Saturday 20th of April 2024
Home / ট্যুরিজম / পর্যটকদের জন্য শীঘ্রই শুরু হচ্ছে খুলনা-সেন্টমার্টিন জাহাজ চলাচল

পর্যটকদের জন্য শীঘ্রই শুরু হচ্ছে খুলনা-সেন্টমার্টিন জাহাজ চলাচল

Published at জুন ২৮, ২০১৯

ফকির শহিদুল ইসলাম(খুলনা): খুলনাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের পর্যটকদের জন্য শীঘ্রই শুরু হচ্ছে খুলনা থেকে সেন্টমার্টিন জাহাজে চলাচল। আর এই রুটটি চালু হলে এ অঞ্চলের ভ্রমন পিপাসু পর্যটকরা কম খরচ এবং দ্রুত সময়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের লিলা ভুমি সেন্টমার্টিন পৌছে যাবে। এ সময় পর্যটকরা দেশের বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী ম্যানগ্রোভ ‌ সুন্দরবনের সৌন্দর্য্যের পাশাপাশি ভোলা, হাতিয়া, নিঝুমদ্বীপ, কুতুবদিয়া-, পতেঙ্গা, মহেশখালী, কক্সবাজা, ইনানী ও টেকনাফের দৃশ্যও উপভোগ করতে পারবেন। পর্যাপ্ত পর্যটক পাওয়া গেলে খুলনা-সেন্টমার্টিন রুটকে কলকাতা হয়ে চেন্নাই পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। প্রস্তাবিত এ রুটে সরকারী ভাবে কোনো জাহাজ চলাচল না করলেও বেসরকারি খাতের উদ্দ্যোক্তাদের জাহাজ চলাচলের জন্য অবকাঠামো তৈরি করবে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক আন্ত:মন্ত্রণালয় সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। নৌপরিবহন সচিব মো. আবদুস সামাদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কয়েকটি মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি ছাড়াও খুলনার বিভাগীয় কমিশনার, বিআইডব্লিউটিসি, বিআইডব্লিউটিএ, বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন, ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব সুন্দরবন, অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন মালিক সমিতির কর্মকর্তা ও প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে খুলনা-সেন্টমার্টিন রুটে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের সিদ্ধান্ত হয়। কোনো ব্যবসায়ী সংগঠন জাহাজ চলাচলের আবেদন করলে তা অনুমোদন দেওয়া হবে। তবে তার আগে উপকূল অঞ্চলের তীর ঘেঁষে চলাচলের জন্য জাহাজের ড্রাফট তৈরি করবে নৌপরিবহন অধিদপ্তর।

এছাড়া অভ্যন্তরীণ ট্যুরিজমের পাশাপাশি খুলনা-কলকাতা চেন্নাই রুটে ক্রুজশিপ চালানোরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বৈঠকে। একই সঙ্গে বিদেশি পর্যটকদের আগমন ও বহির্গমন সংক্রান্ত ইমিগ্রেশন ও কাস্টমস চেকিং অন বোর্ড করার সিদ্ধান্ত হয়। বিদ্যমান বাংলাদেশ-ভারত নৌ-প্রটোকল চুক্তির আওতায় খুলনা থেকে কলকাতা হয়ে চেন্নাই রুটে পর্যটন জাহাজ চলাচল করতে পারবে। এই চুক্তির আওতায় ঢাকা-কলকাতা রুটে জাহাজ চলাচল শুরু হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিসির এম ভি মধুমতী নারায়ণগঞ্জের পাগলা মেরি এন্ডারসন থেকে বরিশাল, মংলা, সুন্দরবন, আন্টিহারা, হলদিয়া হয়ে কলকাতার উদ্দেশে যাত্রা করবে। খুলনা-সেন্টমার্টিন রুটে যাত্রীবাহী জাহাজ চলাচল সম্পর্কিত আন্ত:মন্ত্রণালয় সভায় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন।

মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মহিবুল হক বলেন, সুন্দরবন থেকে পর্যটক জাহাজের মাধ্যমে সেন্টমার্টিন যাওয়ার প্রস্তাবটি মূলত বেসরকারি ট্যুর অপারেটরদের। বেসরকারি খাতের উদ্দ্যোক্তারা দীর্ঘ দিন ধরে এ রুটের জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করে দেওয়ার দাবী জানিয়ে আসছে। এ বিষয়ে সরকারিভাবে কী সহায়তা দেওয়া দেয়া হলে রুটটি চালু করা যায় সে বিষয় নিয়ে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ট্যুর অপারেটর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টোয়াব)-এর সহসভাপতি রাফিউজ্জামান বৈঠকে জানান, খুলনাঞ্চলে অনেক বিদেশি পর্যটক যাতায়াত করেন। সুন্দরবন হয়ে কক্সবাজার-টেকনাফ-সেন্টমার্টিনে জাহাজ চলাচল করলে অনেক বিদেশি পর্যটক পাওয়া যাবে। এতে পর্যটন শিল্পের অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটবে। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত ব্যবসায়ীরাও এতে উৎসাহিত হবেন। পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী কোনো পর্যটক সেন্টমার্টিনে রাত যাপন করতে পারবে না। এই অবস্থায় খুলনা থেকে যাত্রা করে জাহাজটি রাতে কক্সবাজারে অবস্থান করতে পারে। পরদিন সকালে জাহাজটি সেন্টমার্টিনে পৌঁছাতে পারে।

বৈঠকে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের চিফ নটিক্যাল সার্ভেয়ার কে এম জসীমউদ্দিন সরকার জানান, খুলনা-সেন্টমার্টিন রুটে নাব্য সংকট রয়েছে। তবে ছোট আকারের ক্রুজশিপ দিয়ে সার্ভিস দেওয়া যেতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশের ট্যুর অপারেটরদের এ ধরনের কোনো জাহাজ নেই। থাইল্যান্ড, ইতালি ও ডেনমার্কসহ ইউরোপীয় দেশগুলোতে এ ধরনের জাহাজ রয়েছে। এসব দেশ থেকে ভাড়ায় জাহাজ আনা যেতে পারে। পর্যটকবাহী এ রুট চালু করার জন্য টেকনাফ, কক্সবাজার ও সেন্টমার্টিনে ঘাট ও জেটি নির্মাণ করতে হবে। প্রস্তাবিত এ নৌরুটে বয়া ও রোড মার্কিং করতে হবে। পর্যটকদের জন্য ওয়েটিংরুম, ওয়াশরুম, বাথরুমের সুযোগ সৃষ্টি করতে হবে। এসব সমস্যার সমাধান করলে পর্যটকদের আকৃষ্ট করা যাবে। তিনি আরো জানান, সমুদ্রে চলাচলকারী জাহাজ ও তীর ঘেঁষে চলাচলকারী জাহাজের মধ্যে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। খুলনার বিভাগীয় কমিশনার মো. লোকমান হোসেন মিয়া বৈঠকে জানান, খুলনাঞ্চলের মানুষ ভ্রমণ পিপাসু। খুলনা সেন্টমার্টিন জাহাজে চলাচলের এ রুটটি চালু করা গেলে শুধু খুলনার মানুষ নয়, সারা দেশের মানুষের জন্য সুন্দরবন দেখার সুযোগ সৃষ্টি হবে।

This post has already been read 4218 times!