Friday 19th of April 2024
Home / মৎস্য / চিংড়ি প্রসেসিং শিল্পে এ্যামোনিয়া গ্যাসের তীব্র সংকট

চিংড়ি প্রসেসিং শিল্পে এ্যামোনিয়া গ্যাসের তীব্র সংকট

Published at অক্টোবর ১২, ২০১৭

ছয় মাসে দাম বেড়েছে তিন-চারগুণ: শিল্পে ধ্বস নামার আশংকা

Shrimpফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা): খুলনাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের প্রধান উৎস সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি রপ্তানি। কিন্তু সাদা সোনা শিল্প একের পর এক বিপদের সন্মুখীন হচ্ছে। একদিকে চিংড়িতে অপদ্রব্য পুশ সিন্ডিকেট অন্যদিকে চিংড়ি প্যাকেজিংর প্রয়োজনীয় এ্যামোনিয়া গ্যাসের তীব্র সংকট। এক শ্রেণীর অসাধু এ্যামোনিয়া গ্যাস ডিস্ট্রিবিউটর সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে বর্তমানে হুমকির মুখে চিংড়ি রপ্তানি শিল্প। ফলে সাদা সোনাখ্যাত খুলনাঞ্চলের চিংড়ি প্রসেসিং মাছ কোম্পানিগুলোতে এ্যামোনিয়া গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে।

এ শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ এ্যামোনিয়া গ্যাস সংকট সৃষ্টি হওয়ার সুযোগ নিয়ে ডিস্ট্রিবিউটররা এর দামও বাড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস্ এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনসহ মাছ কোম্পানি মালিক পক্ষ বলছেন ডিস্ট্রিবিউটররা এ্যামোনিয়া গ্যাসের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে এ গ্যাসের দাম বৃদ্ধি করে দিয়েছে। ফলে চিংড়ি প্রসেসিং শিল্পে নিয়োজিতরা এ গ্যাস কিনতে একদিকে যেমন হিমশিম খাচ্ছেন, অন্যদিকে আর্থিকভাবে হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত। এভাবে চলতে থাকলে যেকোনো সময়ে চিংড়ি মাছ প্রসেসিং কোম্পানিগুলো বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা তৈরি করেছে এ্যামোনিয়া গ্যাস বিক্রির সিন্ডিকেট। এমন মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস্ এক্সপোটার্স এসোসিয়েশন ও মাছ কোম্পানিগুলো। তাদের মতে মানবদেহে যেমন রক্তের প্রয়োজন, ঠিক তেমনি মাছ কোম্পানিতে চিংড়ি প্রসেসিং কাজে এ্যামোনিয়া গ্যাসের প্রয়োজন। এক কথায়, এ্যামোনিয়া গ্যাস ছাড়া মাছ কোম্পানি ও বরফ কলগুলো প্রায় অচল।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস্ এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, খুলনায় নিবন্ধিত ৬৫টি মাছ কোম্পানি থাকলেও চালু রয়েছে মাত্র ২৫-৩০টি। আর বরফ কলের সংখ্যা ২ হাজারেরও অধিক। দেশের আশুগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা থেকে এসব প্রতিষ্ঠানে এ্যামোনিয়া গ্যাস সরবরাহ হয়ে থাকে। কিন্তু একটি গোষ্ঠী আর্থিক ফায়দা লুটতে এ্যামোনিয়া গ্যাসের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে রাখায় গ্যাসের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে আকাশ ছোঁয়া দাম বেড়েছে এ্যামোনিয়া গ্যাসের।

গত দুই মাস আগে ৫০ কেজি ওজনের এ্যামোনিয়া গ্যাসের যে সিলিন্ডার বিক্রি হয়েছে ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা, সেটির দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। ফলে প্রায় এক মাস ধরে খুলনার মাছ কোম্পানি ও বরফ কলগুলোতে চাহিদা অনুযায়ী এ্যামোনিয়া গ্যাস কিনতে পারছে না। ফলে গ্যাস সংকটের কারণে শিল্পে উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে যেকোনো সময়ে মাছ কোম্পানি ও বরফ কলগুলো বন্ধ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

জানা গেছে, ১৯৯১ সনে প্রতিষ্ঠিত জামালপুরের যমুনা সার কারখানায় প্রতিদিন সাড়ে ১৭শ’ মে. টন ইউরিয়া সার উৎপাদনে সক্ষম। ইউরিয়া তৈরির অন্যতম উপাদান অ্যামোনিয়া গ্যাস। সার উৎপাদনে যে পরিমাণ এ্যামোনিয়া গ্যাসের প্রয়োজন, কারখানাটি তারচেয়ে কিছু বেশি উৎপাদন করে।

সূত্র জানিয়েছে, ইউরিয়া সার প্রস্তুতের পর বাড়তি এ্যামোনিয়া গ্যাস আগে বাতাসে ছেড়ে দেয়া হতো। এতে আশপাশের পরিবেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ শুরু করে আন্দোলন। ফলে কারখানা কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে পর্যায়ক্রমে অতিরিক্ত গ্যাস প্রায় সাড়ে চার হাজার সিলিন্ডারে ভরে ২০১৪ সন থেকে বিক্রি শুরু করে।

এ সম্পর্কে রূপসা উপজেলাধীন চর রূপসাস্থ মডার্ন সী ফুডস ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব মো. রেজাউল হক বলেন, প্রায় এক মাস ধরে মাছ কোম্পানীতে এ্যামোনিয়া গ্যাসের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। আর এ সংকটের কারণে চিংড়ি ফ্রিজিং ও হিমাগারে চিংড়ি সংরক্ষণ কাজ ব্যহত হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে অধিকাংশ মাছ কোম্পানি ও বরফকলগুলো এক সময় বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সালাম সী ফুডস্ লিমিটেডের কারাখানা ব্যবস্থাপক আবু সুফিয়ান সরকার বলেন, মানবদেহে যেমন রক্তের প্রয়োজন, তেমনি মাছ কোম্পানির চিংড়ি প্রসেসিং কাজে এ্যামোনিয়া গ্যাসেরও প্রয়োজন রয়েছে। এ্যামোনিয়া গ্যাস ছাড়া একটি মাছ কোম্পানি কোনোভাবে চলতে পারেনা।

রূপালী সী ফুডস লিমিটেডের ব্যবস্থাপানা পরিচালক মো. কামরুল ইসলাম বলেন, প্রায় ছ’মাস ধরে তার মাছ কোম্পানিতে এ্যামোনিয়া গ্যাসের চরম সংকট চলছে। তিনি বলেন, প্রায় ৬ মাস আগে ৫০ কেজি ওজনের সিলিন্ডার ৫ হাজার টাকায় কিনেছি, বর্তমানে সেই গ্যাস সিলিন্ডার কিনতে হচ্ছে ২০ হাজার টাকায়। সরবরাহ কমে যাওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তিনি। এভাবে চলতে থাকলে মাছ কোম্পানিগুলো চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানান তিনি।

বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস্ এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি শেখ মো. আব্দুল বাকী এ এগ্রিনিউজ২৪.কম কে বলেন, খুলনার প্রত্যেকটি মাছ কোম্পানিতে এ্যামোনিয়া গ্যাসের তীব্র সংকট চলছে। একটি কুচক্রী-গোষ্ঠী তাদের স্বার্থ হাসিলের জন্য এ্যামোনিয়া গ্যাসের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি কওে রেখেছে। আর এ সংকটের সুযোগে গ্যাসের দামও বাড়িয়ে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। এভাবে চলতে থাকলে যেকোনো সময়ে এ শিল্পে ধ্বস নামতে পারে, এমনকি মাছ কোম্পানিগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে বলে জানান তিনি।

This post has already been read 2986 times!