Thursday 25th of April 2024
Home / uncategorized / ব্রয়লার মুরগির মাংস আমদানিতে সর্বোচ্চ কর ও শুল্ক নির্ধারণ জরুরি

ব্রয়লার মুরগির মাংস আমদানিতে সর্বোচ্চ কর ও শুল্ক নির্ধারণ জরুরি

Published at জুন ১০, ২০২০

মো. সাজ্জাদ হোসেন : দেশে পর্যাপ্ত ব্রয়লার মুরগির মাংস উৎপাদিত হওয়া সত্ত্বেও এক শ্রেণীর ব্যবসায়ি অধিক মুনাফা লাভের আশায় ব্রাজিল থেকে হিমায়িত ব্রয়লার মুরগির মাংস আমদানি করছেন। এ ধরনের আমদানির ফলে শুধু দেশীয় পোল্ট্রি শিল্পই নয় বরং এ শিল্পের সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত প্রায় ৬০ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকা আজ হুমকীর সম্মুখীন। মূলত: নিম্নোক্ত চারটি (৪) এইচএস কোডের আওতায় বাংলাদেশে হিমায়িত ব্রয়লার মুরগির মাংস আমদানি হয়ে থাকে-

নং পণ্যের বিবরণ এইচএস কোড বিদ্যমান কর শুল্ক প্রস্তাবিত কর শুল্ক
১. হিমায়িত মুরগির মাংস (সম্পূর্ণ মুরগি)

 

০২০৭.১২.১০ (২.৫ কেজি পর্যন্ত প্যাকেটজাত) কাস্টমস ডিডটি ২৫%, রেগুলেটরি ডিউটি ৩% এবং ভ্যাট ১৫%, AIT ৫%, AT ৫% কাস্টমস ডিডটি ২৫%, রেগুলেটরি ডিউটি ৩% সাপ্লিমেন্টারি ডিউটি ৪৫%, ভ্যাট ১৫%, AIT ১৫%, AT ৫% = সর্বমোট ১২৭.৭২%
২. হিমায়িত মুরগির মাংস (সম্পূর্ণ)

(২.৫ কেজির উপরে প্যাকেটজাত)

০২০৭.১২.৯০ কাস্টমস ডিডটি ২৫% এবং রেগুলেটরি ডিউটি ৩%, AIT ৪%, AT ৫%
৩. হিমায়িত মুরগির মাংস (মুরগির বিভিন্ন কর্তিত অংশ)

(২.৫ কেজি পর্যন্ত প্যাকেটজাত)

০২০৭.১৪.১০ কাস্টমস ডিডটি ২৫%, রেগুলেটরি ডিউটি ৩%, ভ্যাট ১৫%, AIT ৫%, AT ৫%
৪. হিমায়িত মুরগির মাংস (মুরগির বিভিন্ন কর্তিত অংশ)

(২.৫ কেজির উপরে প্যাকেটজাত))

০২০৭.১৪.৯০ কাস্টমস ডিডটি ২৫% এবং রেগুলেটরি ডিউটি ৩%, AIT ৫%, AT ৫%

প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ব্রাজিল প্রচুর পরিমানে হিমায়িত ব্রয়লার মুরগির মাংস রপ্তানী করে থাকে। ব্রাজিলের মুরগি- দামেও সস্তা কারণ সেখানে মুরগির খাদ্য তৈরির মূল উপকরণ ‘সয়াবিন’ ও ‘ভূট্টা’ প্রচুর পরিমানে উৎপাদিত হয়। আয়তনে ব্রাজিল বাংলাদেশের তুলনায় বহুগুণ বড়। চাষাবাদের জমি ছাড়াও বিশাল বনভূমি উজাড় করে দেশটি সয়াবিন, ভূট্টা, ইত্যাদি শষ্য উৎপাদন করছে। এর বিপরীতে বাংলাদেশে চাষাবাদের জমি অপ্রতুল। তাছাড়া বেশিরভাগ আবাদি জমি ধান উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। সুতরাং এটা কখনও আশা করা যায় না যে, পোল্ট্রি খাদ্যের জন্য প্রয়োজনীয় ভূট্টা ও সয়াবিনের পুরোটাই বাংলাদেশে চাষাবাদ করা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ পোল্ট্রি ইন্ডাষ্ট্রিজ সেন্ট্রাল কাউন্সিলের (বিপিআইসিসি) মতে- দেশের প্রাণিসম্পদ খাতের জন্য প্রয়োজনীয় মোট চাহিদার মাত্র ৫০ শতাংশ ভূট্টা দেশে উৎপাদিত হয়। অন্যদিকে দেশে সয়াবিন উৎপাদিত না হলেও চাহিদার প্রায় ৬৫ শতাংশ সয়াবিন অয়েল কেক/সয়াকেক ভোজ্য তৈল কোম্পানীগুলোর কাছ থেকে পাওয়া যায়। অর্থাৎ ফিড ইন্ডাষ্ট্রিতে মোট চাহিদার প্রায় অর্ধেক ভূট্টা ও ৩৫ শতাংশ সয়াবিন মিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করতে হয় বিধায় উৎপাদন খরচ বেশ খানিকটা বেড়ে যায়।

কাজেই দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশে পোল্ট্রি ফিডের উৎপাদন তুলনামূলকভাবে ব্যয়বহুল হওয়ার কারণে এদেশের পোল্ট্রি খামারিরা কোনভাবেই ব্রাজিলের খামারিদের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারবে না- যদি না আমদানিকৃত হিমায়িত ব্রয়লার মুরগির মাংসের উপর যৌক্তিক কর ও শুল্ক আরোপ করা হয় এবং পোল্ট্রি শিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামাল আমদানিতে সব ধরনের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর প্রত্যাহার করা না হয়।

প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য যে ব্রাজিল শুধু যে ব্রয়লার মুরগির বিভিন্ন কর্তিত অংশ (Chicken parts) আন্তর্জাতিক দরে বিক্রি করে তাই নয় বরং বিভিন্ন দেশে যে কর্তিত অংশগুলো বিক্রি হয়না সে ধরনের বাইপ্রোডাক্ট বা বাতিলকৃত কর্তিত অংশগুলোও আমাদের মত দেশে ডাম্পিং করে থাকে ব্রাজিল। যতটুকু জানা যায়, এ ধরনের একটি মামলায় পাশ্ববর্তী দেশ ভারতে এন্টিডাম্পিং একটি মামলার মুখোমুখি হয়ে পরাজয়ও বরণ করতে হয়েছে তাদের। তাছাড়া বিশেষজ্ঞদের অভিমত ব্রাজিলের লেয়ার ও ব্রিডার কাল বার্ডও (Layer & Breeder Cull birds) বিদ্যমান আইনের ফাঁক-ফোকর গলে বাংলাদেশে আমদানি হয়ে আসারও সুযোগ রয়েছে।

ব্রাজিলের মুরগির মাংস ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হালাল সার্টিফিকেশনের শর্তাবলী যথাযথভাবে পূরণ করে কীনা সে সম্পর্কেও অনেকের সন্দেহ রয়েছে। তাছাড়া দেশের অধিকাংশ মানুষ এবং আলেম-উলামা সমাজও ইসলামিক বিধান মতে ব্রাজিলের মুরগি জবেহ করা হয় কীনা সে সম্পর্কেও সন্দেহ পোষণ করে থাকেন।

এ প্রসঙ্গে দেশীয় বেকারি শিল্পের সুরক্ষায় গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের একটি অত্যন্ত ইতিবাচক সিদ্ধান্তের কথা এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে। দেশীয় বেকারি শিল্পের সুরক্ষার স্বার্থে আমদানিকৃত বিস্কুটের (এইচএস কোড # ১৯০৫.৩১.০০) ওপর ১২৭.৭২% হারে কর ও শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। ফলশ্রুতিতে দেশীয় বেকারি শিল্পে নতুন দিগন্তের সূচনা হয়েছে। আমদানিকৃত হিমায়িত ব্রয়লার মুরগির মাংস আমদানিতেও অনুরূপ হারে কর ও শুল্ক আরোপ করা হলে সুরক্ষা পাবে দেশীয় পোল্ট্রি শিল্প।

প্রসঙ্গত: উল্লেখ্য, কোভিড-১৯ মহামারির সংক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে ডিম, দুধ, মাছ, মাংস, টাটকা শাক-সব্জি, ফলমূল প্রভৃতি পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের উপর গুরুত্বারোপ করেছে ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’ এবং ‘জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা’ (এফএও)। অতএব দেশীয় পোল্ট্রি শিল্পের সুরক্ষা, প্রোটিনসমৃদ্ধ প্রাণিজ আমিষের সরবরাহ নিরবচ্ছিন্ন রাখা, স্বাস্থ্য-সম্মত হালাল পোল্ট্রি মাংসের সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা, সর্বোপরি পোল্ট্রি শিল্পের সাথে জড়িত প্রায় ৬০ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকার কথা বিবেচনায় নিয়ে ব্রাজিল থেকে আমদানিকৃত হিমায়িত ব্রয়লার মুরগির মাংসের ওপর ১২৭.৭২% হারে কর ও শুল্ক আরোপ হয়ত খুবই যৌক্তিক।

লেখক: যোগাযোগ ও মিডিয়া উপদেষ্টা, বিপিআইসিসি।

This post has already been read 2801 times!