নিজস্ব প্রতিবেদক: কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাক, এমপি বলেছেন, হাওরের ৯০ ভাগ ও সারাদেশের ২৫ ভাগ বোরো ধান কর্তন শেষ হয়েছে। হাওরের অবশিষ্ট ১০ ভাগ এ সপ্তাহের মধ্যে কর্তন সম্পন্ন হবে। হাওরভুক্ত এলাকাসমূহে অধিক জীবনকালসম্পন্ন ব্রি ধান ২৯ (জীবনকাল-১৬৫ দিন) ধানের আবাদ থাকায় কর্তনে কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে। মন্ত্রী আজ মঙ্গলবার (০৫ মে) মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষ থেকে হাওরসহ সারা দেশের বোরো ধান কর্তন অগ্রগতি এবং করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে কৃষির চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কৃষি মন্ত্রণালয়ের গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে অনলাইনে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন। আগামী জুন মাসের মধ্যে সারা দেশের বোরো ধান শতভাগ কর্তন সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
এ অনলাইন ব্রিফিংয়ে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. নাসিরুজ্জামান, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন) মোঃ আরিফুর রহমান অপু, অতিরিক্ত সচিব (গবেষণা) কমলারঞ্জন দাশ, অতিরিক্ত সচিব (সম্প্রসারণ) মোঃ হাসানুজ্জামান কল্লোল এবং কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইউসুফ প্রমুখ সংযুক্ত ছিলেন।
কৃষিমন্ত্রী জানান, হাওরভুক্ত সাত জেলায় (কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সুনামগঞ্জ, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, সিলেট, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) শুধু হাওরের এ বছর বোরো আবাদের পরিমাণ ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৩৯৯ হেক্টর জমিতে, এর মধ্যে গতকাল পর্যন্ত মোট কর্তন হয়েছে ৪ লাখ ৯৬৪ হেক্টর যা হাওরভুক্ত মোট আবাদের শতকরা ৯০.০২ ভাগ। হাওরাঞ্চলে (হাওর ও নন হাওর মিলে) মোট বোরো আবাদের পরিমাণ ছিল ৯ লাখ ৩৬ হাজার ৩২০ হেক্টর জমিতে, এর মধ্যে এ পর্যন্ত মোট কর্তনের পরিমাণ ৬ লাখ ১১ হাজার ৮১৩ হেক্টর যা হাওরের জেলাসমুহের মোট আবাদের শতকরা ৬৫.৩৪ ভাগ। অন্যদিকে, সারা দেশে আবাদের পরিমাণ ৪৭ লাখ ৫৪ হাজার ৪৪৭ হেক্টর এর মধ্যে কর্তন হয়েছে ১১ লাখ ৮৮ হাজার ৬১১ হেক্টর যা মোট আবাদের শতকরা ২৫ ভাগ।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে হাওরভুক্ত জেলাসমূহে ধান কর্তনের জন্য প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার ৫০০জন কৃষি শ্রমিক নিয়োজিত আছে। সফলভাবে নিরাপদে হাওর অঞ্চলের বোরা ধান দ্রুত কর্তনের জন্য উত্তরাঞ্চলসহ দেশের প্রায় ৪টি কৃষি অঞ্চল হতে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় এবং সরকার ও বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় প্রায় ৩৮ হাজার জন কৃষি শ্রমিককে হাওরে প্রেরণ করা হয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় মাননীয় সংসদ সদস্য, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিভিল সার্জন, উপজেলা প্রশাসন, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের বিভিন্ন কর্মকর্তা, উপজেলা চেয়ারম্যান ও অন্যান্য জনপ্রতিনিধিগণ, আওয়ামী লীগ এবং ছাত্রলীগ, কৃষকলীগ, যুবলীগের কর্মীগণের স্বেচ্ছাশ্রম, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী ও তার অঙ্গ সংগঠনসমূহের স্বেচ্ছাশ্রম, বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন সূমহের সহযোগিতায় এ বৃহৎ কর্মযজ্ঞ সম্পাদন করা সম্ভব হয়েছে। মন্ত্রণালয়ের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ নিরলস পরিশ্রম করেছেন এবং এখনও করছেন। আমি সকলকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন জানাই।
ধান কাটার যন্ত্রপাতি সরবরাহের বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী জানান, কৃষিতে করোনা ভাইরাসের প্রভাব এড়াতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুয়ায়ী কৃষি যন্ত্রপাতি সরবরাহে জরুরী সহায়তা বাবদ প্রথম পর্যায়ে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদানের মাধ্যমে ৮০৩ টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ৪০০টি রিপার ও দ্বিতীয় পর্যায়ে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রদানের মাধ্যমে ৫১৯টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ৫০৮টি রিপারসহ সর্বমোট ১৩২২ টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ৯০৮ টি রিপার বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। এসব কৃষি যন্ত্রপাতির মধ্যে হাওর অঞ্চলে ৩৭০ টি কম্বাইন হারভেস্টার ও ৪৫৫টি রিপার ধান কাটায় ব্যবহার হচ্ছে।
শুধু সুষ্ঠুভাবে ধান কাটা নয়, কৃষকেরা যাতে ধানের ন্যায্যমূল্য পায় সে ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, কৃষকের ধানের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি এবং করোনা সময়কালে দেশের নিম্ন আয়ের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে ৮ লাখ মেট্টিক টন ধান, ১.৫ লাখ টন আতপ চাল, ১০ লাখ মেট্টিক টন সিদ্ধ চাল, এবং ৭৫ হাজার মেট্টিক টন গমসহ ২০ লাখ ২৫ হাজার মেট্টিক টন ক্রয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
তিনি আরো জানান, খাদ্য ক্রয় কার্যক্রমকে সুচারুরূপে সম্পাদনের জন্য উপজেলা কৃষি অফিসারের তত্ত্বাবধানে সারাদেশে ধান বিক্রয়কারী কৃষকের তালিকা তৈরি করে তা খাদ্য বিভাগের নিকট হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। কৃষকের ধান বিক্রয়ে যাতে সুবিধা হয় এজন্য ইউনিয়নে পর্যায়ে ২২৩২ টি আর্দ্রতামাপক যন্ত্র সরবরাহ করা হয়েছে।
বর্তমানের কৃষি উৎপাদনের বর্তমান ধারা শুধু অব্যাহত রাখা এবং তা আরও বৃদ্ধির উদ্যোগের বিষয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন,মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা নির্দেশনা ও বিভিন্ন সময়ের প্রদানকৃত নির্দেশনা মোতাবেক খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করার নিমিত্ত যাতে কোন জমি পতিত না থাকে এবং আবাদযোগ্য জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হয় সেজন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট মাঠ নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে এবং পারিবারিক সবজি বাগান নামে বিশেষ কর্মসূচি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন আছে।
কৃষিমন্ত্রী এ সময় কৃষকদের বাঁচাতে ৪% সুদে শস্য ও ফসলখাতসহ কৃষিখাতে ১৯ হাজার ৫শ’ কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা ঘোষণা করায় প্রধানমন্ত্রীকে কৃষি মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আন্তরিক অভিনন্দন জানান।