Tuesday 23rd of April 2024
Home / পরিবেশ ও জলবায়ু / সুন্দরবনে আবারো বেড়ে গেছে ত্রিপল দস্যু বাহিনীর উৎপাত

সুন্দরবনে আবারো বেড়ে গেছে ত্রিপল দস্যু বাহিনীর উৎপাত

Published at ডিসেম্বর ২৬, ২০১৭

* ১৫ জেলে অপহৃত  *১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি

ফকির শহিদুল ইসলাম(খুলনা): সুন্দরবনে আবার বনদস্যুদের উৎপাত বেড়ে গেছে। গত প্রায় তিন মাস ধরে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা ও চাঁদপাই রেঞ্জে নতুন করে গঠিত বেশ কয়েকটি বনদস্যু বাহিনী মুক্তিপণের দাবিতে নিরীহ জেলেদের জিম্মি করে চাঁদা আদায়, নির্যাতন ও লুটপাট চালিয়ে যাচ্ছে। পূর্ব সুন্দরবনে বনদস্যু ছোট্ট বাহিনীর সশস্ত্র সদস্যরা ১৫ জেলেকে মুক্তি পণের দাবিতে অপহরণ করেছে। এদের মধ্যে স্বপন নামে এক জেলে মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে এসেছে। আটক জেলেদের মুক্তিপণ বাবদ দস্যুরা ১০ লাখ টাকা দাবি করেছে। গত শুক্রবার ভোরে সুন্দরবনের বনের তাম্বুলবুনিয়া, কাইতার খাল ও লেমুয়ার খাল এলাকায় এ অপহরণের ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, জিম্মি জেলেরা মুক্তিপণের টাকা পরিশোধ করে তাদের দ্রুত ছাড়িয়ে নিতে মোবাইল ফোনে স্ত্রীসহ স্বজনদের কাছে আকুতি জানাচ্ছে। এ ঘটনায় বনসংলগ্ন এলাকার মৎস্য ব্যবসায়ী ও জেলেদের মধ্যে নতুন করে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। শরণখোলা রাজাপুর এলাকার ইউপি সদস্য ও মৎস্য ব্যবসায়ী জাকির হোসেন, অন্যান্য মহাজন ও বনবিভাগ সূত্রে জানা যায়, গত শুক্রবার ভোরে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের তাম্বুলবুনিয়া বনাঞ্চলের খালে অবস্থানরত কাঁকড়া ধরা জেলেদের বহরে বনদস্যু ছোট্ট বাহিনী ৭/৮ জন সশস্ত্র সদস্য পৃথকভাবে জেলেদের ওপর হামলা করে ওই জেলেদের জিম্মি করে। এর মধ্যে শরণখোলার উত্তর রাজাপুর গ্রামের জেলে লতিফ মীর (৪৫), রিয়াদুল গাজী (১৮), রুহুল আমীন ফরাজী (২৮), হোসেন (২২) পশ্চিম রাজাপুর গ্রামের ছালাম হাওলাদার (৫০), রতিয়া রাজাপুর গ্রামের স্বপন হাওলাদার (২৮) এর নাম তাৎক্ষণিকভাবে জানা গেছে। এদের মধ্যে উপজেলার রতিয়া রাজাপুর গ্রামের সুলতান হাওলাদারের পুত্র মহাজন মালেক আকনের জেলে স্বপন চার দিন পর গতকাল সোমবার ভোরে মুক্তিপণ পরিশোধ করে ফিরে এসেছে। দস্যুরা তাকে মংলার বৈদ্যমারী সংলগ্ন বনের কিনারে ছেড়ে দিয়েছে। অপহৃত জেলেরা বনবিভাগ থেকে পাশ নিয়ে সুন্দরবনের নদী ও খালে কাঁকড়া ধরার জন্য গিয়েছিল।

এদিকে, দস্যুরা গতকাল সোমবার দুপুরে জিম্মি রুহুল ও সালামের ছেলে ডালিম হোসেনকে চরমভাবে মারধর করে। এ সময় রুহুলেন স্ত্রী রহিমা ও ডালিমের মাকে মোবাইল ফোনে মারধরের চিৎকার শুনিয়ে দ্রুত টাকা পরিশোধ করে তাদের ছাড়িয়ে নিতে আকুতি জানিয়েছে। মৎস্য ব্যবসায়ী জাকির হোসেন জানান, দস্যুরা তার কাছে ২ লাখ টাকাসহ  মোট ১০ লাখ টাকা দাবি করেছে।

উল্লেখ্য, চলতি বছর বেশ কয়েকটি দস্যু বাহিনী আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করায় সুন্দরবনে বেশ কিছুদিন দস্যুবৃত্তি বন্ধ ছিল। সম্প্রতি আবার দস্যুরা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বনদস্যুরা নতুন নতুন নামে বাহিনী গঠন করে একের পর এক জেলেদের অপহরণ করে লাখ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করছে। নবগঠিত এ বাহিনীগুলোর মধ্যে সুমন বাহিনী, বড় ভাই বাহিনী ও ছোট্ট বাহিনীর নাম জানা গেছে। মংলার বৈদ্যমারী এলাকার ছোট বাহিনীর ৭/৮ সদস্যের কাছে চারটি আগ্নেয়াস্ত্র রয়েছে বলে জেলে সূত্রে জানা গেছে। কোস্ট গার্ড পশ্চিম জোনের মংলা অপারেশন কর্মকর্তা লেঃ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মুঠোফোনে জানান, বিষয়টি তাদের নজরে রয়েছে। জেলেদের উদ্ধার ও তাদের নিরাপত্তায় কোস্ট গার্ডের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

 

 

This post has already been read 2564 times!