Friday 19th of April 2024
Home / প্রাণিসম্পদ / দুগ্ধ খামার লাভজনক করতে যে বিষয়গুলো অবশ্যই জানা দরকার

দুগ্ধ খামার লাভজনক করতে যে বিষয়গুলো অবশ্যই জানা দরকার

Published at মার্চ ৫, ২০২০

মো. মহির উদ্দিন, কৃষিবিদ:

কেস স্টাডি –০১ : মো. শহিদুল ইসলাম একজন ডেয়রী খামারী। খামারে ছোট বড় অনেক গাভী। খাদ্য খরচ,শ্রমিক মজুরী,ঔষুধ-পত্র ইত্যাদির খরচ মিটিয়ে তেমন লাভ থাকে না বলে তিনি প্রায়ই হতাশা প্রকাশ করেন। খামার বন্ধ করে দিবেন বলেও মাঝে মধ্যে জানান। একজন বড় খামারী হিসাবে এলাকাতে পরিচিতি আছে। তাই সহসাই খামার বন্ধ করতে পারছেন না। ডেয়রী খামারের প্রধান উৎপাদান হলো দুধ। সুতরাং যদি প্রতি একক (কেজি) দুধের বিক্রয় মূল্য উৎপাদন খরচের চেয়ে বেশি হয় তবেই লাভ হবে। তার খামারের অনেক গাভীর বয়স লাভজনক উৎপাদনকাল অতিক্রম করেছে, এঁড়ে বাছুর বিক্রয় বা কালিং না করে খামারে রাখা হয়েছে। অনুৎপাদনশীল গরু থাকার কারনে তার খামারে উৎপাদন খরচ বেশি হচ্ছে এবং উৎপাদন কম হচ্ছে বলে লাভ কমে যাচ্ছে।

কেস স্টাডি –০২ : মো. রবিউল ইসলাম মোটামুটি বড় আকারের একজন ডেয়রী খামারী। তার খামারে সব সময় প্রায় ৪০-৪৫টি দুগ্ধবতী গাভী থাকে। তিনি একজন সচেতন খামারী, বিভিন্ন সংস্থা থেকে খামার ব্যবস্থাপনা বিষয়ে নানাবিধ প্রশিক্ষণ নিয়েছেন বিধায় তিনি জানেন খামার হতে হবে উৎপাদনমুখী এবং তিনি তার খামার ইতিবাচক উৎপাদনমুখী রাখতে সদা তৎপর থাকেন। গাভীর উৎপাদনমুখী বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে ধারনা রাখেন। তাই তার খামারের কোন গাভীর এই সকল অর্থনৈতিক গুরুত্ববহ বৈশিষ্ট্যগুলোর কোন একটি নেগেটিভ দৃশ্যমান হলে তা দুর করার জন্য কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। যেহেতু তার দুগ্ধ খামার তাই খামারে এঁড়ে বাছুর জন্মালে তিনি সেগুলো খামার থেকে অপসারন করেন এবং বকঁনা বাছুরগুলো পরবর্তীতে তার খামারে স্থানান্তর করার জন্য প্রতিপালন করেন। এসব বকনা বাছুরের মধ্যে যেগুলোর বাহ্যিক বৈশিষ্ট্য সবদিক থেকে ভালো সেগুলো রেখে বাকিগুলো বিক্রি করে দেন। জাত ভালো কিন্তু বয়সের কারণে উৎপাদন কমে গেছে এমন গাভী জাতের মায়া না করে তিনি কালিং করেন। এ জন্য তার খামারের গাভীপ্রতি গড় দুধ উৎপাদন অনেক ভালো।

প্রতিটি গাভীর জাতের কিছু নির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য থাকে যা দ্বারা গাভীর উৎপাদন সক্ষমতা সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়। এসব বৈশিষ্ট্য কে অর্থনৈতিক বা উৎপাদনমুখী বৈশিষ্ট্য বলে। ভালো জাতের গাভীর ক্ষেত্রেও  যদি ভালো ব্যবস্থাপনা ও উন্নত পরিবেশ নিশ্চিত করা না যায় তাহলে গাভী উৎপাদন সক্ষমতা তার কৌলিতাত্তিক বৈশিষ্ট্যের মানদন্ড অনুসারে প্রদর্শন করতে পারবে না। এ ধরনের প্রধান কিছু বৈশিষ্ট্য সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো।

১. দুধ উৎপাদন

গাভীর একটি দুগ্ধ উৎপাদনকালে উৎপাদিত দুধের পরিমান কে Lactation yield বলে। কোন গাভীর এক ল্যাকটেশনে কি পরিমান দুধ উৎপাদিত হবে তা নির্ভর করে প্রসব সংখ্যা, দিনে কত বার দুধ দোহন করা হয়,উৎপাদনের স্থিতিকাল ইত্যাদি। একটি গাভী প্রথম ল্যাকটেশনে যে পরিমান দুধ দেয় পরবর্তীতে তার চেয়ে ৩০-৪০ ভাগ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ৫ম ল্যাকটেশনের পর হতে দুধ উৎপাদন কমতে থাকে। বাচ্চা প্রসবের পর হতে প্রতিদিন দুধ উৎপাদন বাড়তে থাকে এবং ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে সবোর্চ্চ উৎপাদন হবে। এই সময় কে বলা হয় “সবোর্চ্চ উৎপাদন’’। এই সবোর্চ্চ উৎপাদনকালকে যতদিন বেশি ধরে রাখা যাবে দুধ উৎপাদন তত বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং খামারে গাভী থাকলেই হবে না গাভীর দুধ উৎপাদনের অর্থনৈতিক বৈশিষ্ট্যগুলো সম্পর্কে ভালো ধারনা থাকতে হবে এবং সে অনুসারে ব্যবস্থা নিতে হবে। যেমন- দিনে দুই বার দোহন করলে যে পরিমান দুধ পাওয়া যাবে দিনে তিন বার দোহন করলে তার চেয়ে বেশি দুধ পাওয়া যাবে । দুগ্ধ খামার লাভজনক করতে হলে এই বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে।

দুধ উৎপাদনকাল

গাভী বাচ্চা প্রসবের পর হতে যতদিন পর্যন্ত দুধ প্রদান করে সে সময়কাল কে দুধ উৎপাদন কাল বা ল্যাকটেশন পিরিয়ড বলে। গাভীর দুধ উৎপাদনকাল ৩০৫ দিন। যদি এই পিরিয়ড ছোট হয় তাহলে মোট উৎপাদন কম হবে। ভালো ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে গাভীর উৎপাদন কাল সঠিক সময় পর্যন্ত ধরে রাখা যায়।

৩. দুধ উৎপাদনের স্থিতিকাল

দুধ উৎপাদনের স্থিতিকাল অর্থাৎ একই অবস্থা বজায় থাকা। এ অবস্থা সাধারণত: সর্বোচ্চ দুধ উৎপাদনের সময়কালকে বুঝায়। ল্যাকটেশন পিরিয়ডে গাভীর সবোর্চ্চ দুধ উৎপাদন হয় ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে। এই সময়কে সর্বোচ্চ দুধ উৎপাদনকাল বলে। এই সবোর্চ্চ উৎপাদনকাল কে যতদুর সম্ভব দীর্ঘায়িত করা উচিত। এবং গাভীর সবোর্চ্চ উৎপাদন কাল যে সময় পর্যন্ত বজায় থাকে তা’ই হলো persistency বা বিদ্যমানতা। সর্বোচ্চ উৎপাদনে পৌঁছার পর ধীরে ধীরে উৎপাদন কমতে থাকে। যদি দুধ উৎপাদনের স্থিতিকাল বেশি হয় তাহলে ঐ ল্যাকটেশনে গাভী থেকে অধিক উৎপাদন পাওয়া যাবে।

৪. প্রথম বাচ্চা প্রদানের সময় গাভীর বয়স

গাভীর সমগ্র জীবনচক্রে সর্বাধিক উৎপাদন (high life time production) এর জন্য প্রথম বাচ্চা প্রদানের সময় গাভীর বয়স খুব গুরুত্বপূর্ণ। প্রথম বাচ্চা প্রদানের সময় আমাদের দেশি গাভীর কাঙ্ক্ষিত বয়স সাধারণত: ৩ বছর এবং শংকর জাতের গাভীর বয়স ২ বছর। যদি বাচ্চা প্রদানের সময় বয়স বেশি হয় তাহলে প্রথম ল্যাকটেশনে বেশি দুধ উৎপাদিত হয় এবং এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকে। তবে এর ফলে বাচ্চা প্রদানের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে লাইফ টাইম প্রোডাকশন কম হতে পারে। প্রথমবার বাচ্চা প্রদানের সময় গাভীর আকার ছোট থাকে পরে বয়স বাড়ার সাথে সাথে শারীরিক বৃদ্ধি ঘটে এবং পরিপাকতন্ত্র ও দুগ্ধগন্থি বড় হয়। গর্ভধারণ এবং ল্যাকটেশন পুনঃ সংঘটন বা বারবার আবর্তিত হওয়ার কারনে দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। এ দুটির কারণে যে পরিমান বৃদ্ধি পায় তার মধ্যে ২০ ভাগ বৃদ্ধি ঘটে দৈহিক বৃদ্ধির কারনে এবং ৮০ ভাগ ঘটে গর্ভধারণ এবং ল্যাকটেশন পুনঃসংঘটন বা বারবার আবর্তিত হওয়ার কারনে। তবে গাভীর ১ম ল্যাকটেশন হতে ৫ম ল্যাকটেশন পর্যন্ত ৩০ ভাগ দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি ঘটে।

৫. সার্ভিস কাল

কোন একবার বাচ্চা প্রসবের তারিখ হতে পরবর্তী বাচ্চা ধারনের (date of successful conception) তারিখ পর্যন্ত সময়কাল কে বলা হয় সার্ভিস কাল। আমরা জানি বাচ্চা প্রসবের সময় গাভীর উপর যতেষ্ট ধকল পড়ে এবং গাভীর বিভিন্ন প্রজনন অংগগুলো অনেকটা’ই অস্বাভাবিক হয়ে যায়। সার্ভিসকালে গাভী ধকল মুক্ত হয় বা ধকল কাটিয়ে উঠে এবং প্রজনন অংগসমুহ আগের মতো স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। তবে সার্ভিসকাল হতে হবে প্রয়োজনীয় পরিমান। গাভীর অপটিমাম (optimum) সার্ভিসকাল হলো ৬০-৯০ দিন। যদি সার্ভিসকাল খুব বেশি বা দীর্ঘায়িত হয় তাহলে একটা গাভীর জীবনচক্রে কম সংখ্যক বাচ্চা উৎপন্ন হবে এবং উৎপাদনকালও কম হবে। আবার যদি সার্ভিসকাল খুব কম হয় তাহলে দ্রুততম সময়ে গর্ভধারনের কারনে গাভী দুর্বল হবে এবং সবোর্চ্চ উৎপাদনকাল কম হবে। একজন সচেতন খামারীকে এ বিষয়টি জেনে গাভীকে ঐ সময় সীমার মধ্যে প্রজনন করাতে হবে সে ক্ষেত্রে বাচ্চা প্রসবের পর প্রথম ডাকে প্রজনন মিস হতে পারে।

৬. ড্রাই পিরিয়ড

যে দিন থেকে দুধ প্রদান বন্ধ হবে সে দিন থেকে পরবর্তী বাচ্চা প্রসব পর্যন্ত সময় হলো ড্রাই পিরিয়ড । সাধারণত: ২ মাস হতে ২১/২ মাস পর্যন্ত ড্রাই পিরিয়ড গ্রহন যোগ্য। যদি ড্রাই পিরিয়ড খুব কম হয় বা দেয়া না হয় তাহলে,গাভী পরবর্তী ল্যাকটেশনে ধকলে ভুগবে,দুধ উৎপাদন উল্লেখযোগ্য ভাবে কমে যাবে এবং দুর্বল বাচ্চা প্রসব করবে। যদি ড্রাই পিরিয়ড খুব বেশি হয় তাহলে পরবর্তীতে ল্যাকটেশনে দুধ উৎপাদন বৃদ্ধিকে খুব বেশি প্রভাবিত করবে এমন নয়,কিন্তু বর্তমান ল্যাকটেশনে দুধ কম পাওয়া যাবে। বাচ্চা প্রসবের পূর্বে সাধারণতঃ দুই মাস গাভী হতে দুধ দোহন বন্ধ থাকে। পরবর্তী ল্যাকটেশনে সবোর্চ্চ দুধ উৎপাদনের জন্য এই সময়টুকু বিশ্রাম নেয়া খুবই দরকার। ড্রাই পিরিয়ড যদি ৪০-৬০ দিনের কম হয় তাহলে দুধ উৎপাদন কম(২৫-৪০%) হয়। আর যদি ৬০ দিনের বেশি হয় তাহলে বাচ্চা প্রদানের সংখ্যা কম হবে এবং পুরো জীবনকালে দুধ উৎপাদন কমে যাবে। আবার গাভী গর্ভধারন করলে দুধ উৎপাদন কমে যায়। গর্ভধারনের পাঁচ মাসের পর হতে দুধ উৎপাদন অনেক কমে যায় এবং গর্ভধারনের ৮ম মাসে দুধ উৎপাদন নন-প্যাগনেন্ট গাভীর তুলনায় ২০ ভাগ কমে যায়। ফিটাসের প্রয়োজনীয়তার কারনে এমনটি হয় না। ইস্টোজন এবং প্রোজেস্টেরন মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় দুধ নিঃসরণ বাধাগ্রস্থ হয়।

৭. দুই বাচ্চা প্রসবের মধ্যবর্তী সময়

গাভীর ক্ষেত্রে লাভজনক হলো প্রতি বছর বাচ্চা পাওয়া এবং মহিষের ক্ষেত্রে ১৫ মাস পর পর একটি বাচ্চা। যদি দু’বার বাচ্চা প্রসবের মধ্যবর্তী সময় (calving interval) বেশি হয় তবে ঔ গাভী থেকে কম সংখ্যক বাচ্চা পাওয়া যাবে। এবং গাভীর মোট দুধ উৎপাদনকাল (Total life production) কমে যাবে।

৮. প্রজনন দক্ষতা

প্রজনন দক্ষতা বলতে একটি গাভীর জীবনকালে অধিক সংখ্যক বাচ্চা প্রদানের সক্ষমতা,যাতে সবোর্চ্চ উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। তবে এটা নির্ভর করে পরিবেশ ও কৌলিতাত্ত্বিক প্রভাবের উপর। প্রজনন দক্ষতা নিরুপনের নির্ণায়ক সমুহ হলো- প্রতি গর্ভধারণে সার্ভিস সংখ্যা, প্রসব বিরতিকালের দৈর্ঘ্য এবং প্রথম প্রজনন থেকে গর্ভধারণের সময়। তবে বংশগতির চেয়ে প্রজনন দক্ষতার ক্ষেত্রে নন-জেনেটিক ফ্যাক্টর বেশি ভূমিকা রাখে। প্রতিকুল পরিবেশে একটি কম উৎপাদনশীল গাভীর তুলনায় একটি অধিক উৎপাদনক্ষম গাভী বেশি এফেক্টেড (affected) হয়।

৯. রোগ সহনশীলতা

শংকর জাত বা বিদেশী জাতের গরুর চেয়ে আমাদের দেশি গরু রোগ প্রতিরোধ শক্তি বেশি অর্থাৎ আমাদের দেশি গরু অধিক রোগ সহনশীল। গবাদিপশুর রোগ বালাই অর্থনৈতিক গুরুত্ব বহন করে। রোগ হলে গরুর শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি কমে যায়। চিকিৎসা ও ঔষুধ পত্র ক্রয়ের কারনে উৎপাদন খরচ বেড়ে যায় ফলে লাভ কমে যায়। তাছাড়া রোগ বালাই হলে গাভীর দুধ উৎপাদনও কমে যায়।

১০. ল্যাকটেশন সংখ্যা

ল্যাকটেশন সংখ্যা বলতে ১ম,২য়,৩য় এইভাবে ক্রমোন্নতি বাচ্চা প্রসব এবং দুগ্ধদান কাল কে বুঝায়। ল্যাকটেশন সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে দুধ উৎপাদন বাড়ে অর্থাৎ ১ম ল্যাকটেশনের চেয়ে ২য় এবং ২য় ল্যাকটেশনের চেয়ে ৩য় এইভাবে ৫ম ল্যাকটেশন পর্যন্ত দুধ উৎপাদন বাড়ে এবং এর পর থেকে ক্রমান্নয়ে কমতে থাকে। একটি গাভী যদি ২ বছর বয়সে প্রথম গর্ভধারন করে এবং বাচ্চা প্রদান করে তাহলে প্রথম ল্যাকটেশনে যে পরিমান দুধ প্রদান করবে পরবর্তীতে প্রত্যাশিত দুধ (mature yield) উৎপাদনের পরিমান হবে প্রথম ল্যাকটেশনের উৎপাদিত দুধের চেয়ে ১.৩ গুণ দুধ পাওয়া যাবে। যদি কোন গাভী হতে প্রথম ল্যাকটেশনের কোন একদিন সবোর্চ্চ ১০ লিটার দুধ পাওয়া যায় তাহলে ঐ গাভী হতে ভবিষ্যতে ১৩ বা ১৪ লিটার দুধ পাওয়া যাবে।

১১. দোহনকাল দোহন বিরতি

সাধারণতঃ গাভী দিনে দুই বার দোহন করা হয়। দিনে দুই বার দোহন করলে একবার দোহনের চেয়ে ৪০% দুধ বেশি হয়। আর তিন বার দোহন করলে ২০ ভাগ(৫-২০ ভাগ) দুধ বেশি হবে। তবে এই পরিমান বেশি হবে কোন গাভীর প্রথম ল্যাকটেশনের ক্ষেত্রে এরপর গাভীর বয়স বাড়ার সাথে এটা কমে যাবে। বেশি বার দোহন করলে দুধ বেশি হওয়ার কারন হলো-

ক. বার বার দোহন করলে আন্তঃম্যামারী চাপ কম উৎপন্ন হয়।

খ. দুধ উৎপাদনের অনুকুলে হরমোনের কার্যকারীতার জন্য stimulation বৃদ্ধি পায়।

গ. দুধের উপাদানগুলো পুঞ্জিভুত হওয়ার কারনে সিক্রেটরী সেলের উপর ঋনাত্মক ফিডব্যাক কম হয় বলে। দুধ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য এই বিষয়টি চর্চা করা যেতে পারে। তবে প্রতিদিন দুইবার বা তিনবার যেভাবেই গাভী দোহন করা হোক না কেন প্রতিবার সমান ব্যবধান পর পর দোহন করতে হবে। যে গাভীকে সমান ব্যবধানে  (যেমন-১২ ঘন্টা বা ৮ ঘন্টা পর পর) দোহন করা হয় সে গাভী ঐ গাভী থেকে বেশি দুধ দেয় যে গাভীকে সমান ব্যবধানে দোহন করা হয় না। অর্থাৎ সমান বিরতিতে দোহন করতে হবে এবং ভালোভাবে দোহন করতে হবে। যদি পর পর কয়েকদিন অসম্পূর্ণভাবে দোহন করা হয় তাহলে সমগ্র ল্যাকটেশন পিরিয়ডে স্থায়ীভাবে দুধ উৎপাদন কমে যাবে।

১২. তাপমাত্রা

পারিপার্শ্বিক তাপমাত্রার প্রভাব দুধ উৎপাদনের কেমন প্রভাব ফেলবে তা গাভীর জাতের উপর নির্ভর করে। আমাদের দেশে পালিত বিভিন্ন শংকর জাতের গাভী পরিবেশের কম তাপমাত্রায় স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। উচ্চ তাপমাত্রা বিরাজিত সময়ে দুধ উৎপাদন কমে যায়। পরিবেশের তাপমাত্রা ২৭০ সে. তাপমাত্রায় দুধ উৎপাদন কমতে শুরু করে। খাদ্য গ্রহন কমে যায় বলে দুধ কম হয়। উচ্চ তাপমাত্রা অধিক উৎপাদনশীল গাভীর জন্য তুলানামূলভাবে দেশি এবং কম উৎপাদনশীল গাভীর চেয়ে বেশি ক্ষতিকর এবং সব্বোর্চ দুধ উৎপাদনকালীন সময়ে পরিবেশের এই তাপমাত্রা ক্ষতিকর।

গাভী পালন বা দুগ্ধ খামার স্থাপন একটি ব্যবসা। অন্যান্য ব্যবসার মতোই এখানেও আমাদের শ্রম,মেধা ও পুঁজি বিনিয়োগ করতে হয়। তাই স্বাভাবিক মুনাফা অর্জনই আমাদের মূখ্য উদ্দেশ্য। তবে সব সময় বা সব ক্ষেত্রে আমার লাভ করতে পারি না। প্রবল প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই সময়ে লাভজনক দুগ্ধ খামার করতে হলে আলোচ্য বিষয়গুলো সম্পর্কে একজন খামারীর খুব স্বাভাবিকভাবেই ধারনা থাকা উচিত।

লেখক: উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, চাটমোহর, পাবনা।

This post has already been read 5717 times!