Saturday 20th of April 2024
Home / খাদ্য-পুষ্টি-স্বাস্থ্য / ডেঙ্গু জ্বর সারাতে পেঁপে পাতার চা!

ডেঙ্গু জ্বর সারাতে পেঁপে পাতার চা!

Published at জুলাই ৭, ২০১৯

মো. খোরশেদ আলম জুয়েল : প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে বাংলাদেশে বর্তমানে আতঙ্কের নাম ডেঙ্গু জ্বর। এ বছরও তার ব্যাতিক্রম নয়। ঢাকা শহরে প্রচুর মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন রোগটিতে এবং মারা যাওয়ার খবরও আসছে প্রতিনিয়ত। বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে অনেক সময় প্রচলিত ‍ওষুধ কিংবা চিকিৎসা কোন কিছুই কাজে আসছেনা। সুখবর হলো, ডেঙ্গু জ্বরের কার্যকর ওষুধ উদ্ভাবনের দাবী করেছেন বাংলাদেশের বিজ্ঞানী বিজ্ঞানী রেজাউল করিম।

ইতিমধ্যে তিনি আরএএস (RAS) পদ্ধতিতে মাছ চাষ এবং হাইড্রোপনিক ভু্ট্টা চাষে বেশ সুনাম অর্জন করেছেন। এবার তিনি পেঁপে পাতার চা উদ্ভাবন করেছেন। জ্বি হ্যা, পেঁপে পাতার চা খেলেই সারবে ডেঙ্গু জ্বর। এছাড়াও সাধারণ জ্বরেও উক্ত চা কার্যকর বলে জানিয়েছেন ড. রেজাউল।

ইতিমধ্যে জ্বরে আক্রান্ত ৬ জন রোগী (৪ জন ডেঙ্গু জ্বর এবং বাকী ২ জন সাধারণ জ্বর) তাঁর উদ্ভাবিত পেঁপে পাতার চা খেয়ে সুস্থ হয়েছেন বলে দাবী করেছেন তিনি। বিজ্ঞানী রেজাউল করিম বলেন, ডেঙ্গু আক্রান্ত জন ব্যক্তিকে আমরা একটি সুনির্দিষ্ট পরিমাণে পেঁপে পাতার চা পথ্য হিসেবে প্রদান করি। এতে তাদের তাদের শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে এবং ডেঙ্গু জ্বরের প্রি /পোস্ট পেইন মুক্ত হয়েছে। এছাড়াও সাধারণ জ্বরে আক্রান্ত ২ জন রোগীর ওপরও উক্ত পরীক্ষা চালানো হয় এবং তাতে সাফল্য পাওয়া গেছে। পেঁপে পাতা কিভাবে ডেঙ্গু জ্বর সারায় –এ প্রশ্নের উত্তরে বিজ্ঞানী রেজাউল করিম এগ্রিনিউজ.২৪ কম কে বলেন, পেঁপে পাতার রস খেলে শরীরে প্লেটলেট কাউন্ট কমে যাওয়ার আশঙ্কা একেবারে কমে যায়। সেই সঙ্গে রোগ প্রতিরোধী ব্যবস্থাও খুব শক্তিশালী হয়ে ওঠে। আর একবার ইউমিন সিস্টেম শক্তিশালী হয়ে উঠলে ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারে থাকেনা বললেই চলে। আর এই পাতার আরেকটি গুণ হলো এটির কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।

তিনি জানান, পেঁপে পাতায় উপস্থিত একাধিক উপকারি উপাদান পেটের রোগের প্রকোপ কমানোর পাশাপাশি ওজন কমাতে, এবং হার্টের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। পেঁপে পাতার চা ডেঙ্গু জ্বর প্রতিরোধ করে এবং রক্তের মেটাবোলাইট প্রবাহ সঠিক মাত্রায় রাখে। কোষের পুষ্টির আদান প্রদান নিশ্চিত করে (যা ডেঙ্গু ভাইরাস বন্ধ করে দেয়) এবং রক্ত জমাট বাঁধতে দেয় না। সেই সঙ্গে ডেঙ্গু সংক্রমণের প্রকোপ কমাতেও সহায়তা করে। ক্যান্সারের মতো মরণঘাতী রোগকেও দূরে রাখতে এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটাতে পেঁপে পাতার ভূমিকা অপরিসীম। ইনিস্টিটিউট অব টেকনোলজি ট্রান্সফার অ্যান্ড ইনোভেশান তিন বছর যাবত পেঁপে পাতার গুঁড়া নিয়ে গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, পেঁপে পাতায় কার্পেইন নামক একটি উপাদান শরীরে প্রবেশ করার পর দেহে উপস্থিত ক্ষতিকারক টক্সিক উপাদান শরীর থেকে বের করে দেয়, তেমনি মাইক্রোঅর্গেনিজমদেরও মেরে ফেলে। ফলে একাধিক রোগ দূরে থাকতে বাধ্য হয়। পেঁপে পাতায় উপস্থিত গ্লটেমেট অ্যাসিড, গ্রাইসিন, ভেলিন, ট্রিপটোফেন এবং হিস্টিডিনের মতো অ্যামাইনো অ্যাসিড বিদ্যমান রয়েছে, যা শরীরের জন্য অনেক উপকারী। ঘরোয়া পদ্ধতিতে কেউ নিজে তৈরি করে খেলে উপকার পাওয়া যাবে কী না জানতে চাইলে ড. রেজাউল বলেন, অবশ্যই পাওয়া যাবে। এজন্য বাঁছাইকৃত পেঁপে পাতা ৪৫ ডিগ্রী সে. তাপমাত্রায় শুকিয়ে গুঁড়ো করতে হবে। এরপর গরম পানিতে ১ গ্রাম শুকনা পাতা গুলিয়ে দিনে ২ বার পেঁপে পাতার চা খেতে হবে। ৪ দিন খেলে সম্পূর্ণ সুস্থ হবেন। বাসাবাড়ির আশেপাশে থেকে পেঁপে গাছের সবুজ পাতার চার ভাগের একভাগ গরম পানিতে ১০ মিনিট রেখে পানি খেলে একই ফলাফল পাওয়া যাবে।

এছাড়াও পেঁপে পাতায় প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বিদ্যমান, যা শরীর থেকে টক্সিক উপাদান বের করে ক্যান্সার সেল জন্ম নেওয়ার আশঙ্কা কমায়। এই পাতার চা লিভার, লাঞ্চ, প্যানক্রিয়াটিক এবং ব্রেস্ট ক্যান্সারকে প্রতিরোধ করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এলক্স-১২ মানুষের শরীরের প্লাটিলেট একটিভেটিং ফ্যাক্টর, পেঁপে পাতায় টোকোফেরল, ফ্লাভোনয়েড বিদ্যমান, এগুলো এলক্স-১২ ফ্যাক্টরকে একটিভেট করে। এর ফলে প্লাটিলেট জমাট বাঁধতে পারে না। শরীরের এনএস-১, আইজিএম, এই ফ্যাক্টরগুলোকে সরাসরি প্রভাবিত করে পেঁপে পাতার গুঁড়া। এছাড়া বেশ কিছু উপকারি উপাদান শরীরে ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। ফলে স্বাভাবিকভাবেই দেহে শর্করার মাত্রা বাড়ার কোনও আশঙ্কা থাকে না।

This post has already been read 4555 times!