারে কাঁকড়ার পোনা উৎপাদনের জন্য ১টি হ্যাচারী স্থাপন এবং দেশীয় ছোটমাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে নিবিড় গবেষণার মাধ্যমে হাওর ও বিলকে বিজ্ঞানভিত্তিক ব্যবস্থাপনায় আনার জন্য মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নেত্রকোণা ও গোপালগঞ্জে ২টি গবেষণাকেন্দ্র স্থাপনের জন্য ইতোমধ্যে উদ্যোগ গ্রহণ করায় তিনি সন্তোষ প্রকাশ করেন।

BFRI এর মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদের সভাপতিত্বে রাজধানীর কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (BARC) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত কর্মশালায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন BFRI প্রধান বৈজ্ঞানিক অফিসার ড আশরাফুল আলম। এতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব রইছউল আলম মন্ডল, কৃষি গবেষণা কাউন্সিল এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. মো. কবির ইকরামুল হক, মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবু সাইদ মো. রাশেদুল হক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড নিয়ামুল হক প্রমুখ বক্তৃতা করেন।

উল্লেখ্য, ২দিন ব্যাপী কর্মশালায় ৬টি টেকনিক্যাল অধিবেশনে মোট ৬৫টি গবেষণা প্রস্তাব উপাস্থাপন করা হবে। এতে মৎস্যবিজ্ঞানী, সম্প্রসারণকর্মী, সরকারী ও বেসরকারী সংস্থার প্রতিনিধি, বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্যগবেষক, মৎস্যজীবী, মৎস্যব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিসহ মৎস্যসেক্টরের সাথে সম্পৃক্ত লোকজন অংশগ্রহণ করেন।

This post has already been read 4275 times!