Friday 29th of March 2024
Home / মৎস্য / কোরাল মাছের প্রজনন ও চাষ পদ্ধতি

কোরাল মাছের প্রজনন ও চাষ পদ্ধতি

Published at অক্টোবর ৯, ২০১৮

এ.কে.এম. সালাহ উদ্দিন সরকার : কোরাল বা ভেটকি মাছ এশিয়া অঞ্চলে Sea bass এবং অস্ট্রেলিয়ায় বারামুণ্ডি নামে পরিচিত। বাংলাদেশে এ মাছ কোরাল এবং ভেটকি এই দুই নামে পরিচিত। ভেটকি লম্বাটে ও চাপা ধরণের। এদের নিচের চোয়াল উপরের চোয়ালের চেয়ে কিছুটা বড়, পিঠের দিক সবুজমতো এবং পেটের দিক রুপালি রঙের। এ মাছ উষ্ণমণ্ডলীয় অঞ্চল বিশেষত পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগর ও ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দেখা যায়। তাছাড়া এশিয়ার উত্তরাঞ্চল, কুইন্সল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চল এবং পূর্ব আফ্রিকার পশ্চিমাঞ্চলেও এদের দেখা যায়।

এর (বৈজ্ঞানিক নাম: Lates calcarifer) (ইংরেজি: Barramundi) হচ্ছে Latidae পরিবারের Lates গণের একটি স্বাদু পানির মাছ। এই মাছ ইন্দো-ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয়, বাংলাদেশ, চীন, তাইওয়ান, জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং পাপুয়া নিউগিনি অঞ্চলে পাওয়া যায়।

কোরাল বা ভেটকি মাছ পুষ্টি,স্বাদ ও উচ্চমূল্যের কারণে মাছ চাষিদের কাছে আকর্ষণীয়, বর্তমানে দেশে-বিদেশে ভেটকি মাছের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। আনুমানিক ৪০ বছর আগে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, হংকং, অস্ট্রেলিয়া ও তাইওয়ানের উপকূলীয় অঞ্চলে এবং স্বাদুপানির পুকুরে, নদীতে ও নদীর মোহনায় ভেটকির চাষাবাদ খাঁচার মাধ্যমে শুরু হয়। বাংলাদেশে সাধারণত বেড়জাল, ফাঁদজাল ও তলদেশে ট্রলনেট ব্যবহার করে বঙ্গোপসাগর ও সংলগ্ন এলাকার চট্টগ্রাম, বরিশাল, খুলনা, পটুয়াখালীর উপকূলীয় অঞ্চলে নদীর মোহনায় নদীতে এবং চিংড়ির ঘেরে ভেটকি পাওয়া যায়।

এ মাছে উন্নতমানের আমিষ  ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি এসিড থাকে। এটা আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং রক্তের চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। ভেটকিতে ভিটামিন এ, বি এবং ডি, খনিজ পদার্থ ক্যালসিয়াম, জিংক, লৌহ, পটাসিয়াম, ম্যাগনিসিয়াম এবং সিলেনিয়াম যথেষ্ট পরিমাণে থাকে। এগুলো শরীর গঠন ও বৃদ্ধির কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

প্রজনন পদ্ধতি

মিঠা পানিতে ও অল্প নোনা পানিতে এরা দ্রুত বৃদ্ধি হয়ে ১ থেকে দেড় বছর বয়সে ১.৫–২.৫ কেজি আকারের হয়ে প্রজননের সক্ষম হয়ে উঠে এবং প্রজননের জন্য গভীর সমুদ্রে পাড়ি দেয়, এদের পুরুষ ও স্ত্রী মাছের মধ্যে প্রকারভেদ রয়েছে, কিন্তু এরা উভয় লিঙ্গ গ্রোত্রের মধ্যে পড়ে, অর্থাৎ পুরুষ মাছ স্ত্রী মাছে এবং স্ত্রী মাছ পুরুষ মাছে পরিণত হতে পারে, সাধারণত পুরুষ মাছ আকারে ছোট ২-৩ কেজি ওজনের হয়ে থাকে, পুরুষ মাছ ৪ কেজি বা তার বেশী ওজন হয়ে গেলে স্ত্রী মাছে রূপান্তরিত হয়ে যায়, অগভীর সমুদ্র অঞ্চলের ৫-১১ মিটার গভীরে এদের প্রধান প্রজনন ক্ষেত্র।

ভেটকি মাছ প্রধানত দুই ভাবে প্রজনন হয়ে থাকে থাকে-

১. প্রাকৃতিক প্রজনন

কোরাল বা ভেটকির প্রজনন ক্ষমতা বেশি, এরা বছরে ৪০ থেকে ৭০ লাখ ডিম দেয়। এরা দ্রুত চলাচল করে এবং বেশি লবণাক্ততা সহিষ্ণু প্রজাতির মাছ এবং সারা বছর ডিম দিয়ে থাকে। তবে এপ্রিল থেকে আগস্ট মাস এদের মূল প্রজননকাল হিসেবে বিবেচিত। এ সময় এক সেন্টিমিটার আকারের অনেক পোনা ধরা পড়ে। এ মাছের দৈহিক বৃদ্ধি মিঠা পানিতে। অল্প লোনা পানিতে এমনকি নদী ও সাগরের মোহনায় হয়, কিন্তু ডিম পাড়ার জন্য এরা মোহনার কাছাকাছি সমুদ্রে আসে। বর্ষার শুরুতে পুরুষ মাছ স্ত্রী মাছের সঙ্গে মিলেনের জন্য নদ-নদীর নিন্ম অববাহিকায় আসে। ভরা পূর্ণিমা এবং অসাবস্যার শুরুতে জোয়ারের  পানি আসার সময় ৫ থেকে ১০ কেজি ওজনের প্রতিটি স্ত্রী ভেটকি ২১ লাখ থেকে ৭১ লাখ পর্যন্ত ডিম পাড়ে। তারপর জোয়ারের পানিতে ভেসে ডিম এবং রেণু পোনা নদীর মোহনায় চলে আসে। রেণু পোনা মোহনা হতে নদীর উচ্চ অববাহিকার দিকে আসে। পরে পূর্ণবয়স্ক অবস্থায় ডিম পাড়ার জন্য আবার সাগরের দিকে ফিরে যায়।

২.কৃত্রিম প্রজনন

প্রজনন ক্ষমতা বেশি হওয়ায় মাঝারি আকৃতির একটি হ্যাচারি পরিচালনার জন্য কমসংখ্যক ব্রুড মাছই যথেষ্ট। হ্যাচারি যৌন মিলনে সক্ষম  পুরুষ (২কেজি ওজন) ও স্ত্রী (৫-১০ কেজি ওজনের) মাছ ট্যাংকে ১ ঘনমিটার অথবা পুকুরে ০.৫ ঘনমিটার (সম্ভাব্য) বাখা হয়, প্রায় ৩০ পিপিটি নোনা পানি দিয়ে ৭০-৭৫% প্রায় পানি পরিবর্তন করতে হয়, কম দামি মাছ যেমন তেলাপিয়াকে সেখানে খাদ্য হিসাবে দেওয়া হয় দেহের ওজনের ৫-৬% হারে, গভির পর্যবেক্ষণের মধ্যে রাখা হয় ও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় এবং প্রয়োজন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়, পরিপক্ক স্ত্রী মাছের ডিমের ব্যাস ৪৫০ মি.মি হলেও পুরুষ মাছের স্মাম্প (মিন্ট) সহজে বের হলে তাদের ডিম পাড়ার ট্যাংকে স্থানান্তরিত করা হয় ও স্ত্রী ও পুরুষ মাছের পেশীতে LHRHa হরমোন দেহের ওজনের কেজি প্রতি ৬০-৭০ গ্রাম হারে এককালিন প্রয়োগ করা হয়। স্ত্রী মাছ হরমোন প্রয়োগের ৩০-৩৫ ঘণ্টা পর ডিম পারে, নিষিক্ত ভাসমান ডিম গুলি বিভিন্ন পদ্ধতিতে সংগ্রহ করে ইনকিউবেশন ট্যাংকে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে প্রতি লিটারে প্রায় ৬০০–৯০০ টি ডিম থাকে, ১৬-১৮ ঘণ্টা পর ডিম ফুটে ১.৪-১.৬ মি.মি, সাইজের রেনু/ লার্ভা বা ডিম পোনা বের হয়ে আসে। এই  রেনু/ লার্ভা বা ডিম পোনা গুলিকে নার্সিং ট্যাংকে প্রতি লিটার ঘনত্বে ১০-১৫টি রাখা হয়, তৃতীয় দিন থেকে এদেরকে রটিফার খাওয়ানো হয় প্রায় ৯-১০দিন, যেখানে প্রতি লিটারে ৫-৬ টি রটিফার থাকে, এরপর ১৫ দিন পর্যন্ত রটিফার ও আরটিমিয়া খাওয়ানো হয় ও পরের ২০ দিন পর্যন্ত শুধু আরটিমিয়া নাউপ্পি খাওয়ানো হয় ও  কিছু কিছু পাউডার ফিড (পাউডার ফিড প্রায় ৫০% প্রোটিন ও উচ্চ এমাইনো এসিড প্রোফাইল সমৃদ্ধ হতে হয়) দিয়ে ফিডে অভ্যস্ত করা হয়, তারপর ০.৭–০.৮ সে,মি, সাইজের ধানি পোনাকে হ্যাচারিতে বা পুকুরের হাপায় নার্সারি খাদ্য খাইয়ে খাদ্য খাওয়ায় অভ্যস্ত করা হয় বা অনেকে মাছের মাংস খেতেও অভ্যস্ত করে থাকে। বিশেষ করে যারা পরবর্তীতে মাছ খাইয়ে অল্প ঘনত্বে করবে অনেকটা প্রাকৃতিক নিয়মে চাষ করবে।

হ্যাচারিতে নার্সারি পালন

কোরাল বা ভেটকি মাছের ধানি পোনা যখন ১.৫–৩ সে,মি, সাইজের হয় তখন প্রতি ঘনমিটারে ৮০০–১১০০ টি হারে নার্সিং ট্যাংকে বা পুকুরে হাপা তৈরী করে ছাড়া হয় এবং নার্সারি খাদ্য পরিমিত পরিমাণে খাওয়ানো হয়, আবার  অনেকে মাছের মাংস ও ছোট চিংড়ী খেতেও অভ্যস্ত করে থাকে, বিশেষ করে যারা পরবর্তীতে মাছ খাইয়ে অল্প ঘনত্বে অনেকটা প্রাকৃতিক নিয়মে চাষ  করবে।

একটা ব্যাপার মাথায় রাখতে হবে যে, কোরাল বা ভেটকি যেহেতু বড় মাছ ছোট মাছকে খেয়ে ফেলে তাই গ্রেডিং পদ্ধতি অবলম্বন করে ট্যাংকে একই মাপের পোনা নার্সিং করতে হবে এবং ৩-৪ দিন অন্তর বড় মাছ বাছাই করা হয়, নার্সিং ট্যাংকে প্রতিদিন প্রায় ৩৫% পানি পরিবর্তন করতে হয়, আধা নোনা পানির মাছ হওয়ায় ভেটকি নার্সিং অবস্থায় প্রায় ১০ পিপিটি লবনাক্ততা পছন্দ করে,নার্সিং ট্যাংকে প্রায় ৩০-৪০ দিন পালন করা হয়, নার্সিং ট্যাংকে বেঁচে থাকার হার ( Survival rate  ) প্রায় ৭০-৮০% হয় এবং গড়ে(Average) ১০–১২ সেমি সাইজের মাছ সংগ্রহ করা হয়ে থাকে মজুদ পুকুরে চাষ করার জন্য।

পুকুরে নার্সারি পালন

কেউ কেউ ১ মিটার গভীরতার নার্সিং পুকুরের চারদিকে ভালোভাবে নেটিং করে কোরাল বা ভেটকি মাছের ১.৫–৩ সে,মি, সাইজের ধানি পোনা প্রতি বর্গ মিটারে ২৫-৩৫টি হারে ছাড়া হয়, পুকুরে যথেষ্ট পরিমাণে জুপ্লাংকটন তৈরী করা হয় এবং এখানেও নার্সারি খাবার পরিমিত মাত্রায় খাওয়ানো হয়, আবার  অনেকে মাছের মাংস ও ছোট চিংড়ী খেতেও অভ্যস্ত করে থাকে, বিশেষ করে যারা পরবর্তীতে মাছ খাইয়ে অল্প ঘনত্বে করবে অনেকটা প্রাকৃতিক নিয়মে চাষ করবে, ২০-২৫ দিন পর নার্সিং করার পর বেঁচে থাকার হার ( Survival rate  ) প্রায় ৭০-৮০% হয় এবং গড়ে (Average) ১০–১২ সে.মি সাইজের মাছ সংগ্রহ করা হয়ে থাকে মজুদ পুকুরে চাষ করার জন্য।

মজুদ পুকুরে ভেটকি বা কোরাল মাছ প্রধানত তিন পদ্ধতিতে চাষ করা যায়:

. সনাতন পদ্ধতি
এই পদ্ধতিতে প্রতি শতাংশে ১৫-২০ টি মাছ দেয়া যেতে পারে, ছোট অবস্থায় জু প্লাংকটন (প্রাণীকণা) খেয়ে জীবন ধারন করে, পরবর্তীতে পুকুরের ছোট মাছ শিকার করে খেয়ে ধীরে ধীরে ১৮-২০ মাস পর ১–১.৫ কেজি ওজনের হয় এবং বিক্রির উপযোগী হয়ে উঠে, এই পদ্ধতিতে বানিজ্যক চাষ লাভজনক হবে না।

. আধা নিবির পদ্ধতি
দুই পদ্ধতিতে আধা নিবির শোলের চাষ করা যায়:

. মিশ্র চাষ পদ্ধতি

মিশ্র চাষে কোরাল বা ভেটকির সাথে তেলাপিয়া ও ছোট মাছ চাষ করা হয়। মুলত এ মাছের খাদ্য হিসাবে ব্যবহার করা হয়। তেলাপিয়া পুকুরে বাচ্চা উৎপাদন করতে পারে যা ভেটকি মাছের খাদ্য হবে। সাধারণত  প্রতি শতাংশে ৩০ টি ভেটকি ও একই সাইজের শতাংশ প্রতি ৪০-৫০ টি তেলাপিয়া ছাড়া হয়, প্রাথমিকভাবে ভেটকি মাছ ছোট তেলাপিয়া এবং  জু প্লাংকটন (প্রাণীকণা) খেয়ে জীবনধারণ করে ও পরে বড় তেলাপিয়া খেয়ে থাকে। তেলাপিয়ার সংখ্যা কমে গেলে আবার নতুন তেলাপিয়া ছাড়া হয়, আবার অনেক ক্ষেত্রে বড় মাছকে ছোট ছোট টুকরা করে কোরাল বা ভেটকি মাছকে খাওয়ানো হয়, ধীরে ধীরে ১৮-২০ মাস পর ১–১.৫ কেজি ওজনের হয় এবং  বিক্রির উপযোগী হয়ে উঠে, আর শতাংশ প্রতি ৩০ টি করে ভেটকি মাছ ১৮-২০ মাস সময় নিয়ে চাষ করলে জমির ভাড়ার টাকা উঠিয়ে সব খরচের টাকা বাদ দিলে লাভ করা একটু কঠিন হবে।

. রেডি ফিড (সম্পুরক খাবার)

এই পদ্ধতিতে প্রতি শতাংশে ৩০০ -১০০০ টি মাছ দেয়া যেতে পারে, রেডি ফিড (সম্পুরক খাবার) দিয়ে ভেটকি মাছ চাষ ব্যবস্থাপনা অন্য মাছ চাষ ব্যবস্থাপনা থেকে ভিন্ন, বিশেষ করে খাদ্য ব্যবস্থাপনা। আমরা জানি কোরাল বা ভেটকি মাছ সাধারণত অন্য মাছ ও প্রাণীকণা খেয়ে জীবনধারণ করে, তাই স্বভাবগত ভাবেই ভেটকি ছোট ধানি পোনা প্রথমেই খাদ্য গ্রহন করে না। তাদের জন্য “আরটিমিয়া” (এক ধরনের প্রাণীকণা) ২৮ পিপিটি লবণাক্ত পানিতে  চাষ করতে হয় ট্যাংকিতে। একেবারে শুরুতে রটিফার ও আরটিমিয়া দেওয়া হয় খাদ্য হিসেবে, তার কয়েকদিন পরেই আরটিমিয়ার সাথে নার্সারী খাবারও দেওয়া হয়। ধীরে ধীরে খাদ্য সরবরাহ বাড়িয়ে আরটিমিয়া কমিয়ে শতভাগ ফিড (খাদ্য) নির্ভর করতে হয়। তবে শোল মাছকে ফিডে অভ্যস্ত করার চাইতে ভেটকি মাছকে খাদ্যে অভ্যস্ত করা সহজ। এখানে উল্লেখ্য, ভেটকি মাছের ফিডে প্রাথমিক অবস্থায় প্রায় ৫০ ভাগ প্রাণীজ প্রোটিন ও উচ্চ এমাইনো এসিড প্রোফাইল সমৃদ্ধ হতে হয়, এই মাছের খাবারে যথাযথ প্রোটিন ছাড়াও বিশেষ টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়। খাদ্যের গুনগত মানের উপর ভিত্তি করে ৭-৯ মাস পর বিক্রির উপযোগী গড়ে ১–১.৫ কেজি ওজনের হয়ে উঠে। আবার ইচ্ছে করলে ১৪-১৬ মাস সময় নিয়ে চাষ করলে প্রতিটির গড় ওজন ২.৫-৩.৫ কেজি হয়ে যাবে, আমাদের দেশের প্রক্ষাপটে এই পদ্ধতিটাই  জনপ্রিয় এবং বেশ লাভজনক হবে বলে আমার ধারনা।

. নিবিড় পদ্ধতি:
এই পদ্ধতিতে প্রতি শতাংশে প্রায় ২৫০০–৩০০০ টি কোরাল বা ভেটকি মাছ দেয়া যেতে পারে। খাদ্য ব্যবস্থাপনা রেডি ফিড (সম্পুরক খাবার) খাদ্য হিসাবে পুকুরে দিয়ে চাষ করা ব্যবস্থাপনার মতই। তবে সেখানে সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক টেকনোলজিগুলো ব্যবহার করা হয়। খাদ্যের গুনগত মানের উপর ভিত্তি করে ৮–১০ মাস পর বিক্রির উপযোগী গড়ে ১–১.৫ কেজি ওজনের হয়ে উঠে। বর্তমানে আমাদের দেশে এই পদ্ধতিতে  ভেটকি মাছ চাষ করাটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এখানে উল্লেখ্য, ভেটকি মাছের ফিডে প্রাথমিক অবস্থায় ৫০ ভাগ প্রাণীজ প্রোটিন ও উচ্চ এমাইনো এসিড প্রোফাইল সমৃদ্ধ হতে হয়। এই মাছের খাবারে যথাযথ প্রোটিন ছাড়াও বিশেষ টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ভাল মানের ভেটকি মাছের কোন ফিড বাজারজাত করা হয় না। সঠিক মাত্রায় খাবার না দিলে বড় মাছ ছোটটিকে খেয়ে ফেলবে।

হ্যাচারির জন্য পানির গুণগত মান:

কোরাল বা ভেটকি চাষ ও হ্যাচারি স্থাপনের জন্য যে সমস্ত গুণাবলি বজায় রাখতে হবে তা নিম্নে দেওয়া হল-

ক) পানির তাপমাত্রা থাকা উচিত ২৮–৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস (পানির তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর বেশি হওয়া ঠিক হবেনা)

খ) লবণাক্ততা:

হ্যাচারির জন্য: ২৯ – ৩২ পিপিটি

পুকুরে চাষের জন্য: ০ -১০ পিপিটি

গ) দ্রবিভুত অক্সিজেন: পিপিএম বা এর উপর হতে হবে

ঘ) পানির পিএইচ: ৭.৫ – ৮.৫

ঙ) ক্ষারত্ব: ৮৫ – ১৩০ পিপিএম

চ) হার্ডনেস: ৬০ – ৯০ এমজি/লি.

ছ) ফসফেট: ১০০ পিপিএম এর কম

সাধারণ রোগ বালাই ও চিকিৎসা

সাধারণত কোরাল বা ভেটকি মাছ ক্যালিগাস ও লার্ন্যানথোপাস প্রজাতির পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত হয় বেশী। পরজীবী আক্রমণের মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিকর হলো ডিপ্লেকটেনাম ল্যাটেসি, আক্রান্ত মাছ খাদ্য খায় না, চলাফেরা করতে চায় না, ও আলাদা সাঁতার কাটে। পরজীবী আক্রান্ত হওয়ার পরবর্তীতে তা ক্ষতরোগে পরিণত হয়। এ রোগে আক্রান্ত হলে প্রাজিকুইন্টাল ও বিটাগ্লুকান সমৃদ্ধ এসজি কুইক ক্লিন প্রতি কেজি খাবারের সাথে ৫-৭ দিন খাওয়াতে হবে। কিছু পরজীবীকে প্রতি একর জলাশয়ে ৪ ফুট গভিরতায় ৫০ এম এল প্যারাটিক্স প্রয়োগে পরিত্রাণ পাওয়া যায়।

তাছাড়াও অন্যান্য যেকোন রোগে আক্রান্ত হলে অভিজ্ঞ মৎস্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।

লেখক: সত্ত্বাধিকারী, সরকার এগ্রি কমপ্লেক্স (একটি জিরো বাজেট ন্যাচারাল ফার্ম); ব্যবস্থাপনা পরিচালক, এডভান্স এগ্রোটেক (বিডি) লিমিটেড।

akmsus@gmail.com

This post has already been read 17687 times!