Tuesday 23rd of April 2024
Home / খাদ্য-পুষ্টি-স্বাস্থ্য / ফল-সবজি ও পুষ্টি : রাসায়নিক ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ

ফল-সবজি ও পুষ্টি : রাসায়নিক ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ

Published at জুন ৪, ২০২০

ড. মো. মনিরুল ইসলাম : কোন গবেষণালব্ধ ফলাফল বা বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য-উপাত্ত ব্যতিরকে কিছু গণমাধ্যম ও এক শ্রেণীর সংগঠন বা ব্যক্তি কর্তৃক  দুধ, মৌসুমি ফল, শাক-সব্জিসহ মাছে ফরমালিন ব্যবহারের নেতিবাচক প্রচারণার ফলে কিছু মানুষ শুধু ফল খাওয়াই ছেড়ে দেয়নি, চাষি পর্যায়ে আর্থিক ক্ষতিসহ রপ্তানি বাণিজ্যে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়েছে এবং হচ্ছে। সেজন্য জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে জানোনো যাচ্ছে, আপনারা নির্ভয়ে ফল খান, দেশী-বিদেশী ফল (যেমন : আম, কলা, আনারস, লিচু, আফেল, কমলা, মাল্টা ইত্যাদি) সংরক্ষণে ফরমালিন ব্যবহার করা হয়না।  তাছাড়া কীটনাশক নিয়েও ভ্রান্ত ধারণা আছে, আধুনিক কৃষিতে কীটনাশক ব্যবহার ব্যতীরকে চাষাবাদ কল্পনাতীত। কীটনাশক এর শুধু ক্ষতিকর দিক নিয়েই বেশী আলোচনা করি, মনে রাখা দরকার, কীটনাশক কিন্তু ফসলের অনেক ধরণের ক্ষতিকর ফাংগাসসহ অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদান বিনষ্ট করে খাদ্য নিরাপদ করার মাধ্যমে আমাদেরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। তাই নীরোগ ও সুস্থ  থাকতে রোগ-প্রতিরোধ খাবার হিসাবে ফল-মুল, শাক-সব্জির কোন বিকল্প নেই।

আমে রাসায়নিকের ব্যবহার

প্রতিটি আমের পরিপক্কতার একটি নির্দিষ্ট সময় আছে। তবে, এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন যে বিশ্ব জলবায়ু দ্রুত পরিবর্তনশীল; তাই বছরভিত্তিক  জলবায়ুর এরুপ আচরণগত বৈশিষ্ট্যের কারণে/প্রভাবে উপরে উল্লেখিত পরিপক্কতার সময় ২-৫ দিন আগে বা পরে হতে পারে। উল্লেখ্য যে আম একটি ক্লাইমেকট্রিক ফল অর্থাৎ গাছ থেকে আহরণ/পারার পর ও পাঁকে। তাই বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে যে সব আম গাছে পাকে এগুলোর চেয়ে পূর্ণ পরিপক্কতা লাভকারী আম সমূহ যদি ৫-৭ দিন পূর্বে গাছ থেকে আহরণ করা হয় অপেক্ষাকৃত সেসব আম গাছে পাকা আমের চেয়ে অধিক মিষ্ট হয়, সাথে কোন প্রকার স্বাস্থ্য ঝুঁকিও নেই । বিশ্বের বিভিন্ন দেশ যেমন অষ্ট্রেলিয়া. মিশর, ভারত, ফিলিপাইন, দক্ষিণ আফ্রিকা, সুদান, তাইওয়ান, যুক্তরাষ্ট্র, সেনেগাল ইয়েমেন মরক্কো প্রভৃতি দেশ বিভিন্ন ফল পাকাতে ইথোফেন ব্যবহার করে থাকে। তবে তারা ইথিলিন বা রাইপেনিং চেম্বার ব্যবহার করে থাকে। আমাদের দেশেও ইথিলিন চেম্বার স্থাপন অতীব জরুরী ও সময়ের দাবী।

বিদেশে রপ্তানির ক্ষেত্রেও পরিপূর্ণ পাকা আম শিপমেন্ট করা প্রায় অসম্ভব। তবে বেশী অপরিপক্ক আম আহরণ করে বাজারজাত করা হলে জরিমানা করা যুক্তিযুক্ত; কিন্তু আম ধ্বংস করা কোনক্রমেই ঠিক নয়। কেননা অনেকে ক্ষেত্রেই পাকা আমের চেয়ে কাঁচা আম অধিকতর পুষ্টি সমৃদ্ধ।

তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা বিপদ আসবেই, হয়তো এক এক সময় এক রুপে বা নানারুপে। দূর্যোগ মোকাবেলা করে এগিয়ে যাওয়াই হলো সফলতা বা কৃতিত্ত্ব। যেমনঃ আম ঝড়ে পরবেই, কিন্তু এসব মোকাবেলায় যাতে কিছুটা হলে তাৎক্ষনিক ক্ষতি কাটানো যায় সেজন্য কিছু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। যেমন  ফল  বা আম উৎপাদন এলাকার চাষীসহ স্থানীয় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের নিয়মিত প্রত্রিয়াজাতকরণ (যেমন: আচার, আমসত্ত্ব, ম্যাংগোবার, মোরোব্বা তৈরী ইত্যাদি) বিষয়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাছাড়া বিজ্ঞানীদের এ বিষয়ে গবেষণা কার্যক্রম বাড়াতে হবে।

আমে ক্যালসিয়াম কার্বাইডের ব্যবহার

ইথোফেন যেমন ইথিলিন গ্যাস নির্গমন করে , কার্বাইড তেমনি এসিটিলিন গ্যাস নির্গমন করে এবং একইভাবে ফল পাকায়।  তবে কার্বাইড মুলতঃ নিষিদ্ধ একটি রাসায়নিক। শিল্প-কারখানায় ব্যবহারের জন্য সীমিত আকারে কার্বাইড আমদানি করা হয়। এনালাইটেকেল বা ল্যাবেরটরী গ্রেড কার্বইিড এর উচ্চ মুল্যের কারনে চোরাই পথে আসা ইনডাষ্ট্রিয়াল গ্রেড কার্বাইড আমে ব্যবহার করা হয় এবং এতে সামান্য পরিমানে ভারী ধাতু আর্সেনিক ও কিছু ফসফরাস থাকে। যেহেতু আর্সেনিক দেহের জন্য ক্ষতিকর বলে গন্য করা হয় সেজন্য মৌসুমের পূর্বে বাজারজাতকৃত আম  ক্রয় করা অনুচিত। মার্চ-এপ্রিল সময়ে যে সমস্ত আম পাওয়া যায় তার শতভাগ কার্বাইড দিয়ে পাকানো হয়। সেজন্য রাসায়নিক মুক্ত(কার্বাইড) মুক্ত  পাকা আম খেতে ২৫ মের পূর্বে ক্রয় পরিহার করতে হবেএবং সরকার কর্র্তৃক মার্চ- এপ্রিল মাসে কোন প্রকার আম যেন আমদানি না হয় সেজন্য উক্ত ২ মাস এলসি বন্ধের ব্যবস্থা করতে হবে। কার্বাইড দিয়ে পাকানো আম খেলে তাৎক্ষনিক প্রতিক্রিয়ায় মুখে ঘা ও ঠোট ফুলে যাওয়া,  শরীরে চুলকানি, পেট ব্যথা, ডায়রিয়া, পেপটিক আলসার, শ্বাসকষ্ট, মস্তিকে পানি জমা জনিত প্রদাহ, মাথা ঘোরা, ঘুম ঘুম ভাব, মহিলাদের বিকলাঙ্গ শিশু জন্ম ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে ।

ফলে ফরমালিনের ব্যবহার

প্রকৃতপক্ষে, ফরমালিন হচ্ছে অতি উদ্বায়ী ও অতি দ্রবণীয় একটি বর্ণহীন ও ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত রাসায়নিক। ফল-মুল শাক সব্জি হচ্ছে ফাইবার অর্থাৎ আঁশ (Fibre) জাতীয় খাবার, তাই ফরমালিন  ফল সংরক্ষণ বা পাঁকাতে কোন ভূমিকা রাখেনা। ফল-সব্জিতে খুবই সামান্য প্রোটিন থাকায় ফরমালিন প্রয়োগ করা হলে কোন বন্ডিং সৃষ্টি করেনা, তা উবে চলে যায়। তাছাড়া ফল-মূলে প্রাকৃতিকভাবেই নির্দিষ্ট মাত্রায় ফরমালিন (৩-৬০ মিলিগ্রাম/কেজি) বিদ্যমান থাকে। ইউরোপিয়ান ফুড সেফইট অথোরটি (EFSA) এর মতে একজন মানুষ দৈনিক ১০০ পিপিএম পর্যন্ত ফরমালিন কোন প্রকার স্বাস্থ্য ঝুঁকি ছাড়াই গ্রহণ করতে পারে। অপরদিকে বহুল ব্যবহৃত জেড-৩০০ ফরমালডিহাইড মিটার-টি ছিল প্রকৃতপক্ষে বাতাসে ফরমালডিহাইড পরিমাপক। যদিও ক্রটিপূর্ণ বা অনুপযুক্ত মিটারের মাধ্যমে ফরমালিন পরীক্ষা করে সে সময় হাজার হাজার টন আমসহ অন্যান্য ফল ধ্বংস করা হয়েছিল।

ফল  পাকানো এবং সংরক্ষণে ইথোফেনের ব্যবহার

ইথোফেন বিভিন্ন নামে পাওয়া যায়। তবে যে নামেই পাওয়া যাক না কেন এর মূল উপাদান হচ্ছে ২ -ক্লোরো ইথাইল ফসফনিক এসিড। তবে আমাদের দেশে রাইপেনিং চেম্বার বা ইথিলিন চেম্বার না থাকায় ফলে পাকাতে উক্ত রাসায়নিক ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে বা স্প্রে করে  ব্যবহার করা হয়। ফলে দেখা যায় যে এক্ষেত্রে সমভাবে টমেটো, কলা, পেঁপে  বা আম একই রং ধারন করেনা। অন্যদিকে উন্নত বিশ্বে রাইপেনিং চেম্বার ব্যবহার করে ইথোপেন গ্যাস আকারে ব্যবহারের ফলে সেসব ফল পুরোপুরি একই রংয়ের বা জমজ ভাই-বোনের মতো দেখতে মনে হয়। তবে পাকানোর পদ্ধতিগত পার্থক্য থাকলেও  এতে কোন স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই।

ইথোফেন একটি বিশ্ব সমাদৃত ও বহুল ব্যবহৃত অত্যন্ত নিরাপদ রাসায়নিক. যা ফলে প্রাকৃতিক ভাবেই বিদ্যমান থাকে। সেজন্য, ফল পরিপক্কতা লাভের সময়ে বিভিন্ন ফলে সামান্য পরিমান ইথোফেন  গ্যাস তৈরী হয়; ফলশ্রুতিতে ফলের অভ্যান্তরে  বিদ্যমান অনেকগুলো জিন তড়িৎ সচল হয়। তখন ফলের রং পরিবর্তন, মিষ্টতা ও গঠনবিন্যাস (Texture) এ পরিবর্তন আসে এবং ফল পাকতে শুরু করে। কৃষকের মাঠ হতে সংগ্রহকৃত নমুনা. বাজারজাত পর্যায়ের  নমুনা ও গবেষণাগারে বিভিন্ন মাত্রায় ইথোফেন (২৫০-১০০০০ পিপিএম)  সরাসরি স্প্রে করার পর  সকল পরীক্ষায় দেখা গেছে যে  ইথোফেন প্রয়োগের অব্যাহতি পর হতেই প্রয়োগকৃত ফলের দেহ  থেকে তা দ্রুত বের হয়ে যায় এবং ২৪ ঘন্টার মধ্যেই তা Codex Allimentary Commission (FAO/WHO) কর্তৃক মানব দেহের জন্য নির্ধারিত  সর্বোচ্চ গ্রহনীয় মাত্রার (MRL 2  পিপিএম ) বেশ নীচে চলে আসে। আরো উল্লেখ্য যে , শুধুমাত্র মানবদেহের জন্য নির্ধারিত গ্রহণযোগ্য সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রা MRL ছাড়াও ADI (Acceptable Daily Intake) এর মাত্রার ওপরেও ইথোফেনের ক্ষতিকর প্রভাব নির্ভর করে। CODEX/FSSAI এর সুপারিশ মোতাবেক একজন মানুষ কোন প্রকার স্বাস্থ্য ঝুঁকি ছাড়া তার প্রতি কেজি দৈহিক ওজনের  বিপরীতে প্রতিদিন ০.০৫ পিপিএম  গ্রহণ করতে পারে। অর্থাৎ  যদি একজন মানুষের ওজন ৬০ কেজি হয় তাহলে সে সর্বোচ্চ (৬০ x ০.০৫) ৩ পিপিএম ইথোফেন প্রতিদিন গ্রহণ করতে পারবে। উদাহরনস্বরুপ বলা যায়, যদি কোন ফলে প্রতি কেজিতে ০.৫০ পিপিএম ইথোফেন অবশিষ্টাংশ পাওয়া যায়, তাহলে কোন  ব্যাক্তিকে নুন্যতম দৈনিক ৬ কেজি ফল খেতে হবে।

আমদানীকৃত আপেল

অন্যান্য ফলের ন্যায় আপেলেও ফরমালিন ব্যবহার করা হয়না। তবে আমদানিকৃত আপেল দীর্ঘদিন সতেজ রাখার জন্য সাধারণত ফুড গ্রেড বা ইডিব্ল (তরল ও কঠিন)  প্যারাফিন প্রয়োগ করা হয় । কঠিন বা  তরল প্যারাফিন যে কোন মাত্রায় খাদ্যের সাথে মানবদেহে প্রবেশ  করলেও তা কোন ক্ষতিকর বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে না বা হজম প্রক্রিয়ায় অর্র্ন্তভুক্ত হয় না, ফলে এটি সম্পূর্ণ অপরিবর্তিত অবস্থায় পুনরায় শরীর হতে বেরিয়ে যায়। সুতরাং এসব মোমযুক্ত/প্যারাফিনযুক্ত আমদানিকৃত আপেল ভক্ষণ নিরাপদ। আরও উল্লেখ্য যে বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত নব নব উদ্ভাবনের মাধ্যমে শুধু খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। পণ্যের মান বৃদ্ধি ও  পঁচনকে দীর্ঘায়িত করার জন্য নব নব বিভিন্ন প্রযুক্তিও উদ্ভাবন করে চলেছে। বর্তমানে প্যারাফিন ওযাক্সের পাশাপাশি কৃষিজ উপজাত যেমন-  ফল-মূলের খোসা, কান্ড, পাতা, গাছের প্রাকৃতিক নির্যাস ব্যবহার করে অত্যন্ত পাতলা অবরণ সমৃদ্ধ ফিল্ম তৈরী করে আপেল সহ অন্যন্য ফলের গায়ে ওয়াক্স হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এধরণের ওয়াক্স একদিকে যেমন ফল-কে সতেজ রাখতে সাহায্য করছে তেমনি পরিবেশকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করছে।

প্যারাফিন ওয়াক্স প্রলেপ যুক্ত আপেল।

হর্টিকালচার ক্রপস তথা ফল-সব্জিতে ক্ষেত্রভেদে ৪০-৯৮ ভাগ পানি বিদ্যমান থাকে। তাই ব্যাপকভাবে যাতে ওজন হ্রাস না হয়, সেজন্য ওয়াক্স ব্যবহার করা হয়। উল্লেখ্য যে প্রকার/জাত ভেদে ’হরটিকালচার ক্রপ’ এর ক্ষেত্রে প্রতিদিন ৫-১০ গ্রাম ওজন কমে। তাছাড়া চকচকে-তকতকে ভাব বজায়, ফাংগাস/ছত্রাক এর আক্রমন থেকে রক্ষা, দীর্ঘদিন সংরক্ষণ, কোল্ড  ষ্টোরেজ এ সংরক্ষণকালীন সংবেদনশীলতা রোধ, আর্দ্রতার অপচয় রোধ ও অন্যান্য বাহ্যিক আঘাত রোধ-সহ রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু রোধ করার জন্য ইডিব্ল প্যারাফিন ওয়াক্স বা ইডিপিল ব্যবহার করা হয়। আপেলে ব্যবহৃত ওয়াক্স একটি খাওয়ার যোগ্য মোম, এতে কোন স্বাস্থ্য ঝুঁকি নেই।

বাজারে প্রাপ্ত আঙ্গুর

বাজারে প্রাপ্ত আমদানীকৃত  আঙ্গুর  নিয়েও মানুষের মাঝে অস্থিরতা বিরাজমান। পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, আধুনিক কৃষি ও কৃষি পণ্য কীটনাশক ও প্রিজারভেটিবস ব্যবহার ছাড়া উৎপাদন, বাজারজাতকরণ ও সংরক্ষণ করা প্রায় অসম্ভব । মানুষ জ্বর-সর্দি-কাশি বা জীবাণূ দ্বারা আক্রান্ত হলে যেমনি ঔষধ খাওয়ার প্রয়োজন হয়; তেমনি ফসলের পোঁকা-মাকড় দমন, ছত্রাকের আক্রমন রোধ ও নির্দিষ্ট সময়ান্তে সতেজ রাখার জন্য প্রিজারভেটিবস প্রয়োজন। আঙ্গুরে মূলতঃ ছত্রাকনাশক ব্যবহার করা হয়; এর কার্যক্ষমতা বেশী সময় থাকেনা, খাওয়ার পূর্বে ভালভাবে ধুয়ে নিলে কোন স্বাস্থ্য ঝুঁকিও থাকেনা। তাছাড়া শিপমেণ্টের পূর্বে সালফার ডাই অক্সাইড ব্যবহারে বাস্পশোধণ করা হয়  ও পরিবহণের সময় কার্টুনে সালফার ডাই অক্সাইড প্যাড ব্যবহার করা হয়।

অনেকেই আংগুরের গায়ে বা ত্বকের বাইরের অংশে সাদা পাউডার জাতীয় পদার্থ দেখে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়েছে বলে মনে করে অজানা অস্বস্তিতে ভোগেন। প্রকৃতপক্ষে আংগুরের গায়ে  সাদা পাউডার জাতীয় যে পদার্থ দেখা যায়, তা একেবারেই প্রাকৃতিক এবং তা  ’ওল্ড ডাস্ট’, ’ব্লুম বা ব্লাস’,  এসিডোফাইলাস(ব্যাকট্রেরিয়াম) নামে পরিচিত, যা একটি প্রাকৃতিক প্রলেপ।এটা  আর্দ্রতা রোধসহ  আংগুরকে পঁচন ও পোকা-মাকড়ের হাত থেকে রক্ষা করে । তাছাড়া মদ তৈরীর প্রাথমিক পর্যায়ে ফারমেন্টশেন এ সহায়তা করে। এ ধরনের ব্লুম পাম জাতীয় ফলেও দেখা যায়।

সব্জিতে কীটনাশক এর ব্যবহার

একদিকে আমাদের দেশে দিনদিন কৃষি জমি  হ্রাস পাচ্ছে, অপরদিকে জনসংখ্যার  চাপ। জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও নিয়ন্ত্রিত  জীবন-যাপনের চাহিদা মেটানোর  লক্ষ্যে বহুমাত্রায় বেড়েছে শাক-সব্জির চাহিদা। আবার চাহিদা বৃদ্ধির সাথে উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে শাক-সবজির ফলন বাড়াতে অনিয়ন্ত্রিতভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে নানাবিধ কীটনাশক। মাত্রাতিরিক্ত কীটনাশকের  ব্যবহার একদিকে পরিবেশের অনেক প্রয়োজনীয় কীটপতঙ্গ ধ্বংস করে পরিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব ফেলছে, ঠিক তেমনি কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ মানুষের দেহে প্রবেশের মাধ্যমে মানবদেহের বিভিন্ন ক্ষতিসাধন করছে বলে জনমনে এক ধরণের আতঙ্ক বিরাজ করছে।

গবেষণা ফলাফলে দেখা যায় যে, বিভিন্ন সব্জি উৎপাদন এর ক্ষেত্রে প্রয়োগকৃত বালাইনাশক এর বিষক্রিয়া বিষয়ে অহেতুক আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ফসলে প্রয়োগকৃত বিভিন্ন কীটনাশক/বালাইনাশক/ছত্রাকনাশক  সময় অতিবাহিত হওয়ার সাথে সাথে স্বয়ংক্রিয় প্রক্রিয়ায় বিলুপ্ত হয়ে যায়। দেখা গেছে যে, সব্জি ভালভাবে ধৌত করলে ও  গড়ে ১০০০ সেঃ তাপমাত্রায় রান্না করা হলে ২/১ টি ব্যতিক্রম ছাড়া বেশীরভাগ কীটনাশকের মাত্রা সহনীয় মাত্রার মধ্যে চলে আসে বা কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ সম্পূর্ণভাবে দূরীভুত হয়। তবে খাদ্য হিসাবে ব্যবহার বা গ্রহণের পূর্বে ভোক্তাদের অবশ্যই সর্তকর্তা অবলম্বন করতে হবে ।  যেমন ঃ

১. বেশীরভাগ কীটনাশক পানিতে দ্রবনীয়, তাই রান্নার পূর্বে  চলমান বা প্রবাহমান পানিতে এবং অথবা পানি কয়েকবার অদল-বদল করে শাক-সব্জি ধৌত করে নিতে হবে ;

২. যে সমস্ত ফল/সব্জি ফাংগাস বা ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত  তা ক্রয় করা থেকে বিরত থাকতে হবে বা  বা  ফেলে     দিতে হবে; তাছাড়া রাসায়নিকের তীব্রতা রোধে পাতা জাতীয় সব্জির বাইরের পাতা ফেলে দিতে হবে। যেমন  : বাঁধাকপি, লেটুস ইত্যাদি;

৩. অধিকতর সতর্কতা স্বরূপ বাজার বা বাগান হতে সংগ্রহকৃত যে কোন সব্জি বা ফসল ইত্যাদি খাদ্য হিসেবে  গ্রহণের পূর্বে সম্ভব হলে বাজার হতে ফল/সবজি ক্রয়ের পর ১-২ দিন সাধারন তাপমাত্রায়  খোলা জায়গায় রেখে দিয়ে অতঃপর খেতে হবে।

৪. বেশীরভাগ কীটনাশক জটিল যৌগের সংমিশ্রণ, ফলে উচ্চ তাপে স্থায়ী হয়না; সেজন্য কীটনাশক ঝুঁকি এড়াতে ১০০০ সেন্টিগ্রেড বা এর উপরের তাপমাত্রায় রান্না করা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রাকৃতিক দূর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশের রয়েছে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা। অতীতে যেমনি প্রতিটি দূর্যোগ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সক্ষমতা দেখিয়েছে। তাই এবারও নিঃসন্দেহে বলা যায়, কৃষি প্রিয় মাননীয় প্রধাণমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় ও সমযের সাহসী যোদ্ধা সুযোগ্য কৃষি মন্ত্রীর সার্বিক  তত্ত্বাবধানে কৃষি আবার প্রাণ ফিরে পাবে।  ইতোমধ্যে মাননীয় কৃষিমন্ত্রীর সার্বক্ষণিক তদারকি ও সময়মত বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে হাওর এর ধান কাটা সহ অন্যান্য বিষয়গুলো দ্রত সমাধান সম্ভব হয়েছে। আশা করা যায়, কৃষকদের সময়মত সার, বীজ ও প্রণোদণা যথাসময়ে যথাযথভাবে কৃষকদের কাছে পৌঁছানো গেলে দেশের কৃষি ও কৃষক  আবার ঘুরে দাড়াবে। দেশের অর্থনীতিসহ খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। এ ব্যাপারে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।

লেখক: পরিচালক (পুষ্টি), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল

This post has already been read 2510 times!