Tuesday 16th of April 2024
Home / অন্যান্য / সমুদ্রস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব

সমুদ্রস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব

Published at নভেম্বর ৩০, ২০২০

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা)  : সমুদ্রে পূন্য স্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হল সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোরকোলের রাস উৎসব। কোন রকম আড়ম্বর অনুষ্ঠান ছাড়া পূজা-ধর্মীয় আরাধনা ও দুবলার চরে পূন্য স্নানের মধ্য দিয়ে এবারের রাস পূজা শেষ হয়েছে। আজ সোমবার ভোরে সমুদ্র তীরে প্রার্থনা ও স্নান করে হিন্দু ধর্মালম্বীরা নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা দিয়েছেন। এর আগে রোববার (২৯ নভেম্বর) সন্ধ্যায় দুবলার চরের মন্দিরে সন্ধ্যা পূজার মধ্য দিয়ে তিনদিন ব্যাপী ঐতিহ্যবাহী রাস উৎসব শুরু হয়।

রাস উৎসব শ্রীকৃষ্ণের ব্রজলীলার অনুকরণে বৈষ্ণবীয়ভাব ধারায় অনুষ্ঠিত ধর্মীয় উৎসব। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের রসপূর্ণ অর্থাৎ  রসের সমৃদ্ধ কথা বস্তকে রাসযাত্রার মাধ্যমে জীবাত্মার থেকে পরমাত্মায় রুপান্তরিত করতে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন এ উৎসব পালন করে। খুলনা,বাগেরহাট,সাতক্ষীরা থেকে নদীপথে বঙ্গোপসাগর পাড়ের সুন্দরবনের দুবলার চরের আলোরকোলে ২‘শ বছর ধরে এ উৎসব পালন হচ্ছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা বঙ্গপসাগরের চর আলোরকোল এলাকায় বসে পুর্ণিমার জোয়ারে স্নান করে, যাতে পূণ্যার্থীদের সকল পাপ মোচন হয়ে যায়। পূর্ব আকাশে ভোরের পূর্ণিমা তিথির নতুন সূর্য ওঠার অপেক্ষা। উষালগ্নে সুন্দরবনের দুবলার চরের সমুদ্র পাড়ে হাজার হাজার নর-নারী মিলিত হয়েছেন। পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে পুরো দুবলার চর এলাকা।

আকাশে উড়ছে বাহারী রংঙের বেলুন। তবে চলমান বৈশ্বিক করোনাভাইরাসের কারণে সীমিত আকারে রাস পূজা উদযাপিত হয়েছে। করোনার কারনে এ বছর রাস উৎসবে পূণ্যার্থীদের আগমন অন্যবারের চেয়ে খুব কম । তারপরও সমুদ্রের লোনা জলে নেমেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের হাজারো নর-নারী। রাসপুজায় মানতকারীরা মাথা ন্যাড়াসহ প্রায়শ্চিত্ত ও পিন্ড দান করেন। পূণ্যের আশায় বেলপাতা, ফুল, ধান, দূর্বা, হরীতকী, ডাব, কলা, তেল ও সিঁদুর সমুদ্রের জলে অর্পণ করেন। পূণ্যার্থীরা পূর্ণিমার মধ্যে উলুধ্বনি ও মন্ত্রপাঠ এবং গঙ্গাস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ করেছেন এ বছরের সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রাস উৎসব।

প্রতি বছর কার্তিক মাসে (খ্রিষ্টীয় নভেম্বর) হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রাস মেলা এবং পুণ্যস্নানের জন্য দুবলারচর বিখ্যাত। যদিও বলা হয়ে থাকে ২০০ বছর ধরে এ রাস মেলা  চলছে। তবে জানা যায়, ১৯২৩ খ্রিষ্টাব্দে হরিচাঁদ ঠাকুরের এক বনবাসী ভক্ত, নাম হরিভজন, এই মেলা চালু করেন। প্রতিবছর অসংখ্য পুণ্যার্থী রাসপূর্ণিমাকে উপলক্ষ করে এখানে সমুদ্রস্নান করতে আসেন। দুবলারচরে সূর্যোদয়ের দেখে ভক্তরা সমুদ্রের জলে ফল ভাসিয়ে দেন। কেউবা আবার বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে ভজন-কীর্তন গেয়ে মুখরিত করেন চারপাশ। কারও কারও মতে, শারদীয় দুর্গোৎসবের পর পূর্ণিমার রাতে বৃন্দাবনবাসী গোপীদের সঙ্গে রাসনৃত্যে মেতেছিলেন শ্রীকৃষ্ণ। এ উপলক্ষেই দুবলায় পালিত হয়ে আসছে রাস উৎসব।

সুন্দরবনের দুবলার চরে গতকাল রোববার সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় পূজা। ওই পূজা ও সমুদ্রস্নানে অংশ নিতে হাজার হাজার পুণ্যার্থী জড়ো হন দুবলারচরে। ২৮ নভেম্বর সকালে সুন্দরবন বন বিভাগের অনুমতি নিয়ে সুন্দরবনের শেষ সীমানা দুবলারচরের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেন তাঁরা। প্রতিবছর রাসপূজাকে ঘিরে দুবলারচরের আলোরকোলে অনুষ্ঠিত হয় মেলা। ঐতিহ্যবাহী ওই মেলায় সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পাশাপাশি অংশ নেন বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ। তবে এবার কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারণে অনুষ্ঠিত হয়নি মেলা। তবে রাস উৎসবে বঙ্গোপসাগরের দুবলার চরের প্রচন্ড শীত উপেক্ষা করে লোনা জলে নেমেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের হাজারো নর-নারী। মানতকারীরা মাথা ন্যাড়াসহ প্রায়শ্চিত্ত ও পিন্ড দান করেন। পূণ্যের আশায় বেলপাতা, ফুল, ধান, দূর্বা, হরীতকী, ডাব, কলা, তেল ও সিঁদুর সমুদ্রের জলে অর্পণ করেন।

জানা গেছে, জাগতিক পাপ মুছে যাবে এই মনোষকামনায় পূর্ণিমাতিথীতে সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ সুন্দরবনের দুবলার চরে  সমুদ্রের পূণ্যস্নান করেন। করোনা ভাইরাসের কারণে এবার কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন না থাকলেও সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে বঙ্গোপসাগরের নীল জলে পূণ্যস্নান করেন পূণ্যার্থীরা। পঞ্জিকা মতে রোববার দুপুর ১টা ৫৪ মিনিটে পূর্ণিমাতিথী শুরু হয়েছে। আজ সোমবার পূণ্যার্থীরা পূর্ণিমার মধ্যে উলুধ্বনি ও মন্ত্রপাঠ করে গঙ্গাস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ করেছেন এ বছরের সনাতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের রাস উৎসব। এ তিথিতেই পূণ্যার্থীদের গঙ্গাস্নানের সময় নির্ধারণ করা হয়। পূণ্যের আশায় এবছরও সৈকতে সমাগম হয়েছে দূর দূরান্ত থেকে পূণ্যার্থী, দর্শনার্থী ও সাধু সন্ন্যাসীর। পূণ্যার্থীদের নিরাপত্তায়  খুলনা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।

This post has already been read 2645 times!