Wednesday 24th of April 2024
Home / খাদ্য-পুষ্টি-স্বাস্থ্য / হরীতকীর যত গুণ

হরীতকীর যত গুণ

Published at সেপ্টেম্বর ১০, ২০১৮

নাহিদ বিন রফিক:  ত্রিফলার মধ্যে হরীতকীর স্থান শীর্ষে। কেউ কেউ মায়ের সাথে তুলনা করেন। যদিও গর্ভধারিণী মা অতুলনীয়। এর প্রচলিত নাম হওকী। হরীতকী পাতাঝরা সপুষ্পক উদ্ভিদ। গাছের উচ্চতা সাধারণত ৬০ থেকে ৮০ ফুট। কম বেশিও হতে পারে। পাতার বর্ণ সবুজ, আকার লম্বা-চ্যাপ্টা এবং কিনারা চোখা। গাছের বাকল গাঢ় বাদামি রঙের হয়। ফেব্রুয়ারি-মার্চে গাছে ফুল ফোটে আর পরিপক্ক হয় ডিসেম্বর-মে মাসে। ফুলের রঙ সাদাটে। আকার ছোট। কাঁচা ফল দেখতে সবুজ, তবে পাকলে হালকা হলুদ হয়। শুকালে কালচে খয়েরি রঙ ধারণ করে। ফলের ত্বক খুব শক্ত এবং কুঁচকানো থাকে। বাংলাদেশ ও ভারতে এর আদি নিবাস। আমাদের দেশে প্রায় সব গ্রামাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। বিভিন্ন জাতের হরীতকীর মধ্যে রোহিনী, অমৃতা, বিজয়া এবং জাবন্তী অন্যতম। রোহিনীর ফল আকারে গোল এবং ছোট, তবে সে অনুপাতে বিচি বা দানা বড়। ওজনেও ভারী। অমৃতার ভেতরে শাঁসে ভরা থাকে। দানার আকার ছোট হয়। বিজয়া দেখতে লাউয়ের ন্যায়। আর জাবন্তী খুব ছোট আকারের হয়। এর শরীরে ৩টি শিরা থাকে। হরীতকীর ফল পরিপক্ক হলে গাছতলা থেকে ঝরাফল সংগ্রহ করা যায়। বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতার হার কম।

হরীতকীর স্বাদ তিতা হলেও গুণে অনন্য। এটি ট্যানিন, ফ্রুকটোজ, বিটা সাইটোস্টেরল, অ্যামাইনো অ্যাসিড এবং সকসিনিক অ্যাসিডসমৃদ্ধ ফল। হরীতকীতে এনথ্রাইকুইনোন উপাদান থাকায় কোষ্ঠকাঠিন্য দূরীকরণে কাজ করে। এজন্য ২ চা চামচ হরীতকীর গুঁড়া, সে সাথে ২ গ্রাম দারুচিনি কিংবা লবঙ্গগুঁড়া এবং পরিমাণমতো বিট লবণ এক গ্লাস পানির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে রাতে ঘুমানোর আগে খেতে হবে। আখের গুড়ের সাথে হরীতকীগুঁড়ার শরবত বানিয়ে নিয়মিত খেলে বাত রোগের উপকার পাওয়া যায়। দেহের রক্ত পরিষ্কার করে উচ্চচাপ নিয়ন্ত্রণে আনে। সে সাথে অন্ত্রের খিঁচুনি কমায়। এলার্জি সারাতে হরীতকী ভালো কাজ করে। এজন্য হরীতকীচূর্ণ পানিতে ফুটিয়ে নিয়মিত পান করতে হবে। হরীতকীর গুঁড়া এক সপ্তাহ খেলে অর্শরোগ ভালো হয়। মুখ ফুলে গেলে কিংবা গলা ব্যথা হলে এর চূর্ণ গরম পানিতে ফুটিয়ে মুখে ‘গড়গলা’ করলে আরাম পাওয়া যায়। এছাড়া হাঁপানি, কফজ্বর, স্নায়ুবিক দুর্বলতা, অধিক ওজন, দাঁতের ব্যথা, পাইলস ও ক্ষত রোগের জন্য হিতকর। শুধু কী তাই! রূপচর্যায়ও অবদান কম নয়। খাঁটি ঘি গরম করে, সে সাথে হরীতকীচূর্ণ মিশিয়ে নিয়মিত খেলে দেহে লাবণ্য বাড়ে। নারকেল তেলের সাথে এর গুঁড়া মিশ্রণ করেও শরীরে ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি করা যায় স্বাদের মোরব্বা। এক্ষেত্রে কাঁচা ফল ভালোভাবে পরিষ্কার করে পানিসহ সিদ্ধ করতে হয়। এ কাজ পর পর ৫/৬ বার করা দরকার। এতে ফলের কষ বেরিয়ে যাবে। পরে পরিমাণ মতো চিনির সাথে পানি মিশিয়ে ঘনকরে জ্বাল দিতে হবে। এরপর এগুলো ৩/৪ দিন রেখে দিলেই হয়ে যাবে হরীতকীর মোরব্বা। এবার রুচিমতো খাওয়া এবং অপরকে পরিবেশন।

রোগ নিরাময়ে আমরা ঔষধ সেবন করি। এতে উপকারের পাশাপাশি কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। তবে ত্রিফলার ক্ষেত্রে এ ধরনের সমস্যা নেই। তাই আসুন, নিয়মিত হরীতকীর ব্যবহার করি। রোগ প্রতিকার ও প্রতিরোধের জন্য বসতবাড়িতে অন্তত একটি করে তরীতকীর গাছ লাগাই।

This post has already been read 2709 times!