Saturday 20th of April 2024
Home / আঞ্চলিক কৃষি / ভূতিয়ার বিলে ভাসমান বেডে সবজি চাষে সাফল্য

ভূতিয়ার বিলে ভাসমান বেডে সবজি চাষে সাফল্য

Published at অক্টোবর ২৭, ২০২০

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : খুলনার সর্ববৃহৎ পতিত জলাভূমি ভূতিয়ার বিল তেরখাদাবাসীর নীরব কান্না। পানিবদ্ধতায় দীর্ঘদিন পতিত থাকায় হতাশ ভূমি মালিকরা। ভূতিয়ার বিল এলকার বাসিন্দারা সারা বছরই পানিবন্দী থাকে। পানিবন্দী থাকার কারণে তাদের অভাব অনটনের মধ্যে থাকতে হয়। তবে তাদের বিকল্প আয়ের পথ খুলে দিয়েছে ভাসমান সবজি চাষ। গেল তিন বছর বিশাল ভূতিয়ার বিলের মাঝখানে দুই বিঘা জমিতে সাচিয়াদহ ইউনিয়নের কড়রিয়া এলাকার কৃষকরা পানির উপরে চাষাবাদ করছে মৌসুমী সবজি। ভাসমান এ সবজি চাষে সাফল্যের হাসি হাসছে কৃষকরা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তারা এসব কৃষকদের ভাসমান বেডে সবজি চাষ পদ্ধতির প্রশিক্ষন সহায়তা দিচ্ছে। সাড়ে তিন হাজার হেক্টর আয়তনের ভূতিয়ার বিলে শরৎকালে পদ্মফুল দেখতে ভীড় করেন সৌন্দর্য্য পিপাসুরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভূতিয়ার বিলের মাঝখানের দুই বিঘা জমি যেনো এক টুকরা উর্বর উদ্যান। দীর্ঘদিন পতিত বিশাল এ জলাভূমিতে এখন সবজি’র সমারোহ। সম্পূর্ণ রাসায়নিক সার ও কীটনাশকমুক্ত পরিবেশে ভাসমান বেডে লতা বিহীন সবজি উৎপাদন হচ্ছে। ভাসমান বেডে চাষাবাদ হচ্ছে- লালশাক, ওলকপি, উচ্চে, শসা, ধুনিয়া, ঢেঁড়শ, রসুন, পেঁয়াজ, আলুসহ অন্যান্য শাক-সবজি। গেল দু’বছরের চেয়ে এবার বাজার মুল্য বেশি হওয়ায় লাভবান হচ্ছেন কৃষকরা।

ভাসমান সবজি চাষী হরিশ বিশ্বাস বলেন, বসতবাড়ী ছাড়া আমার কোন জায়গা-ভূই নেই। ভূতিয়ার বিলের মাঝখানে ভাসমান সবজি চাষ করে আমি এখন সুস্থ আছি। ছেলেমেয়ের পড়া, নতুন করে ঘর নির্মাণ ও দৈনন্দিন সকল খরচ নির্বাহের একমাত্র উৎস আমার সবজি ক্ষেত। তিনি আরও বলেন, বাজারে এখনকার সবজি নিয়ে গেলে মানুষ আগেই এইটা কিনে নেয়। সকলেই জানেন- এখানের সবজি বিষমুক্ত। পাইকাররাও আমাদের কাছ থেকে শাক-সবজি কিনে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের দেখাদেখিতে অন্যরাও এখন ভূতিয়ার বিলে ভাসমান সবজি চাষাবাদ শুরু করেছে। সকলেই লাভবান হচ্ছি। একটা সময় তো এ বিলে কিছুই হতোনা।

একই বিলের কৃষক নিখিল সরকার, রহমন বিশ্বাস, উষা মজুমদার, অধির মজুমদার, রমেন সরকার জানান, বর্তমান বাজারমুল্য ভালো থাকায়। ভাসমান সবজি চাষে বেশ লাভবান হচ্ছেন তারা। তবে ভূতিয়ার বিলে তাদের জমি নেই। এখানে সবজি চাষাবাদের ফলে ভূমি মালিকরা খুশি। প্রথম দিকে চাষিরা সন্দিহান থাকলেও পরীক্ষামূলক চাষে সফলতা আসায় ‘ভাসমান বেডে সবজি চাষ’ধারণাটি এখন ভুতরিয়া বিলে বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। ফলে ভাসমান বেডে সবজি চাষ পদ্ধতি ভূতিয়ার বিলের মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া হলে এই বিল হবে সবজি চাষের বিশাল ভান্ডার।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, সবজি চাষাবাদে উৎসাহিত করতে কৃষকদের মাঝে বিনামুল্যে বীজসহ প্রশিক্ষণ দিয়েছি। হাতে-কলমে কৃষকদের বেডে গিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছি। প্রতিটি বেডে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা খরচ হয়। আর প্রতিমাসে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা আয় হচ্ছে কৃষকদের। এতে কৃষকরা লাভবান হচ্ছেন। তাদের দেখে অন্যরাও এগিয়ে আসছেন ভাসমান সবজি চাষে।

উল্লেখ,দেশের বিভিন্ন এলাকায় পানি নিস্কাশনের সু-ব্যবস্থা না থাকায়  সাড়া বছর ভুমি থাকে পানিতে তলিয়ে। পানিবন্দী ঐসব অঞ্চলের জমিতে পানি জমা থাকায় ফসল উৎপাদন করতে পারেনা। পানিবন্দী অঞ্চলের দরিদ্র জনগোষ্ঠির জন্য এই জলাবদ্ধতা একটা স্থায়ী অভিশাপ। কারন, বছরে একবারও তারা জমিতে ফসল ফলাতে পারছেন না। পানি জমে থাকার কারণে জমি থাকে অনাবাদি। বদ্ধ পানিতে আগাছা ও কচুরীপানায় ভরে যায় জমি। সরকার চাষিদের আত্মকর্মসংস্থান ও পরিবারের আয়ের সুযোগ করে দিতে বিগত ২০১৩ সাল থেকে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধিনে জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাষ্টের অর্থায়নে “বন্যা ও জলাবদ্ধ প্রবন এলাকায় জলবায়ু পরিবর্তন অতিযোজন কৌশল হিসেবে ভাসমান সবজি ও মসলা উৎপাদন প্রযুক্তি সম্প্রসারণ প্রকল্প  গ্রহণ করে। ওই প্রকল্পের আওতায় বন্যা ও জলাবদ্ধ প্রবন এলাকার চাষী সমন্বয়ে একটি সমিতির মাধ্যমে তাদের প্রশিক্ষণ প্রদান, বিনা মূল্যে বীজ সরবরাহ, বেড তৈরির খরচ ও বিভিন্ন কৃষি উপকরণ সহায়তা প্রদান করা হয়।

This post has already been read 1484 times!