Tuesday 19th of March 2024
Home / ফসল / প্রাকৃতিক উপায়ে সবজির জ্যাসিড পোকা নিয়ন্ত্রণ

প্রাকৃতিক উপায়ে সবজির জ্যাসিড পোকা নিয়ন্ত্রণ

Published at আগস্ট ৩১, ২০১৯

সবজির জ্যাসিড পোকা

মৃত্যুঞ্জয় রায় : যত্রতত্র কীটনাশক ব্যবহারের ফলে একদিকে পোকামাকড়ও যেমন সেসব কীটনাশকের প্রতি ধীরে ধীরে প্রতিরোধী হয়ে ওঠে অন্যদিকে চাষি ও সবজি ভোক্তারা কীটনাশকের বিষাক্ততায় আক্রান্ত হয়ে নানারকম অসুখ-বিসুখে ভোগে। এ অবস্থা কাম্য নয়। তাই বিষের হাত থেকে ফসল, পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যকে রক্ষা করতে সবজি চাষিদের এখন প্রাকৃতিক উপায়ে শাক সবজির পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণে জোর দেয়া উচিত।

প্রকৃতিতেই এসব শক্রু পোকাদের শায়েস্তা করার নিদান লুকিয়ে আছে। আছে বিভিন্ন বন্ধু পোকা ও মাকড়সা, উপকারী রোগজীবাণু। ক্ষেতে কোনো বিষ না দিলে এরা বেঁচে থাকে এবং প্রাকৃতিক নিয়মেই শত্রু পোকাদের মেরে ফেলে। এছাড়া আছে বিভিন্ন কীটবিনাশী গাছপালা। এসব গাছপালা থেকে উদ্ভিদজাত কীটনাশক তৈরি করে আক্রান্ত ক্ষেতে প্রয়োগ করলে তাতে শত্রু পোকা নিয়ন্ত্রণ হয় অথচ সেসব প্রাকৃতিক কীটনাশক বন্ধু পোকাদের কোনো ক্ষতি করেনা।

বিভিন্ন পরীক্ষা নীরিক্ষার ফলাফলে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে শাক সবজির জ্যাসিড পোকা নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি এখানে তুলে ধরা হলো। আশা করি সবজি চাষিরা ক্ষেত জরিপ করে পোকামাকড়ের অবস্থা বুঝে এসব পদ্ধতি প্রয়োগ করে বিনা বিষে সবজির পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।

সবজির জ্যাসিড পোাকা: জ্যাসিড পোকা দেখতে খুব ছোট এবং হালকা সবুজ রঙের। পূর্ণাঙ্গ পোকা ২.৫ মিলিমিটার লম্বা। সাধারণতঃ পাতার নিচে লুকিয়ে থাকে। গাছ ধরে ঝাকালে জ্যাসিড চারদিকে লাফিয়ে উড়ে যায়। এরা বেশ স্পর্শকাতর। ছোঁয়া লাগলেই দ্রুত অন্যত্র সরে যায়। জ্যাসিড বাংলাদেশে ঢেঁড়শ ও বেগুনের একটি অন্যতম প্রধান ক্ষতিকর পোকা। এ ছাড়া জ্যাসিড আলু, মরিচ, কুমড়াজাতীয় সবজি, টমেটো, তুলা ইত্যাদি ফসলেরও ক্ষতি করে থাকে। এ দেশে প্রায় ১০ প্রকার ফসলে জ্যাসিড ক্ষতিসাধন করে। শুষ্ক আবহাওয়ায় বিশেষ করে ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে ক্ষেতে জ্যাসিডের আক্রমণ বেশি দেখা যায়। কোন কোন ক্ষেতে এ সময় জ্যাসিডের ব্যাপক আক্রমণে প্রায় সব বেগুন গাছই নষ্ট হয়ে যায়। বছরের অন্য সময় এদের দেখা গেলেও মূলতঃ বসন্তকালে এদের আক্রমণ মারাত্মক আকার ধারণ করে।

পর্যায়ক্রমে এসব গাছে উপর্যুপরি বংশবিস্তার করে, ফলে সারা বছরই এদের দেখা যায়। প্রবল বর্ষায় এদের আক্রমণ কমে যায়। একটি প্রজাতির জ্যাসিড বেগুনে ক্ষুদে পাতা রোগের জীবাণু ছাড়ায় বলে জানা গেছে।

পূর্ণাঙ্গ ও অপূর্ণাঙ্গ, দুই অবস্থাতেই জ্যাসিড সবজি গাছে আক্রমণ করে। চারা গাছ থেকে শেষ অবধি জ্যাসিড আক্রমণ করে থাকে। চারা ও ছোট গাছ এদের দ্বারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এরা চারা রোপণের পর পাতায় থাকে ও পাতা থেকে রস চুষে খায়। এর ফলে আক্রান্ত পাতা বিবর্ণ হয়ে যায় এবং কচি পাতা কুঁচকে যায়। আক্রমণ বেশি হলে পাতা শুকিয়ে ঝরে পড়ে। পাতা থেকে রস চুষে খাওয়ার সময় জ্যাসিড পাতায় এক রকম বিষাক্ত পদার্থ গাছের ভিতর ঢুকিয়ে দেয়। এতে আক্রান্ত পাতা প্রথমে নিচের দিকে কুঁকড়ে যায়। পরে পাতার কিনারা হলুদ হয়ে যায় এবং  শেষে পাতায় মরিচা রঙ হয়। একটি গাছের সমস্ত পাতা এমনকি আক্রমণ অত্যধিক হলে সম্পূর্ণ ক্ষেত ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। বিনা বিষে এ পোকাকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে নিম্নলিখিত ব্যবস্থাদি নেয়া যেতে পারে-

১. বর্ষাকালে চারা রোপণ করতে হবে।

২. বিএআরআই-এর কীটতত্ত্ব বিভাগ এক গবেষণা করে দেখেছে যে ফেব্রুয়ারি থেকে মে পর্যন্ত প্রতি লিটার পানিতে ৫ মিলিলিটার নিমতেল অথবা নিমবিসিডিন মিশিয়ে তিন বার ক্ষেতে স্প্রে করতে পারলে জ্যাসিড দমনে সুফল পাওয়া যায়। নিম তেল ব্যবহার করলে নিম তেল ও পানির সাথে ১ মিলিলিটার তরল সাবান যেমন ট্রিক্স মেশাতে হবে।

৩. নিমতেল ছাড়া এক লিটার পানিতে ৫০টি নিম বীজের শাঁস ছেঁচে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে তারপর সে পানি ছেঁকে স্প্রে করলেও উপকার পাওয়া যায়।

৪. প্রতি লিটার পানিতে ৫ গ্রাম ডিটারজেন্ট বা গুঁড়া সাবান গুলে ছেঁকে সে পানি পাতার নিচের দিকে স্প্রে করেও জ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

৫. চারা অবস্থায় আক্রান্ত গাছে ছাই ছিটানো যেতে পারে।

৬. চারা অবস্থায় জ্যাসিড দেখা গেলে মসলিন বা মসৃণ কাপড়ের তৈরি হাতজাল দ্বারা জ্যাসিড ধরে সংখ্যা কমাতে হবে।

৭. তামাক পাতা ১ কেজি পরিমাণ নিয়ে ১৫ লিটার পানিতে একরাত ভিজিয়ে রাখতে হবে। এর সাথে সামান্য সাবান যোগ করতে হবে। ছেঁেক সেই দ্রবণ স্প্রে করতে হবে।

This post has already been read 3853 times!