Tuesday 23rd of April 2024
Home / ফসল / তেঁতুল হতে পারে সম্ভাবনাময় বাণিজ্যিক ফল

তেঁতুল হতে পারে সম্ভাবনাময় বাণিজ্যিক ফল

Published at মে ১১, ২০২০

কৃষিবিদ . এম মজিদ মন্ডল : তেঁতুল (Tamarind) এর বৈজ্ঞানিক নাম টামারইনডাস ইনডিকা (Tamarindus Indica)। এটি লিগুমিনেসি পরিবারের লিগুম জাতীয় উদ্ভিদ এবং এর ফল অত্যন্ত জনপ্রিয়। তেঁতুল দেখলে খেতে ইচ্ছে করে না এ ধরনের মানুষ পৃথিবীতে আছে কি না তা জানা নাই। এ ফলে টারটারিক এসিড থাকে যা শরীরের জন্য অতিপ্রয়োজনীয়। এটি নারী-পুরুষ শ্রেণী বিশেষে সকলকে আকর্ষণ করে এবং দেখা মাএ জিহ্বাতে লালা বা স্লাইভা চলে আসে।

বিজ্ঞানীদের মতে, অত্যবশ্যকীয় টারটারিক এসিড মানুষের শরীরে যত বেশি ঘাটতি থাকে তত বেশি আকর্ষণ করে। নারীদের শরীরে টারটারিক এসিডের বেশি প্রয়োজন হয়ে থাকে বলে (বিশেষ করে গর্ভকালীন সময়ে এ এসিড বেশি প্রয়োজন হয় বলে বেশি আকর্ষণ করে) এর প্রতি তাদের আকর্ষণ বেশি থাকে।

আফ্রিকার সাভানা অঞ্চলে তেঁতুলের উৎপত্তিস্থল বলে জানা যায়। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় সবদেশে এ ফল জন্মে। এ ফল সব ধরনের জমিতে জন্মালেও উষ্ণ ও শুষ্ক আবহাওয়াতে ভালো জন্মে। তাই মরুভূমি আধুষিত্য এলাকায় ভালো জন্মে (বিশেষ করে সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, জর্ডান, তাজাকিস্থান, তুরুস্ক প্রভৃতি)। অনেক দেশে অর্থকরী ফসল হিসেবে চাষ হয়ে থাকে এবং বিদেশে রপ্তানি করে থাকে। বাংলাদেশে আধুনিক চাষাবাদের তেমন কোন উৎল্লেখ্যযোগ্য প্রমাণ নাই। তবে পারিবারিক চাহিদা মিটানোর জন্য টক জাতীয় এবং ব্যক্তি পর্যায়ে অনেক স্থানে সৌদি আরবের মিষ্টি তেঁতুল চাষ হয়ে আসছে। বর্তমানে কৃষি গবেষণা থেকে শুরু করে অনেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান তেঁতুলের আধুনিক চাষাবাদ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করলেও তেমন কোন অগ্রগতি নাই।

উদ্ভিদতত্ত্ব

তেঁতুল একটি বৃহদাকার চিরহরিৎ বৃক্ষ, তবে শীতকাল বেশি হলে পত্র পতনশীল স্বভাবের হয়। পাতা পক্ষল-যৌগিক, প্রতি পাতায় ১০-২০ জোড়া অনু পএ থাকে। কাঁচা অবস্থায় সবুজ ত্বক শাঁসের সাথে থাকে এবং পাকার পর ত্বক মেটে রং ধারণ করে শাঁস আলাদা হয়ে যায়। মাটি সুনিস্কাশিত হলে যে কোন মাটিতে এ ফলের চাষ করা যায়। সাধারনত বীজ দিয়ে বংশ বিস্তার করা হয়। তবে শাখা কলম ও কুঁড়ি সংযোজন করেও এর বংশ বৃদ্ধি করা যায়। ১০-১২ মিটার দুরত্বে গর্ত করে গাছ রোপন করতে হয়। ভালো ফল পেতে হলে গাছে সার দেওয়া উচিত। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ করতে কিংবা ভালো ফলন পেতে হলে বর্ষার আগে একটি পূর্ণ বয়স্ক গাছে দুপুর বেলা যতটুকু স্থানে ছায়া পড়ে সে স্থানে কোদাল দিয়ে কোপায়ে মাটি আলগা করে ২০-৩০ কেজি গোবর/কম্পোট, ১-২ কেজি ইউরিয়া, ১-২ কেজি টিএসপি, ১-২ কেজি পটাস সার দেওয়া যেতে পারে। বীজ থেকে উৎপাদিত গাছে ৭-৮ বছরে (কলম গাছ থেকে তাড়াতাড়ি) ফল আসে। ফুল থেকে ফল আসতে প্রায় ৯-১০ মাস সময় লাগে। সাধারনত মার্চ মাসে ফুল আসে এবং পরবর্তী বছরে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে ফল পাকে। একটি পূর্ণ বয়স্ক গাছ থেকে গড়ে প্রায় ২০০-৩০০ কেজি ফল পাওয়া যায়।

পুষ্টি উপাদান ব্যবহার

ফলের পাকা শাঁসে ৬০-৭০% শর্করা, ৩% আমিষ, ২০-৩০% পানি, ৮-১০% টারটারিক এসিড থাকে। বীজের মধ্যে ৬৩% শর্করা, ১৬% প্রোটিন, ৫.৫% তৈল থাকে। পাকা ফল টাটকা অবস্থায় খাওয়া যায় এ্বং আচার, চাটনি, সস, সরবত প্রভৃতি মুখরোচক খাদ্য তৈরি করা যায়। বীজ থেকে শিল্পের ব্যবহারের জন্য গাম ও ডাই (রং) তৈরী করা হয়। গাছের কাঠ উন্নত মানের জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার হয়।

যে জন্য চাষ করা যায় (সুবিধা)

১. বাংলাদেশের প্রচলিত ফল যেমন আম, কাঁঠাল, লিচু প্রভৃতি ফলের মধ্যে অধিকাংশ ফলের চেয়ে ফলন ও বাজার মুল্য বেশি, তাই এ ফল চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া যায়।

২. পতিত, অউর্বর, অনআবাদি যে কোন জমিতে জন্মানো যায়।

৩. রৌদ্র থেকে কিছু ছায়াযুক্ত স্থানে জন্মে ; তাই বাড়ির আশে-পাশ্বে, বাগান, বন, জঙ্গল, পাহাড়-পর্বত বিভিন্ন স্থানে সহজে জন্মানো যায়।

৪. তেমন কোন সার দেয়ার দরকার হয় না।

৫. পুষ্টি সমৃদ্ব ফল হওয়ায় শরীরের জন্য উপকারী।

উপোরোক্ত বিষয়ের আলোকে বাংলাদেশে বাড়ির আশে-পাশ্বে, পতিত, অউর্বর জমিতে তেঁতুলু চাষ করে পরিবার ও দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যেতে পারে।

লেখক : ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও আঞ্চলকি প্রধান, বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান), রাজশাহী বিভাগীয় আঞ্চলিক কেন্দ্র, সিরাজগঞ্জ।

This post has already been read 4239 times!