Tuesday 16th of April 2024
Home / প্রাণিসম্পদ / শীতে গরু-ছাগলের যত্ম যেভাবে নিবেন, যা করবেন

শীতে গরু-ছাগলের যত্ম যেভাবে নিবেন, যা করবেন

Published at ডিসেম্বর ১২, ২০২০

নাহিনূর রহমান: বিগত দশ বছরে দেশের গবাদিপ্রাণি সেক্টরে এক নীরব পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। এ সময়টাতে দেশে বহু সংখ্যক যুবক বিশেষ করে- শিক্ষিত শ্রেণীর গ্রাজুয়েটরা সেক্টরটিতে আত্মনিয়োগ ও বিনিয়োগ করেছেন নিজেদের স্বাবলম্বী করতে, শিক্ষিত হওয়া মানেই চাকুরী ধারনাটিকে পাল্টে দিতে।

ইতিমধ্যে আধুনিক অনেক বাণিজ্যিক খামার গড়ে উঠেছে কিন্ত সেসব খামারে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার অতটা এখনো লক্ষণীয় নয়। আমাদের দেশে এখন শীতের প্রকোপ আস্তে আস্তে বাড়ছে, গ্রামের মাঠে  এই শীতে একটি দৃশ্য খুব কমন, মাঠে চড়ে বেড়ানো গরুর গায়ে চটের ছালা ব কম্বল জড়ানো। খামারিরা গরুর প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা থেকে এটি করেন। যদিও গরুর দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রা ১০২ ডিগ্রী ফারেনহাইট যা মানুষের দেহের তাপমাত্রা হতে ৫ ডিগ্রী বেশি। মজার ব্যাপার হলো- আমাদের দেশে অধিকাংশ খামারি হলস্টেইন ফ্রিজিয়ান যেই শংকর জাতের গরু পালন করেন তাদের জন্য শীতকালীন সময়ের এই ১৮-২২ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা অত্যন্ত আরামদায়ক।

আমাদের খামারিদের তাই এই শীতে গরুর দেহে চট কম্বল প্যাচানোর থেকে জরুরি তার পুষ্টিমান ও সঠিক রেশন এর ব্যাবস্থা নিশ্চিত করা। শীতকালীন সময়ে গরুকে এক্টু উচ্চ প্রোটিন সম্পন্ন খাবার দেয়া উচিত। এ সময়  ডাল বা তেল জাতীয় খাবার দেয়া উচিত।  দুগ্ধবতী গাভীকে ২০০ গ্রাম করে সয়ামিল দেয়া গেলে গরু শরীরবৃত্তীয় কাজগুলো সহজ হয়, গাভীকে ৫০-১০০ গ্রাম করে কালোজিরা দিলে গাভীর দেহে মিনারেল ও এন্টি অক্সিডেন্ট -এর পরিমান সঠিকভাবে বজায় থাকে, হিমালয়ান পিংক সল্ট গরু চেটে খেলে এই সময় মুখে লালার ঘাটতি হয়না।

শীতকালে গরুকে অবশ্যই গোসল করাবেন ও গোয়ালঘর পরিস্কার রাখবেন, যেন গরু স্যাঁতস্যাঁতে না থাকে। শীতকালে আপনার গরুকে অবশ্যই গলা ফোলা বা এইচ.এস ভ্যাক্সিন দিয়ে দেবেন। নয়তো এই ব্যাক্টেরিয়াজনিত সংক্রমণে গরু মৃত্যু হার শতভাগ, ঘাড়ের চামড়ার নিচে মাত্র দুই সিসি ভ্যাক্সিন-ই যথেষ্ট এক বছরের সুরক্ষার জন্য।

শীতকালে বাঁছুরের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ, শিশু অবস্থায় নিউমোনিয়া হয়ে জন্মের এক মাসের মধ্যে প্রায় ৬০% বাঁছুর মারা যায়। এই সময় বাঁছুরকে শুকনো স্থানে রাখা লাগে ও কোনভাবেই যেন স্যাঁতস্যাঁতে স্থানে না থাকে ও পর্যাপ্ত পরিমানে যেন মায়ের দুধ পায়, বিশেষ করে বডি ওয়েটের  ১০% অনুপাতে দুধ দিতে হবে।

যারা ছাগল পালন করেন তারা শীতে বিশেষ যত্ন নেবেন। শীতকালে কোনভাবেই ছাগলের ঘরে ঠাণ্ডা বাতাস যেন না ঢুকে রাতে যেন তাপমাত্রা কোনভাবেই ২৫ ডিগ্রীর নিচে না আসে। এজন্য প্রয়োজনে ইনফ্রারেড হীটার ব্যবহার করা যেতে পারে। রাতে বিশেষ সতর্কতা হিসেবে ছাগলের শিং এ সরিষার তেল মেখে দেবেন ও এক কোয়া রসুন খাইয়ে দেবেন। শীতকালে বিশেষ করে ভোরের ঠান্ডা বাতাসে ছাগল এর মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি, তাই এ ব্যপারে সতর্কতা অত্যন্ত জরুরি। ছাগল ক্রয় করে অবশ্যই এক সিসি পিপিআর ভ্যকসিন ঘাড়ের চামড়ার নিচে দেবেন, সেক্ষেত্রে ছাগলের বয়স ২ মাস এর অধিক হওয়া বাঞ্ছনীয়।

লেখক: ব্যবস্থাপনা পরিচালক, ঐতিহ্য এগ্রো ফুড।

This post has already been read 4816 times!