Thursday 25th of April 2024
Home / প্রাণিসম্পদ / ফকিরহাটের ভেড়ার খামারে দু’ বছরে উৎপাদন বেড়েছে তিনগুণ

ফকিরহাটের ভেড়ার খামারে দু’ বছরে উৎপাদন বেড়েছে তিনগুণ

Published at ফেব্রুয়ারি ২৬, ২০১৯

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : ভেড়ার প্রজাতির অস্তিত্ব রক্ষার্থে এবং গরু ও ছাগলের মাংসের ওপর চাপ কমাতে দু’ বছর আগে গড়ে ওঠা ভেড়ার খামারে তিন গুণ উৎপাদন হয়েছে। পাশাপাশি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এ অঞ্চলের খামারিদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। ৮০টি ভেড়া নিয়ে সরকারি এ খামারের যাত্রা শুরু। খামারে এখন ভেড়ার সংখ্যা ২৪০টি। ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে খুলনা-মংলা মহাসড়কের পাশে ফকিরহাটের পিলজঙ্গে গড়ে ওঠে ডেমনস্ট্রেসন ভেড়ার খামার।

জানাযায়, প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের ক্যাপাসিটি বিল্ডআপ করার উদ্দেশ্যে ৩টি ডেমনষ্ট্রেশন ভেড়ার খামার স্থাপন প্রকল্প গ্রহণ করা হয় । প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্যে ভেড়া পালনের মাধমে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা এবং দারিদ্র বিমোচনে সহায়ক ভূমিকা পালন করা এবং ভেড়া পালনে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে ভেড়ার উৎপাদন বৃদ্ধি করা, ভেড়া পালনে খামারিদের সচেতনতা সৃষ্টি করা ও উদ্যোক্তা তৈরির প্রচেষ্টা বারানো,কম্পোনেন্ট-এ হতে গবেষণার মাধ্যমে প্রাপ্ত টেকনোলজী প্রশিক্ষণের মাধ্যমে খামারীদের মধ্যে স্থানান্তর , পশম ও মাংসের বাজার বৃদ্ধি করার জন্য দেশি ভেড়া পালনে প্রশিক্ষণ ও প্রচারের ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ভেড়ার স্বাস্থ্য উন্নয়নের সহায়তা হিসেবে টিকা, কৃমিনাশক ও জরুরি ঔষধ এবং ঘাস সরবরাহের ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্দেশ্যে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর সমাজভিত্তিক ও বাণিজ্যিক খামারে দেশি ভেড়ার উন্নয়ন ও সংরক্ষণ (কম্পোনেন্ট-বি) ২য় পর্যায় প্রকল্প গ্রহণ করে ।

প্রকল্পের আওতায় ৩টি ডেমনষ্ট্রেশণ ভেড়ার খামার স্থাপন করা হয় । প্রকল্প ৩টি হচ্ছে রাজশাহীর রাজাবাড়ীহাটে, বগুড়ার শেরপুরে ও বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট উপজেলার  পিলজঙ্গ । পিলজঙ্গের  দেশের একমাত্র সরকারি মহিষ প্রজনন কেন্দ্রের দক্ষিণ পাশে ২০১৪ সালের ১৩ এপ্রিল পাঁচ একর জমির ওপর গড়ে ওঠে ভেড়ার খামার। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর এ খামারটির তত্বাবধায়ন করছে। খামারটি প্রকল্পভূক্ত। ছয় মাস বৃদ্ধিসহ চলতি বছরের ডিসেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হবে। ৬০টি ভেড়ী ও ২০টি পাঠা নিয়ে খামারের যাত্রা শুরু হয়। এ পর্যন্ত ভেড়ী, পাঠা ও বাচ্চা নিয়ে ২৪০টিতে দাঁড়িয়েছে।

সূত্র মতে, খামার পরিচর্যার জন্য একজন ফার্ম ম্যানেজার, একজন ভেটেরেনারী ফিল্ড এ্যাসিসটেন্ট, দু’জন এ্যানিমেল এ্যাটেনডেন্ট ও দু’জন প্রহরী সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করছে। খামারের পাঁচ একর পরিধির মধ্যে এক একর অবকাঠামো, তিন একর চারণ ভূমি ও এক একরে ঘাস উৎপাদন হচ্ছে। এ প্রজনন কেন্দ্রে সকালে ও বিকেলে ভেড়ার জন্য সুষম খাবার, দুপুরে ঘাস সরবরাহ করা হয়। উৎপাদিত ভেড়া বাজারদরের চেয়ে অর্ধেক মূল্যে খামারীদের কাছে বিক্রি করা হয়। এ পর্যন্ত বিক্রিত ভেড়ার সংখ্যা ২৯টি।

প্রতিষ্ঠানের ফার্ম ম্যানেজার ডা. মো. মঞ্জুরুল হাসান জানান, ভেড়া প্রজাতির অস্তিত্ব রক্ষা এবং গরু ও ছাগলের মাংশের ওপর চাপ কমাতে দু’ বছর আগে ভেড়ার খামারটি গড়ে ওঠে। খামারিদের দক্ষ করতে এ পর্যন্ত ৮০জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। ভেড়ার বংশ বৃদ্ধি পেলে আমিষজাতীয় খাদ্যের ঘাটতি পূরণ, মাংশ জনপ্রিয়, গ্রামীন মহিলারা স্বাবলম্বী, পশম থেকে শীত বস্ত্র তৈরির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হবে।

ভেটেরেনারী ফিল্ড এ্যাসিসটেন্ট মো. ইমরান হোসেন জানান, বিজ্ঞানভিত্তিক পদ্ধতিতে এখানে দেশীয় জাতের ভেড়া প্রজনন করা হচ্ছে। মূল ভূমি থেকে সাড়ে চার ফুট উঁচুতে শেড নির্মাণ করে ভেড়া লালন-পালন করা হচ্ছে। শেডের নিচে নেট স্থাপন করায় মল-মূত্র সাড়ে চার ফুট নিচে পড়ছে। ফলে এ্যামোনিয়া গ্যাস সৃস্টি হওয়ার আশংকা নেই। এটি স্বাস্থসম্মত পদ্ধতি। ভেড়ার রোগ-বালাই তুলনামূলকভাবে কম। একটি ভেড়া বছরে দু’ বারে মোট চারটি বাচ্চা প্রসব করে। এ প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠায় দক্ষিণাঞ্চলে ব্যক্তি ও পারিবারিক পর্যায়ে ভেড়ার খামারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাবে। ভেড়ার বর্জ্য থেকেও জৈব সার উৎপাদন হচ্ছে। স্থানীয় খামারিরা খামার ম্যানেজার বরাবর আবেদন করে সংশ্লিষ্ট উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সুপারিশের ভিত্তিতে অর্ধেক মূল্যে ভেড়া ও ভেড়ী কেনার সুযোগ পাচ্ছে।

উল্লেখ্য, ভেড়ার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলকভাবে বেশি। পতিত জমির ঘাস, গাছের ঝরা পাতা ও আগাছা ইত্যাদি খেয়ে ভেড়া বেঁচে থাকে। সরকারি হিসেব অনুযায়ী, ৩০টি ভেড়া পালন করে বছরে ৪৪ হাজার ৪শ’ টাকা আয় করা সম্ভব।

This post has already been read 3330 times!