Wednesday 24th of April 2024
Home / খাদ্য-পুষ্টি-স্বাস্থ্য / ভীতি নয়, দরকার লাল মাংস রান্নার স্বাস্থসম্মত উপায়

ভীতি নয়, দরকার লাল মাংস রান্নার স্বাস্থসম্মত উপায়

Published at সেপ্টেম্বর ৪, ২০১৭

আয়শা সিদ্দিকা, পুষ্টিবিদ

আয়শা সিদ্দিকা, পুষ্টিবিদ

আয়শা সিদ্দিকা : গরু বা খাসির লাল মাংস আয়রন ও প্রোটিনের ভালো উৎস। এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি এবং জিংক।মাংস দেহে শক্তি জোগাতে সাহায্য করে। লাল মাংসের রান্নার পদ্ধতির কারণে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা হতে পারে। তাই স্বাস্থ্যকরভাবে লাল মাংস রান্না করা উচিত। প্রথম শ্রেণির প্রোটিন সমৃদ্ধ রেড মিটের অন্তর্ভূক্ত গরুর মাংস স্বাদে অতুলনীয়। এক টুকরো গরুর মাংস থেকে একগুচ্ছ পুষ্টি উপাদান পাওয়া যায়। গরুর মাংস দিয়ে হাজারো রকম রান্না সম্ভব। স্বাস্থ্যের বিষয়গুলো এই রান্নার পদ্ধতির ওপর অনেক প্রভাব ফেলে। বিভিন্ন পদ্ধতিতে লাল মাংসের রান্নার স্বাস্থ্যকর উপায় :

১.গ্রিল বিফ(Grilling): বিফ উপায়ে গ্রিল করে খেলে এতে চর্বি অনেকাংশ কমে যায়। পাতলা মাংস হলে এটি আরো স্বাস্থ্যকর হয়। গ্রিল করার ক্ষেত্রে কয়লার ব্যবহার করা অনুচিত। কয়লা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায়।

 ২.স্টেক (Steak): মাংসের সব রকম প্রস্তুত প্রণালির মধ্যে স্টেক অপেক্ষাকৃত স্বাস্থ্যকর। তবে পুরোপুরি তৈরি (Well Done) স্টেক বেশি ভালো। অর্ধসেদ্ধ (Rare)বা মধ্যমমানের (Medium ) থেকে স্বাস্থ্যঝুঁকি হতে পারে। বিশেষ করে হালকা মসলার ব্যবহার ও অল্প অলিভ অয়েল দিয়ে স্টেক করলে তা স্বাস্থ্যকর হয়। পুরো করে মাংস না কেটে একটু পাতলা করে কাটলে পরিমাণের দিকটা বজায় রাখা যায়। বিফ স্টেককে স্বাস্থ্যকরভাবে উপভোগ করার জন্য এর সঙ্গে সবজি সেদ্ধ খেলে ভালো। তাতে সোডিয়াম অনেকটা কমে আসে। সসের ব্যবহার একটু কম করা উচিত। যদিও এতে স্বাদের কিছু হেরফের হতে পারে।

carb-restriction ৩.বিফ কারি ও ভুনা: এ ধরনের রান্নার ক্ষেত্রে মাংস ছোট করে কাটা ভালো এবং কাটা মাংস রান্নার আগে একটু সেদ্ধ করে পানি ফেলে নিলে তাতে অনেকটা চর্বি কমানো যায়। মসলার মধ্যে লাল মরিচ কম ব্যবহার করা উচিত। এ ছাড়া কারি তৈরির সময় সবজি ব্যবহার করলে ভালো হয়। যেমন : বাঁধাকপি, পেঁপে, ক্যাপসিকাম ইত্যাদি। তাতে গরুর মাংস খাওয়া কিছুটা কম হয়। যেকোনো প্রকার কারি বা ভুনার ঝোল যত এড়িয়ে চলা যায়, তত ভালো। ঝোলেই সব চর্বি জমে থাকে। রান্নার তেল হিসেবে সরিষা ও সয়াবিনের মিক্স বা সূর্যমুখী তেল বা জলপাইয়ের তেল ব্যবহার করলে ভালো।

 ৪.গরুর কাবাব: গরুর মাংস দিয়ে অনেক রকম কাবাব করা হয়। যেমন : ছেঁচা কাবাব। এই জাতীয় কাবাব মাংস পাতলা করে কেটে হালকা থেঁতলে নিয়ে তারপর করা হয়। কচি গরুর মাংসের ক্ষেত্রে বেশি স্বাদ হয়। মসলা ও তেল একত্রে মাখিয়ে রাখতে হয়। এ ধরনের কাবাবে কম তেল দিলেও কাবাব অনেক স্বাদ হয়। হাঁড়ি কাবাব যেন একেবারে শুষ্ক হয়ে না যায়, সে ব্যাপারে লক্ষ রাখতে হবে। শিক কাবাবেও তুলনামূলকভাবে মাংসের চর্বি কম থাকে। তবে ঝলসা হয় বলে মাংস পুড়ে যায়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তাই শিক কাবাব না খাওয়াই ভালো। শিক কাবাবের সঙ্গে দইয়ের সালাদ খেলে অনেক উপকার হয়।

 ৫.বিফ কিমা : কিমা করা মাংসে চর্বি অনেক কম থাকে। কচি মাংসের কিমায় চর্বি একেবারেই কমে যায়। কিমা মটরশুটি বা আলু দিয়ে অল্প তেলে রান্না করলে ভালো। তবে রোলের মধ্যে কিমা ভরা হলে ওই রোল ভেজে খেলে চর্বির মাত্রা বেড়ে যায়। তাই লাল আটার পাতলা রুটি দিয়ে কিমা খেলে বেশি ভালো। আলুর চপে কিমা থাকলে অপেক্ষাকৃত কম গ্রহণ করা হয়। তাই শ্যালো ফ্রাই করা আলুর চপ শসা বা টমেটো সস দিয়ে খাওয়ায় ভালো।

 ৬.বিফ বিরিয়ানি: গরুর মাংস দিয়ে তৈরি বিরিয়ানি, খাসির মাংসের বিরিয়ানির তুলনায় অনেকটা স্বাস্থ্যকর। খাসির বিরিয়ানিতে গরুর বিরিয়ানির তুলনায় বেশি চর্বি থাকে। গরুর বিরিয়ানি তৈরির আগে মাংস একটু সেদ্ধ করে পানি ফেলে নিলে আরো চর্বি কমানো যায়। এছাড়া চালের তুলনায় মাংসের অনুপাত কম হলে তা আরো স্বাস্থ্যসম্মত হয়। ছোট করে কাটা মাংসে উদ্ভিজ তেল ও ঘি বা বাটার মিশ্রণ করে নিলে সম্পৃক্ত চর্বি অনেকাংশে কমানো যায়।

 ৭.চিলি বিফ: চিকন ও পাতলা করে চর্বি ছাড়ানো মাংস দিয়ে চিলি বিফ তৈরি করা হয়। ক্যাপসিকাম দেওয়া হয় বলে এই রেসিপি স্বাস্থ্যকর।এতে অনেক কম তেলের প্রয়োজন হয়। তবে মাংস সেদ্ধ করে (Saulte Style এ) করলে বেশি ভালো।

লেখক : ডায়েট অ্যান্ড নিউট্রিশন কনসালট্যান্ট, জাপান বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হসপিটাল এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও কনসালট্যান্ট, ইজি ডায়েট বিডি লিমিটেড।

This post has already been read 2923 times!