Friday 29th of March 2024
Home / পরিবেশ ও জলবায়ু / বাঘ বাঁচলে সুন্দরবন তথা বাংলাদেশ বাঁচবে – বনমন্ত্রী।

বাঘ বাঁচলে সুন্দরবন তথা বাংলাদেশ বাঁচবে – বনমন্ত্রী।

Published at জুলাই ২৯, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক: পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, বাঘ সুন্দরবনের রক্ষক। এই বাঘের উপস্থিতির কারণেই সুন্দরবন এত বৈচিত্র্যময় ও আকর্ষণীয়। সুন্দরবনে বাঘ না থাকলে সেখানকার সামগ্রিক ইকোসিস্টেম ধ্বংস হয়ে যাবে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা তথা ঝড় ঝঞ্জা থেকে দেশকে বাঁচাতে সুন্দরবনের বিকল্প নাই। কাজেই সুন্দরবন তথা বাংলাদেশকে রক্ষা করতে হলে বাঘ সংরক্ষণের কোন বিকল্প নেই। এজন্য সুন্দরবনে বাঘের পরিমাণ দ্বিগুণ করতে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হচ্ছে।

আজ বুধবার (২৯ জুলাই) “বাঘ বাড়াতে করি পণ, রক্ষা করি সুন্দরবন’’ প্রতিপাদ্য ধারণ করে বিশ্ব বাঘ দিবস-২০২০ উপলক্ষে অনলাইন আলোচনা সভায় সরকারি বাসভবন হতে সংযুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন এসব কথা বলেন।

বনমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে সুন্দরবনে প্রায় ১১৪টি বেঙ্গল টাইগার আছে। বন উজাড় ও অবৈধ শিকারের ফলে বেঙ্গল টাইগার বিশ্বে “বিপদাপন্ন” প্রজাতি হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। বর্তমানে সারা বিশ্বে প্রকৃতিতে বিদ্যমান বন্য বাঘের সংখ্যা প্রায় ৩৮৯০টি। বাঘ বিশেষজ্ঞগণের মতে, বাঘের সংখ্যা দ্রুত কমে যাওয়ার এই প্রবণতা চলমান থাকলে আগামী কয়েক দশকে পৃথিবী থেকে বাঘ হারিয়ে যাওয়ার আশংকা রয়েছে।

সুন্দরবনের বাঘ রক্ষার জন্য বন অধিদপ্তর তথা পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে বনমন্ত্রী বলেন, আবাসস্থলের উন্নয়ন ও নিয়মিত টহল প্রদান করে বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য যথোপোযুক্ত উদ্যোগ গ্রহণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকার বাঘের আবাসস্থল উন্নয়ন ও সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বর্তমানে সুন্দরবনের প্রায় ৫২% এলাকা অভয়ারণ্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে উভয় সুন্দরবনের বাঘ সংরক্ষণ, বাঘ ও শিকারী প্রাণী পাচার বন্ধ, দক্ষতা বৃদ্ধি, মনিটরিং ইত্যাদির জন্য ২০১১ সালে একটি সমঝোতা স্মারক এবং একটি প্রোটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছে।

বন মন্ত্রী বলেন, বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করে সংবিধানে বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী (সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা) আইন ২০১২ অনুযায়ী বাঘ ও হরিণসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর শিকারীদের শাস্তি প্রদান করা হচ্ছে। সুন্দরবনের বাঘ রক্ষার লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে টাইগার কোঅর্ডিনেশন কমিটি গঠন করা হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকারের আমলে বাঘসহ অন্যান্য বন্যপ্রাণীর আক্রমণে জানমালের ক্ষতিগ্রস্থ ৫৯টি পরিবারের মধ্যে ৫১,৫০,০০০/- (একান্ন লক্ষ পঞ্চাশ হাজার) টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হয়েছে।

বনমন্ত্রী বলেন, এছাড়াও বাঘ সংরক্ষণের জন্য দ্বিতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশ টাইগার এ্যাকশন প্লান ২০১৮-২০২৭  প্রণয়ন করেছে। লোকালয়ে বাঘ আসা মাত্র খবরাখবর আদান-প্রদান ও সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সুন্দরবনের চারপাশের গ্রামগুলিতে বনবিভাগ ও স্থানীয় জনসাধারনের সমন্বয়ে টাইগার রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। সুন্দরবন ও বাঘ সংরক্ষণের জন্য সুন্দরবনের চারটি রেঞ্জে নিয়মিত স্মার্ট প্যাট্রোলিং কার্যক্রম চলছে। মন্ত্রী বলেন, বাঘ বাঁচাতে ও বাড়াতে তার বাসস্থান, খাবার ও বাইরের শিকারীদের কবল থেকে মুক্ত করতে প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আসুন আমরা নিজেদের অস্তিত্বের স্বার্থেই সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সুন্দরবনের রক্ষক বাঘকে বাঁচাই।

বন অধিদপ্তরের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমির হোসাইন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অনলাইন সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী হাবিবুন নাহার, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব জিয়াউল হাসান এনডিসি এবং অতিরিক্ত সচিব ড. মো. বিল্লাল হোসেন । বিষয়ের বক্তব্য রাখেন গাজীপুর শেখ কামাল ওয়াইল্ডলাইফ সেন্টারের পরিচালক মো. জাহিদুল কবির, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. এম এ আজিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডক্টর আনোয়ারুল ইসলাম, প্রকৃতি ও জীবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মুকিত মজুমদার বাবু, আই ইউ সি এন এর মো. রকিবুল আমীন, উপবন সংরক্ষক ড. আবু নাসের মোহসীন হোসেন প্রমুখ।

This post has already been read 2998 times!