Thursday 25th of April 2024
Home / অর্থ-শিল্প-বাণিজ্য / চাল, পেঁয়াজ ও আলুর বেশি দামের মূল কারণ মজুতদারি – বিএআরসি গবেষণাপত্র

চাল, পেঁয়াজ ও আলুর বেশি দামের মূল কারণ মজুতদারি – বিএআরসি গবেষণাপত্র

Published at জানুয়ারি ২৬, ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক: গেল এবং চলতি বছরে চাল, পেঁয়াজ ও আলু- এই তিনটির দামই বেশি এবং এর মূল কারণ হিসেবে মজুতদারিকে দায়ী করেছেন গবেষকগণ। মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) রাজধানীর কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বিএআরসি) মিলনায়তনে আয়োজিত কর্মশালায় “বাংলাদেশ চাল, আলু ও পেঁয়াজের প্রাপ্যতা ও দামের অস্থিরতাঃ একটি আন্ত:প্রাতিষ্ঠানিক গবেষণা প্রতিবেদন-২০২০” -এ বেশ কয়েকটি কারণের মধ্যে প্রধানতম কারণ হিসেবে ‍উক্ত তথ্যই উঠে এসেছে। গবেষণা প্রতিবেদনে চাল, পেঁয়াজ ও আলুর দাম বৃদ্ধির কারণ এবং রোধকল্পে ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ প্রদান করা হয়। কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষিমন্ত্রী ড. মো: আব্দুর রাজ্জাক এমপি।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মোতাবেক বিএআরসির বাস্তবায়নে ও কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন (কেজিএফ) অর্থায়নে চাল, আলু ও পেঁয়াজ ইত্যাদির দাম বৃদ্ধির কারণ উদঘাটনের জন্য তিনটি স্টাডি টিমের মাধ্যমে জরিপ পরিচালনা করা হয়। ধান/চাল বিষয়ক গবেষণার ক্ষেত্রে নওগাঁ, শেরপুর, কুমিল্লা ও ঢাকা জেলা, আলুর ক্ষেত্রে মুন্সিগঞ্জ, বগুড়া, রংপুর ও ঢাকা জেলা এবং পেঁয়াজের ক্ষেত্রে ফরিদপুর, নাটোর, পাবনা ও ঢাকা জেলায় জরিপ পরিচালনা করা হয়।

বিএআরসি কর্তৃক উপস্থাপিত গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা যায়, চালের মূল্য বৃদ্ধির পিছনে মূল কারণ হলো: প্রায় সকল কৃষকই ধান কর্তনের প্রথম মাসের মধ্যে বাজারজাতযোগ্য উদ্বৃত্ত বিক্রি করে দেন, গত বোরো মৌসুমে ধান বিক্রির ধরণটি পরিবর্তিত হয়েছে। এ মৌসুমে কৃষকরা তাদের ধান মজুদ থেকে ধীরে ধীরে বিক্রি করেছেন। ব্যবসায়ী ও মিল মালিকরা করোনা পরিস্থিতিতে খাদ্য ঘাটতির আশঙ্কা করেছিলেন এবং মজুদ ধরে রেখেছিলেন।

আলুর মূল্য বৃদ্ধির পিছনে ভবিষ্যতে মূল্য বৃদ্ধির আশায় কৃষক ও ব্যবসায়ী পর্যায়ে আলুর মজুত এবং হিমাগার থেকে আলুর কম সরবরাহ। হিমাগারে মজুতকৃত আলুর রশিদ পুন:পুন হস্তান্তর। পার্শ্ববর্তী কয়েকটি দেশে আলু রপ্তানি। মৌসুমি ব্যবসায়ী কর্তৃক আলুর বিপুল মজুত এবং কৃত্রিম সংকট তৈরি। বর্ষা মৌসুমের ব্যাপ্তি দীর্ঘতর হওয়ায় সবজির উৎপাদন হ্রাস এবং আলুর চাহিদা বৃদ্ধি। হিমাগারে আলুর সংরক্ষণের পরিমাণ কম। টিসিবি কর্তৃক আলূর বিতরণ অপ্রতুল প্রভৃতি কারণ রয়েছে।

পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধির পিছনে দেশীয় অসাধু বাণিজ্য সিন্ডিকেট দ্বারা বাজারে কারসাজি এবং ভারতীয় রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা অথবা অতিমাত্রায় ভারতের উপর পেঁয়াজে আমদানির জন্য নির্ভরতা অন্যতম কারণ।

গবেষণায় চাল, আলু ও পেঁয়াজ ইত্যাদির দাম বৃদ্ধির উত্তরণের সুপারিশ করা হয়। ধান/চাল সংগ্রহ পদ্ধতির আধুনিকায়ন করা, কৃষকের নিকট থেকে সরাসরিভাবে ধান সংগ্রহ করা এবং মিলারদের মাধ্যমে তা চালে পরিনত করা। চিকন ও মোটা দানার চালের জন্য সরকারের পৃথক ন্যূনতম সহায়তা মূল্য (এমএসপি) ঘোষণা করা। ন্যুনতম ২৫ লক্ষ টন চাল সংগ্রহ করা এবং মোট উৎপাদনের প্রায় ১০ শতাংশ সংগ্রহ করার সক্ষমতা অর্জন করা যাতে করে সরকার বাজারে কার্যকরভাবে হস্তক্ষেপ করতে পারে।

আলুর ক্ষেত্রে সুপারিশ হলো:  হিমাগারে আলুর সংরক্ষণ ও আবমুক্তকরণ সরকার কর্তৃক নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারির মধ্যে রাখা। আলুর বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টিকারীদের সনাক্তকরণ এবং তাদের বিরুদ্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা। সরকার কর্তৃক আলুর উৎপাদন, চাহিদা, সরবরাহ ও মূল্য সংক্রান্ত তথ্য সঠিকভাবে উপস্থাপন করা এবং তা হালনাগাদ রাখা। সরকারিভাবে আলুর মজুত গড়ে তোলার জন্য সুপারিশ করা হয়।

পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি রোধ করার জন্য সংকটকালীন সময়ে পেঁয়াজ আমদানির জন্য দ্রুত একাধিক রপ্তানিকারক মুখোমুখি করা। অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে আমদানি নির্ভরতা হ্রাস করা। কৃষিমূল্য কমিশন গঠন এর মাধ্যমে সারা বছর বাজারে পেঁয়াজের দাম নির্ধারণ ও তদারকি করা এবং বাজারে পেঁয়াজের দাম হঠাৎ বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের জন্য অভ্যন্তরীণ সরবরাহ ও মজুতের অগ্রিম ব্যবস্থাপনা এবং সুচিন্তিত পরিকল্পনার সুপারিশ করা হয়েছে।

This post has already been read 1337 times!