Friday 29th of March 2024
Home / অর্থ-শিল্প-বাণিজ্য / বাঁশ-বেতের ঋষিপাড়ায় থমকে আছে জীবনযাত্রা

বাঁশ-বেতের ঋষিপাড়ায় থমকে আছে জীবনযাত্রা

Published at জুলাই ২৫, ২০২০

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা): খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলা সদরের গোলনা গ্রামে ঋষিপাড়ার মানুষেরা এখন প্রচন্ড অর্থ সংকটে ভুগছেন। অথচ একসময় বাশঁ আর বেতের জিনিস তৈরি করেই চলতো তাদের জীবন জীবিকা। কিন্তু আধুনিক যুগে এসে বাঁশ-বেতের সামগ্রির কদর হ্রাস পেয়েছে। প্রানঘাতি করেনার প্রভাবে তা আরও তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। ফলে ঋষিপাড়ার মানুষের জীবনযাত্রা প্রায় থেমে গেছে।

ডুমুরিয়ার গোলনা গ্রামের বাঁশ বেতের কারিগরদের ঋষি সম্প্রদায় হিসেবেই চেনে সবাই। এ কারণে এই এলাকাটির স্থানীয় নামই হয়েছে ঋষিপাড়া। ঋষিপাড়া শুধু ডুমুরিয়ার গোলনা গ্রামেই নয় প্রায় সবকটি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে রয়েছে বাঁশ বেত দ্বারা বিভিন্ন কাজ করা কারিগর ঋষি সম্প্রদায়। একদিকে করোনা অন্যদিকে আধুনিক জীবনযাত্রায় বাঁশ বেতের তৈরিকৃত পন্যেও চাহিদা কমতে থাকায় হুমকির মধ্যে পড়েছে এর সাষে সংশ্লিষ্ঠ ঋষি পরিবারগুলো ।

জানা যায়, এক সময় এখানে বেত দিয়ে ধান মাপার পালা, ধামা, সের, ঢোল বানানো হতো আর বাঁশ দিয়ে বানানো হতো ঢালা, কুলা, চালনি, পানডালা, ধানের গোলা, এবং বিভিন্ন ধরণের ঝুঁড়ি, চাটাই, খেলনা, কলমদানি, ফুলদানি, গাছের ঝাকা, হাংকোড়ো, গরুর ঠুসি, বাঁশি, তরকারির ঢাকনা ইত্যাদি। পরবর্তীতে আধুনিক মানুষের কাছে কুলা, পালা, ধামার ব্যবহার কমতে থাকে। চলে আসে প্লাস্টিক ও ধাতব জিনিসের ব্যবহার। বাধ্য হয়েই এ পাড়ার লোকেরা ঝোঁকেন শৌখিন পণ্য নির্মাণে। কিন্তু এখন বাঁশ পাওয়া গেলেও বেতের নাগাল পাওয়া যায় না কোথাও। ডোবা, নালা, খাল, বিল ও পুকুর ভরে গেছে অট্টালিকায়। ঋষি সম্প্রদায়ের লোকদের তেমন ধানের জমি নেই বা বাপ-দাদার অর্থনৈতিক সচ্ছলতা নেই।

গোলনার এই এলাকায় ৫৫টি ঋষি পরিবার রয়েছে, যারা সবাই কোনও না কোনোভাবে বাঁশ-বেতের কাজের সঙ্গে জড়িত। পাশের পাড়ায়ও রয়েছে আরও প্রায় ১শ পরিবার। যেখানকার নারী-পুরুষরা বাড়িতে বসে এসব কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। আবার অনেকেই বাড়তি আয় করে।

বংশ পরম্পরায় আজও এ কাজে জীবীকা নির্বাহ করছেন কালিদাস মনু। ছোট বেলায় খেলার ছলে কখন যে এই কাজ শিখে নিয়েছেন তা নিজেই জানেন না। কালিদাস মনু বলেন, ‘এখন আর এ কাজে তেমন পয়সা হয় না। কিন্তু কী করবো। বাপ-দাদার পেশা, ছাড়তেও পারি না। আবার নিজে পড়লেখা জানি না। কৃষি কাজ করবো, তেমন জমিও নেই। মাঝে মধ্যে বড় বড় অর্ডার আসে। তখন এলাকায় যারা যারা কাজ করে, তাদের সবাইকে কাজ দেই। যা লাভ হয়, সবাই ভাগ করে নেই।

একই এলাকার পাচু দাসের পৈত্রিক পেশা বাঁশ-বেতের কাজ। তিনিও ৩৫ বছরের অধিক সময় ধরে এই পেশায় রয়েছে। তিনি জানান, কী করবো, অন্য কাজ তো শিখিনি। বাকি জীবনটা এই কাজই করে যাবো।

উপজেলার সদর এলাকার কৃষক মোঃ সিরাজুল ইসলাম খান জানান, গাছ লাগানোর পরে ভয় থাকে গরু-ছাগলে খেয়ে ফেলে কিনা। সেজন্য বাঁশের খাচা দিয়ে রাখলে ভালো হয়। তাছাড়া গরুর মুখে ঠুসি দিয়ে রাখলে অন্যের ফসলে মুখ দিতে পারে না। এই এলাকা শুধু নয়, এই পাড়ার বাঁশ-বেতের পণ্য খুলনা জেলাসহ আশপাশের এলাকায়ও যায়। এখনও এই পণ্যের চাহিদা রয়েছে। তবে আধুনিক সভ্যতার ছোয়া এবং প্লাষ্টিক পন্যের দৌরাত্বে দিন দিন এই বাঁশ-বেতের পণ্য হারিয়ে যাচ্ছে।

This post has already been read 1481 times!