Thursday 25th of April 2024
Home / এক্সক্লুসিভ / সবজির সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা : কিছু কথা

সবজির সংগ্রহোত্তর ব্যবস্থাপনা : কিছু কথা

Published at জানুয়ারি ১৫, ২০১৮

ড. মো. শহীদুর রশীদ ভূঁইয়া: সবজি আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি খাদ্য। সবজি ভক্ষণ করে আমরা যেমন আমাদের দেহের জন্য প্রয়োজনীয় খনিজ দ্রব্য পেয়ে থাকি তেমনি সবজি ভিটামিনেরও উত্তম উৎস। তাছাড়া সবজি আমাদের হজমযোগ্য ও হজম অযোগ্য খাদ্য আঁশের একটি উত্তম উৎস। দু’রকমের আঁশই দেহের জন্য বড় উপকারী। তাছাড়া সবজি প্রায় শতকরা ৮০ ভাগই পানি থাকে বলে এটি দেহের পানির চাহিদাও খানিকটা মিটিয়ে থাকে। সবজি ছাড়া আমাদের একদিনও চলে না। কারণ আমাদের মাছ প্রায়শই কোনো সবজিজাত তরিতরকারি ছাড়া রান্না করা চলে না। তাছাড়া শুধু সবজি এককভাবে বা অন্য সবজির সাথে মিশিয়ে সবজি ভাজিও আমাদের খাদ্যে প্রায় প্রতিদিনই থাকে। ফলে সবজি আমাদের নিত্যদিনের খাদ্যের একটি অন্যতম অনুসঙ্গ।

বাংলাদেশে মূলত সবজি মৌসুম দু’টি- গ্রীষ্মকালীন এবং শীতকালীন সবজি। অধিকাংশ সবজি ফসল এবং এদের জাত শীতপ্রধান দেশ থেকে এদেশে প্রবর্তন করা হয়েছে বলে আমাদের শীতকালেই সবচেয়ে বেশি বৈচিত্র্যময় সবজির আবাদ করা হয়। ইদানিংকালে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গবেষকগণ বিদেশ থেকে প্রবর্তিত নানা রকম সবজি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সারা বছর জন্মানো যায় সেরকম সবজি বাছাই করে নিচ্ছে। এখন সে কারণেই প্রায় সারা বছরই কোনো না কোনো সবজির আবাদ করা সম্ভব হচ্ছে আমাদের দেশে। দৈনিক একজন সুস্থ সবল মানুষের গড়পড়তা ২০০-২২৫ গ্রাম সবজি গ্রহণ আবশ্যক। আর আমরা প্রতিদিন গড়পড়তা মাথাপিছু ১৭০-১৮০ গ্রাম সবজি গ্রহণ করছি। তার মানে গড়ে প্রতিদিন আমরা ৩০-৪৫ গ্রাম সবজি চাহিদা মেটাতে অসমর্থ হচ্ছি। অথচ আমাদের সবজি ব্যবস্থাপনা ও বাজারজাতকরণের অদক্ষতার কারণে দেশের মোট উৎপাদিত সবজির শতকরা ২৫-৪০ ভাগ সবজি নষ্ট হচ্ছে যা যুক্তিসঙ্গতভাবে হ্রাস করা গেলে আমাদের সবজি চাহিদা মেটানো অনেকটাই সম্ভব হতো।

সবজি চাষ থেকে শুরু করে সবজি সংগ্রহ, সবজি পরিবহন, সবজি বেপারিদের কাছে বিক্রয়, তা আড়তদারদের নিকট পৌঁছানো এবং সবজি শেষ পর্যন্ত বাজারে নিয়ে ভোক্তাদের জন্য সাজানো এবং বিক্রয় পর্যন্ত বহু রকম কার্যাবলি সম্পন্ন করতে হয় আর এর সাথে যুক্ত হয় নানা পেশার নানা শ্রেণীর মানুষ। সবজির ভালোমন্দের শুরুটা কিন্তু হয় প্রথম কৃষকের মাঠে। উত্তম কৃষি ব্যবস্থাপনা দিয়ে সৃষ্টি সবজির বাহ্যিক অবয়ব এবং গুণগতমান সাধারণভাবেই উত্তম হয়ে থাকে। তাছাড়া জাত বাছাইয়ের ওপরও সবজির গুণগত মান খানিকটা নির্ভর করে। শক্ত আবরণী বিশিষ্ট টমেটো জাতের পরিবহন সহজ। দেশি টমেটো পরিবহনের জন্য উপযোগী নয়। অনেক সবজির ক্ষেত্রেই এ রকম উদাহরণ দেয়া যায়। তাছাড়া উৎপাদন স্থল থেকে শেষ ঠিকানা বাজারে নেয়া পর্যন্ত সবজি পরিবহন এবং সবজি বিক্রির জন্য সংরক্ষণ করা পর্যন্ত বিভিন্ন কর্মকা-ের দক্ষতা ও সচেতনার ওপর সবজির গুণমান এবং এদের নষ্টের পরিমাণ নির্ভরশীল।

সবজি সংগ্রহ থেকে সবজি বাজারজাতকরণ কর্মকা-ের ফিরিস্তি এখানে তুলে ধরা এখন অত্যন্ত আবশ্যক হবে। সবজিভেদে সবজি সংগ্রহের সময়কাল ভিন্ন ভিন্ন রকম হয়। কোন কোন সবজি অতি কচি থেকে শুরু করে পরিপক্ব অবস্থায়ও ব্যবহার করা যায়, যেমন: চালকুমড়া, মিষ্টিকুমড়া ইত্যাদি। বাজার চাহিদার ওপর লক্ষ রেখে বিভিন্ন সময়ে এদের ফল সংগ্রহ করা হয়। কোনো কোনো সবজি আবার সংগ্রহপোযোগী নির্দিষ্ট সময়ে সংগ্রহ করাই উত্তম। এর ওপর এসব সবজির গুণগত মান ও পরিবহন ঝুঁকির মাত্রা নির্ভর করে। বেগুন, টমেটো, পটোল, কাঁকরোল, চিচিঙ্গা ইত্যাদি সবজি একটি নির্দিষ্ট মাত্রায় পরিপক্ব হলেই সংগ্রহ করতে হয়।

সবজি সংগ্রহের সময় সবজির কা- বা সবজিজাত ফলকে গাছ থেকে আলাদা করে নিতে হয়। এর জন্য ধারালো ছুরি বা কাঁচি ব্যবহার করা উত্তম যেন কর্তন স্থান এবড়ো থেবড়ো না হয়ে যায়। অতঃপর সংগৃহিত সবজিকে গ্রেডিং বা শ্রেণীকরণ করার প্রয়োজন হয়। প্রথমেই নষ্ট, রোগাক্রান্ত বা কীটাক্রান্ত সবজি আলাদা করে ফেলার প্রয়োজন হয়। অতঃপর সবজির ধরন অনুযায়ী একে শ্রেণীকরণ করে নিতে হয়। কাকরলের ক্ষেত্রে যেমন কাঁচা এবং পরিপক্ব কাঁকরোল আলাদা করতে হয়। তেমনি আকৃতির দিক থেকে একই রকম কাকরল ভিন্ন রকম কাঁকরোল থেকে আলাদা করে নিতে হয়। সবজি ছোট বড় একত্রে মিশিয়ে বাজারে নিয়ে গেলে কখনোই ভালো দাম পাওয়া সম্ভব নয়। সবজিতে ময়লা থাকলে তা অবশ্যই ধুয়ে পরিষ্কার করা দরকার। ভেজা সবজি সাথে সাথে বস্তা বা প্লাস্টিক ক্রেটে গাদা গাদা করে তুলে নেওয়া উচিত নয়। বরং এদের ছড়িয়ে দিয়ে পানি শুকিয়ে নিয়ে তবে এদের প্লাস্টিক ক্রেট বা বালতিতে তোলা উচিত।

আমাদের দেশে সবজি গাদা গাদা করে পাটের বস্তায় তোলা হয়। কখনো পা দিয়ে মাড়িয়ে বা হাত দিয়ে জুড়ে ঠেলে বস্তায় বেশি সবজি ধরবার ব্যবস্থা করা হয় যা সবজির বাহ্যিক চেহারা নষ্ট করে দেয় এবং সবজির বাজার মূল্য কমিয়ে দেয়। ট্রাকে সবজি পরিবহনের সময় যেন বেশি সবজি ধরানো যায় সেলক্ষ্যেই সবজিকে চেপে বস্তায় ভরা হয়। বাজারে এখন প্লাস্টিক ক্রেট পাওয়া যায়। যেসব এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে সবজি চাষ হচ্ছে সেসব এলাকায় কোনো কোনো সবজি চাষি এখন প্লাস্টিক ক্রেট ব্যবহার করছেন। এর দাম খুব বেশি নয় এবং বার বার এসব ক্রেট ব্যবহার করা যায়। আর সবজিও এতে বেশ ভালো থাকে। তাই বারবার ব্যবহার উপযোগী প্লাস্টিক ক্রেটে সবজি স্তরে স্তরে সাজিয়ে বাজারজাত করাই উত্তম। বস্তায় হোক আর ক্রেটে করেই হোক সবজি তারপর নিয়ে যাওয়া হয় বিক্রয়ের জন্য। অর্থাৎ কোনো না কোনো পরিবহন এতে ব্যবহার করতে হয়। ভ্যান গাড়ী, রিক্সা বা অন্য কোনো সুবিধাজনক উপায়ে সবজি গুদাম বা স্থানীয় আড়তে নেয়া হয়ে থাকে। বেপারিদের কাছে সবজি বিক্রয়ের জন্য কখনো বাজারে বা অন্য নির্দিষ্ট কোনো স্থানে এনে সবজি চাষিরা সবজি জমা করে। এসব স্থানে সবজি এনে সাধারণত চাটাই বা পলিথিন সিটের ওপর রাখা হয়। প্রায়শই আশপাশের এলাকা আবর্জনাযুক্ত থাকে এবং সার্বিক পরিবেশ নোংরা থাকে। নানা রকম সবজির পাতা, পচা সবজি এসব আশপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকে। সবজি চাষি বা বেপারীদের বসার কোনো ব্যবস্থা এবং অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুবিধা আমাদের বহু সবজি বিক্রয় স্থলে নেই। এমনকি উপযুক্ত টয়লেট বা প্রস্রাবখানার ব্যবস্থাও এসব প্রায় স্থানেই নেই। একটি অস্বাস্থ্যকর অপরিচ্ছন্ন স্থানে সবজির বাজার বসে। বেপারিরা চা স্টলের বেঞ্চে বসে চা পান করে। আর হেটে হেটে সবজি চাষিদের সাথে দরদাম করে।

কোনো কোনো উচ্চ মূল্যমান সম্পন্ন সবজি ক্লোরিন দ্রবণে ডুবিয়ে ধৌত করা যেতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের সুপারিশ অনুযায়ী সতেজ সবজি সর্বোচ্চ ২০০ পিপিএম ক্লোরিন দ্রবণে ধৌত করা যেতে পারে। ক্লোরিন দ্রবণের মাত্রা নির্ভর করে সবজির প্রকৃতির ওপর। উল্লেখিত ২০০ পিপিএম ক্লোরিন দ্রবণ তৈরির জন্য বাজারে প্রাপ্য ৫% মাত্রার সোডিয়াম হাইপোক্লোরাইড লিটারপ্রতি ৪০ মিলিলিটার হারে পানিতে মেশাতে হয়। উক্ত মিশ্রণ দ্রবণে টমেটো, বেগুন ইত্যাদি সবিজ ধৌত করে ১০-১৫ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে। কখনো কখনো শুধু ট্যাপের পানি দিয়ে ভালোভাবে সবজি ধুয়ে ছায়াযুক্ত মুক্তভাবে বায়ু চলাচল করে তেমন স্থানে রেখে দিলেও সবজি ভালো থাকে। তবে ধৌত করা সবজি ০.৫% ছিদ্রযুক্ত পাতলা পলিথিন ব্যাগে রেখে বাজারজাত করলে সবজির গুণমান ভালো থাকে এবং ভালো মূল্য পাওয়া যায়। মটরশুঁটি, বরবটি ইত্যাদি শিম্বিজাতীয় সবজি পরিষ্কার করে পাতলা প্লাস্টিকের ছোট ছোট বাক্সে ভরে বাজারজাত করা যায়। সবজির গুণমান রক্ষা, সবজির সংগ্রহ পরবর্তী ক্ষতি কমানো এবং রুচিশীল সবজি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলে পুষ্টির চাহিদা মেটানোর দিকে আমাদের এগিয়ে আসার কোনো বিকল্প নেই। কত দ্রুত আমরা তা করতে পারবো তা নির্ভর করবে আমাদের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সম্পর্কিত জ্ঞান এবং সরকারি বেসরকারি উদ্যোগের ওপর।

সবজি দূর পরিবহনে আমাদের দেশে ট্রাকই ব্যবহার করা হয়। ট্রাকে বস্তা ভর্তি সবজি প্রায়শই পা দিয়ে মাড়িয়ে বেশি বস্তা ধরাবার ব্যবস্থা করা হয়। এ কাজটি সবজির জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক। সবজির মান ভালো রেখে পরিবহনের উপায় হলো সবজির জন্য প্লাস্টিক ক্রেট ব্যবহার করা। ছোট ছোট সবজিজাত ফল পরিবহনে বর্তমানে বাজারে প্রাপ্ত ক্রেটগুলোর বড় সমস্যা হলো এদের আকৃতি ছোট বলে ট্রাকে এরা অনেক জায়গা নষ্ট করে দেয়। ফলে বস্তায় করে সবজি পরিবহন করলে ট্রাকে অনেক বেশি সবজি ধরে বলে পরিবহন খরচ অনেক কমে যায়। প্লাস্টিক ক্রেটগুলো বড় আকৃতির হলে একদিকে যেমন ছোট বড় সব রকমের সবজি এতে সাজিয়ে রাখা সম্ভব হবে তেমনি ট্রাকে মাল পরিবহনও লাভজনক হবে। কেবল প্লাস্টিক ক্রেটের ব্যবহার শতকরা ১০ ভাগ পর্যন্ত সবজি সংগ্রহ পরবর্তী ক্ষতি হ্রাস করতে সক্ষম।

আমাদের বাজার অবকাঠামো উন্নত নয়। সবজির বাজারের অবস্থা আরো খারাপ। দেশের যেসব এলাকায় সবচেয়ে বেশি সবজির সমাহার ঘটে সেসব এলাকায় সবজি এনে রাখার জন্য ছোট ছোট অনেকগুলো দেড়-দুই ফুট উঁচু দেয়াল পরিবেষ্টিত পরিষ্কার পাকা মেঝে তৈরি করতে পারলে ভালো হয়। দেশের সবজি প্রধান কয়েকটি এলাকায় কুলিং চেম্বার ব্যবস্থা করতে পারলে উচ্চ মূল্যমানসম্পন্ন সবজি তাতে রাখা সম্ভব হবে। এতে সবজির মান অক্ষত থাকবে এবং সবজির বাজারমূল্য অধিক হবে। সবজি বাজারে অন্যান্য আনুষঙ্গিক সুবিধাদি যেমন: গ্রেডিং করা, সবজি পেকেজিং করা এবং সবজি সংরক্ষণের ব্যবস্থা ইত্যাদি থাকা প্রয়োজন। চাষি এবং বেপারিগণের বসার স্থান, চা নাস্তা খাবার ব্যবস্থা, শৌচাগার ইত্যাদি অবকাঠামো নির্মাণ করাই যায়। তাছাড়া সবজি বাজারের জন্য কিছু নির্দিষ্ট নীতিমালাও থাকা প্রয়োজন। বেপারি যাতে কৃষককে ঠকাতে না পারে নিয়মিত বাজার পরিদর্শন করার মাধ্যমে তা নিশ্চিত করা সম্ভব। তাছাড়া সবজি ব্যবসায়ীগণদের লাইসেন্স দিয়ে তাদের ব্যবসাকে খানিকটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

বেপারিদের মাধ্যমে সবজি দেশের নানা স্থান থেকে পৌঁছে যায় শহর এলাকায় অবস্থিত আড়তে। তাজা সবজি যতটা সম্ভব দ্রুত বাজারে তোলাই লক্ষ্য যদিও তবু অনেক সবজি পরের দিন বাজারজাত করার জন্য আড়তে তুলে রাখতেই হয়। বাজারে সবজির চাহিদার ওপর নির্ভর করেই সবজি রাতের জন্য আড়তে সংরক্ষণ করতে হয়। আমাদের আড়তে সবজি সংরক্ষণের ব্যবস্থাও অত্যন্ত খারাপ এবং অস্বাস্থ্যকর। আড়তের মেঝে অনেক ক্ষেত্রে এবড়ো থেবড়ো ও মেঝে ভাঙ্গা। ভেতরটা অপরিষ্কার ও অপরিচ্ছন্ন অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। তাছাড়া অনেক ক্ষেত্রেই ভেতরে অপ্রতুল বৈদ্যুতিক পাখা ও বায়ু চলাচলের সীমিত ব্যবস্থা সবজি সংরক্ষণের ঠিক অনুকূল নয়। আবার সবজি রাখার জন্য অনেক স্থানে সরাসরি মেঝেটাকেই ব্যবহার করা হয়। জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করেই এসব বিষয়ে আমাদের দেখভাল কার্যক্রম চালু করা দরকার। সবজি ঘাটতির দেশে হেলাফেলা করে সবজি নষ্ট করা কিছুতেই মেনে নেওয়া উচিত নয়। সরকারি বেসরকারি উদ্যোগে সম্পূর্ণ বাজার ব্যবস্থাটাকেই ঢেলে সাজানোর সুযোগ রয়েছে। এমনকি প্রাইভেট-পাবলিক-পার্টনারশিপের মাধ্যমে দেশের বাজারজাত ব্যবস্থাটাকে অনেকাংশে উন্নত করে তোলা সম্ভব।

This post has already been read 4993 times!