Friday 19th of April 2024
Home / অর্থ-শিল্প-বাণিজ্য / ভারতীয় কোম্পানীর বিরুদ্ধে পাওনা টাকা পরিশোধে গড়িমসির অভিযোগ

ভারতীয় কোম্পানীর বিরুদ্ধে পাওনা টাকা পরিশোধে গড়িমসির অভিযোগ

Published at আগস্ট ২৭, ২০২০

বুধবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে প্রেস ক্লাব যশোর মিলনায়তনে পাওনাদার ২৪টি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত পাওনাদারদের একাংশ।

নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারতীয় কোম্পানী উত্তরা ফুডস অ্যান্ড ফিডস বাংলাদেশ লিমিটেড (ভেঙ্কিজ গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান) -এর কাছে পাওনা টাকা পরিশোধে গড়িমসির অভিযোগ করেছে দেশের অন্তত ৭০ জন পোলট্রি, মৎস্য ও পশুখাদ্য তৈরির কাঁচামাল সরবরাহকারী। সরবরাহকারীদের দাবী প্রায় ১৬ কোটি টাকা পাওনা বকেয়া রেখে ফিডমিলটি বিক্রি করার পায়তারা চলছে। তাদের দাবী, তিন বছরের বেশি সময় ধরে বকেয়া টাকা পরিশোধ না করে টালবাহানা করছে প্রতিষ্ঠানটি। সর্বশেষ গত ১৫ মার্চ বকেয়া পরিশোধের কথা থাকলেও সেটি করা হয়নি। এতে করে বিপাকে পড়েছে কাঁচামাল সরবরাহকারীগণ। কেউ কেউ ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে দেউলিয়া হওয়ার পথে।

পাওনা টাকা পরিশোধে গড়িমসির অভিযোগ এনে গত ২২ আগস্ট ঢাকার একটি অফিসে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন এবং সর্বশেষ গত বুধবার (২৬ আগস্ট) দুপুরে প্রেস ক্লাব যশোর মিলনায়তনে পাওনাদার ২৪টি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করা হয়। এক রকম বাধ্য হয়েই ২৪টি প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করেছেন বলেন জানান পাওনাদাররা।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ভারতীয় ভিএইচ (ভেংকিস) গ্রুপ ২০১১ সালে যশোরে উত্তরা ফুডস এন্ড ফিডস নামে পোল্ট্রি ও ফিস ফিডের দুটি কারখানা স্থাপন করে। এ কারখানার কাঁচামালের জন্য ভিএইচ গ্রুপের মালিক দেশের ব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করে। এরপর বিভিন্ন সময় ৭০টি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান কারখানা দুটিতে কাঁচামাল সরবরাহ করে আসছেন। পাঁচ বছর আগ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটিতে ওই ৭০টি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৬ কোটি টাকা পাওনা হয়েছে। ২০১৬-১৭ সনে সরবরাহ করা বিভিন্ন কাঁচামালের টাকা এগুলো। এরইমধ্যে কর্তৃপক্ষ টাকা পরিশোধ না করে উৎপাদন কমিয়ে আনতে শুরু করলে সরবরাহকারীও মালামাল সরবরাহ বন্ধ করে দেয়।

গত ২২ আগস্ট ঢাকার একটি অফিসে দেশীয় পাওনাদারেরা সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময় করেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দীর্ঘদিন চেষ্টার পর ঢাকার লা মেরিডিয়ান হোটেলে ২০১৮ সনের নভেম্বর মাসের ২১ তারিখে কোম্পানিটির স্থানীয় কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ভেঙ্কিজ ফিড (ভারত) এর বোর্ড অব ডিরেক্টর মি. অমিত ওয়াদাহ্’র সাথে কাঁচামাল সরবরাহকারী পাওনাদারেরা মিটিং করার সুযোগ পায়। সেই মিটিংয়ে মি. অমিত ওই বছরের নভেম্বর মাস থেকেই টাকা দেয়া শুরু করবে এবং ডিসেম্বর মাসের মধ্যে বাকী টাকা পরিশোধ করে দিবেন বলে জানান। কথামতো, নভেম্বর মাসে কিছু টাকা দিলেও ডিসেম্বর মাসে আর কোন টাকা দেয়া হয়নি। এরপর কয়েকবার মিটিং ও ভারতীয় অফিসের সাথে ই-মেইলে যোগাযোগ করা হলেও দেবো দিচ্ছি বলে গড়িমসি শুরু করে।

একপর্যায়ে তিন বছর আগে কারাখানা দুটি বন্ধ করে ভারতীয় মালিকপক্ষ। এখন তারা প্রতিষ্ঠানের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বিক্রি করে ব্যবসা গুটিয়ে নিতে শুরু করেছে।

সংবাদ সম্মেলনে তুর করপোরেশনের মালিক পল্লব সমীর কুদরতে খুদা ব্রেজনেভ বলেন, কোম্পানিটি যশোরে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আমরা কাঁচামাল সরবরাহ করে আসছি। পাওনা আদায়ে তাদের সাথে আমাদের বহু দেনবার করা হয়েছে। বিষয়টি যশোরের জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারকে অবহিত করা হয়েছে। কোম্পানি এই পাওনা পরিশোধে গত ১৫ মার্চ কিছু ছাড়ের বিনিময়ে শোধ করার অঙ্গীকার করেন। কিন্তু তা করা হয়নি। এরপর জুন মাসে পরিশোধের সময় নেয়; কিন্তু প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেনি।

তিনি বলেন, বর্তমানে আমাদের দেশে পোল্ট্রিশিল্প একটি ঈর্ষণীয় পর্যায়ে এসেছে। গ্লোবালাইজেশনের এই যুগে দেশের এই সফল শিল্পে বিদেশি কোম্পানি এদেশে ব্যবসা করতে এসে সাধারণ ব্যবসায়ীদের সর্বশান্ত করে দিয়েছে।

বগুড়ার সততা ট্রেডার্সের মালিক একেএম আসাদুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন জেলার সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে আমরা পোল্ট্রি ও ফিস ফিডের কাঁচামাল সয়াবিন, ভুট্টা, ফিস অয়েল, আটা, ময়দা ইত্যাদি সরবরাহ করেছি। আমি নিজে তাদের কাছে ৬ কোটি ৪১ লাখ টাকা পাব। আমার কাছে যারা টাকা পাবে তারাও চাপ দিচ্ছে। এখন ব্যাংকসহ বিভিন্ন পাওনাদারদের কারণে বাড়িতে থাকায় দায় হয়ে পড়েছে। আমরা ওই টাকার জন্যে পথে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছি। অথচ, ভিএইচ গ্রুপ বিশ্বের প্রায় ৪৪টি দেশে এই ফিডের ব্যবসা করে কোটি কোটি টাকা মুনাফা অর্জন করছে। কিন্তু তাদের কাছে পাওনা টাকা পেতে বারবার যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া মিলছে না।

বকেয়া পাওনা পরিশোধে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের প্রধানমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী ও ভারতীয় হাইকমিশনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন এ সময় তিনি।

পাওনাদার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে সততা/ যুঁথি ট্রেডার্স ট্রেডার্স পাবে ৬ কোটি ৪২ লাখ টাকা, অ্যাগ্রো কনসার্ন পাবে ৬০.৪১ লাখ টাকা, তুর করপোরেশন পাবে ৪১ লাখ টাকা, বিএস অ্যাগ্রো ট্রেডিং পাবে ৭১.২২ লাখ টাকা, পিকে এন্টারপ্রাইজ পাবে ৩.৪৫ লাখ টাকা, কাজী অ্যাগ্রো লিমিটেড পাবে ৪.১৩ লাখ টাকা, ইনোভেট বিডি পাবে ৮.৫৫ লাখ টাকা, বিসমিল্লাহ ট্রেডার্স পাবে ৭৩ লাখ টাকা, এপিএল পাবে ৯.৪৮ লাখ টাকা, জেএনএস টেকনোলজি পাবে ১.৭৩ লাখ টাকা, নিউ পাবনা ট্রেডিং পাবে ৫০.৬০ লাখ টাকা, অলটেক বায়োটেকনোলজি পাবে ১৪.৭৬ টাকা, সেঞ্চুরি অ্যাগ্রো লিমিটেড পাবে ২৪.৫৫ লাখ টাকা, ভৈরব এন্টারপ্রাইজ পাবে ৬০ লাখ টাকা, সানশাইন অ্যাগ্রো পাবে ৯.৫৫ লাখ টাকা, মাহিন অ্যাগ্রো পাবে ২৬.৫৩ লাখ টাকা, এম্পেল এনিমেল কেয়ার পাবে ৬.৫০ টাকা,  টোটাল কার্গো ম্যানেজমেন্ট পাবে ১৭ লাখ টাকা ও সিগমা বাংলাদেশ পাবে ১৬.২৭ লাখ টাকা বলে জানানে হয়। এছাড়াও ইয়াকিন পলিমার লিমিটেড, মেসার্স খান এন্টারপ্রাইজ, ইয়ন গ্রুপ, মেসার্স মা খোদেজা ট্রেডার্স ছাড়াও আরো অনেকের টাকা রয়েছে বলে জানানো হয়।

টাকা বকেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে উত্তরা ফুডস অ্যান্ড ফিডসের অডিটর সন্দীপ তাভানি বলেন, গত মার্চ মাসে তাদের সমুদয় পাওনা বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে সেটি দেরি হয়ে গেছে। মালিকপক্ষ অবশ্যই টাকা পরিশোধ করবে।

সংবাদ সম্মেলনে তারা ছাড়াও বিএস অ্যাগ্রোর আশরাফুল আলম, পিকে এন্টারপ্রাইজের দিপা রাণী নাথ, ইয়ন গ্রুপের ফরিদুজ্জামান, ইনোভেট বিডির কাজল দত্তসহ বিভিন্ন জেলার ২৪টি প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারীরা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, যশোরের মণিরামপুর উপজেলায় ভিএইচ গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যারা পোল্ট্রি ও ফিস ফিড উৎপাদন করে বাজারজাত করে।

This post has already been read 3184 times!