Friday 19th of April 2024
Home / পোলট্রি / হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে ও মস্তিষ্ক বিকাশে ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ ডিম

হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে ও মস্তিষ্ক বিকাশে ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ ডিম

Published at ডিসেম্বর ২৭, ২০১৭

ডা. নওরোজ মেহেদী (ডি.ভি.এম): ডিম একটি প্রকৃত আমিষের উৎস। বর্তমান বিশ্বে প্রতিদিনের আমিষের চাহিদা মেটাতে ডিমের কোন বিকল্প নেই। ডিম শুধুই আমিষের উৎস নয়। এটিতে আমিষের পাশাপাশি আরো অনেক পুষ্টি উপাদান আছে যা কি না শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশ এবং প্রাপ্তবয়স্কদের হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। প্রথমেই তাহলে জেনে নেয়া যাক, একটি ডিমে কি কি থাকে।

আমেরিকান এগ বোর্ড এর প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে ৫০ গ্রাম ওজনের একটি ডিমে থাকে সর্বমোট ৫ গ্রাম ফ্যাট, ১৮৫ মি. গ্রাম কোলেস্টেরল, ৭০ মি. গ্রাম সোডিয়াম, ৬ গ্রাম আমিষ, ১ মাইক্রো গ্রাম ভিটামিন ডি, ২৮ মি. গ্রাম ক্যালসিয়াম, ১ মি. গ্রাম আয়রন, ৬৯ মি. গ্রাম পটাসিয়াম, ০.২ মি. গ্রাম রিবোফ্লাভিন, ১২ ০.৪ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন বি, ১০ মাইক্রোগ্রাম বায়োটিন, ১ মি. গ্রাম প্যান্টোথেনিক এসিড, ২৭ মাইক্রো গ্রাম আয়োডিন, ১ মাইক্রোগ্রাম জিংক, ১৫ মাইক্রোগ্রাম সেলেনিয়াম, ৮ মাইক্রগ্রাম মলিবডেনাম এবং ১৪৭ মি. গ্রাম কোলিন।

আমাদের মধ্যে অনেকেরই একটি ভুল ধারণা আছে যে, ডিমের কুসুমের কোলেস্টেরল ক্ষতিকর। কিন্তু একজন ডায়াবেটিস আক্রান্ত ও হৃদরোগের ঝুঁকি আছে এমন ব্যাক্তিরও দিনে ২০০ মি. গ্রাম এর অনধিক কোলেস্টেরল দরকার হয় যার তুলনায় ডিমে বিদ্যমান কোলেস্টেরল অত্যন্ত নগণ্য। এছাড়াও ডিমে ট্রান্স ফ্যাট সম্পূর্ণরুপে অনুপস্থিত যা কি না কোরোনারি হার্ট ডিজিজের জন্য দায়ী। কোরোনারি হার্ট ডিজিজের জন্য ট্রাইগ্লিসারাইড ও এল.ডি.এল ও দায়ী। অপরদিকে এইচ.ডি.এল হৃদরোগের জন্য দায়ী নয়।

এখন প্রশ্ন হলো- শুধু এটুকু গুণাবলিই কি  ডিমকে  হৃদরোগের ঝুঁকি কমানো বা মস্তিষ্কের বিকাশের জন্য যথেষ্ট? ঊত্তর অবশ্যই তা নয়। এখানে উল্লেখিত পুষ্টিগুণ ছাড়াও ডিমে আছে উপকারি ওমেগা৩ ফ্যাটি এসিড। এই ওমেগা৩ ফ্যাটি এসিডের মধ্যে অন্যতম হল ডি.এইচ.এ (ডেকোসাহেক্সানোইক এসিড)। এই ডি.এইচ.এ মূলত শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশ এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমিয়ে থাকে। ২০০৭ সালে ড. বভেট, ফি এবং মেডেলিন ২৫ জন ব্যাক্তির ওপর একটি গবেষণা চালান, যাদের ওমেগা৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ ডিম প্রতিদিন খেতে দেয়া হয় এবং ৩ সপ্তাহ পরে দেখা যায় তাদের রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের পরিমাণ ১৬-১৮% কমে গেছে।

এছাড়াও জিয়াং এবং সিম এর গবেষণায় দেখা গেছে ওমেগা৩ ফ্যাটি এসিড সমৃদ্ধ ডিম প্রাপ্তবয়স্কদের রক্তে এল.ডি.এল এর পরিমাণও অনেকখানি কমিয়ে দিয়ে হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এখন আসা যাক শিশুদের মস্তিষ্ক বিকাশের বিষয়ে। শিশুদের মস্তিষ্ক বিকাশের জন্য ডি.এইচ.এ –এর ভূমিকা নিয়ে ইতোমধ্যে অনেকগুলো গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা গেছে যে, সমস্ত শিশুদের এই  ডি.এইচ.এ সমৃদ্ধ ডিম খেতে দেয়া হয়েছে তারা অন্য সাধারণ শিশুদের তুলনায় অধিক মনোযোগী এবং দ্রুত কর্মক্ষম। এছাড়াও তাদের ভিসুয়াল একটিভিটি এবং মস্তিষ্কের বিকাশ অন্য সাধারণ শিশুদের তুলনায় অধিক দ্রুত।

বর্তমানে খোলা বাজারে যে সমস্ত ডিম পাওয়া যায় তাতে ওমেগা৩ এবং ডি.এইচ.এ এর পরিমাণ খুবই কম (মাত্র ০.০৪ %)। বিশ্বের অন্যান্য উন্নত দেশে বর্তমানে ওমেগা৩ ও ডি.এইচ.এ সমৃদ্ধ ডিমের চাহিদা বেড়েই চলেছে। এমনকি এগ নিউট্রিশন কাউন্সিল (অস্ট্রেলিয়া) ইতোমধ্যে তাদের ডিমের স্ট্যান্ডার্ড এ ওমেগা৩ এবং ডি.এইচ.এ পরিমাণ নির্ধারণ করে দিয়েছে, পাশাপাশি তারা বিভিন্ন বয়সের জনগনের মধ্যে, গর্ভবতী ও বুকের দুধ খাওয়ানো মায়েদের জন্য ওমেগা৩ ও ডি.এইচ. এ গ্রহণের পরিমাণও নির্ধারিত করে দিয়েছে।

এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন- থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি দেশেও এ ধরনের ডিমের প্রতি মানুষ ঝুঁকছে। থেমে নেই আমাদের দেশ। আমাদের দেশে কিছু কিছু কোম্পানি যেমন- প্যারাগন গ্রুপ, কাজী ফার্মস, সিপি গ্রুপও বর্তমানে ওমেগা৩ ও এবং ডি.এইচ.এ সমৃদ্ধ ডিম বাজারজাত করছে। তবে পরিমানে খুব-ই কম। এ সমস্ত ডিমের দাম অন্য সাধারণ ডিমের থেকে কিছুটা বেশি থাকে। তবে, মানুষের মধ্যে সচেতনতা এবং সরকারের আন্তরিকতায় আগামীতে আমরা একটি সুখী সমৃদ্ধ দেশ ও বুদ্ধিদিপ্ত জাতি গঠন করতে পারবো বলেই আশা রাখি।

This post has already been read 2906 times!