Friday 29th of March 2024
Home / অর্থ-শিল্প-বাণিজ্য / কোরবানির চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণে ব্যবস্থা নিতে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত

কোরবানির চামড়া সংগ্রহ ও সংরক্ষণে ব্যবস্থা নিতে কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত

Published at ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২০

নিজস্ব প্রতিবেদক: আসন্ন কোরবানির চামড়া যথাযথভাবে সংগ্রহ ও সংরক্ষণের বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে শিল্প, বাণিজ্য, পরিবেশ ও বন, ধর্ম, তথ্য মন্ত্রণালয়, এনবিআর, অর্থ বিভাগ, ট্যারিফ কমিশন, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং চামড়া শিল্পসংশ্লিষ্টদের অংশগ্রহণে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। কমিটি আগামী সাত কর্মদিবসের সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা করে একটি সুপারিশ পেশ করবে।

বুধবার (১২ ফেব্রুয়ারি) শিল্প মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে চামড়া শিল্পের উন্নয়নে সুপারিশ প্রদান ও কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে গঠিত টাস্কফোর্সের প্রথম সভায় এ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বক্তৃতা করেন।

সভায় চামড়া ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকরা আড়তদারদের কাছ থেকে যথাসময়ে কোরবানির চামড়া না কিনলে সেগুলো সরকারি উদ্যোগে জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের বিভিন্ন গুদামে ন্যূনতম তিন মাস সংরক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এছাড়া চামড়া সংরক্ষণের জন্য কওমি মাদ্রাসাগুলোকে প্রস্তুত রাখা হবে। এজন্য তাদের ভর্তুকি প্রদান করা হবে। প্রয়োজন হলে উপজেলা পর্যায়ে ন্যূনতম দুইজন ডিলারকে চামড়া সংরক্ষণ ও বিপণনের জন্য নিয়োগ দেয়া হবে। এজন্য তাদেরকে প্রয়োজনে প্রণোদনা দেয়া হবে মর্মে সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। এছাড়া, পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজন হলে সাময়িকভাবে কাঁচাচামড়া/ ওয়েট-ব্লু চামড়া রপ্তানির অনুমোদন দেয়া হবে। এর জন্য সরকারের রপ্তানি নীতি সংশোধন করার দরকার হলে, তা-ও করা হবে বলে জানানো হয়।

সভায় আরো জানানো হয়, গত ইদুল আযহায় আড়তদারদের কাছ থেকে চামড়া ক্রয়ের জন্য ট্যানারি মালিকদের অনুকূলে ৬৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হলেও ট্যানারিগুলো মোট ৪৩৮ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে। গতবারের অভিজ্ঞতার আলোকে আগামী ইদুল আযহায় কোরবানির চামড়া কেনার জন্য ট্যানারি মালিকদের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ সংস্থানের বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া হবে। গতবার অর্থছাড়ের ক্ষেত্রে যেসব দীর্ঘসূত্রতা ও সমস্যা দেখা দিয়েছিল, সেগুলো নিরসনের চেষ্টা করা হবে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণের জন্য পেশাদার ও মৌসুমি কোরবানির পশু প্রক্রিয়াজাতকারী, ফড়িয়া, মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী ও আড়তদারদের মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে চলমান হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমকে আরও শক্তিশালী করা হবে বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। গতবছর ৯ হাজার জনকে এ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে বলে সভায় অবহিত করা হয়।

এছাড়া, চামড়া সংরক্ষণে জনসচেতনতা তৈরি কার্যক্রমে স্থানীয় প্রশাসন, মসজিদের ঈমাম, মাঠ পর্যায়ে ইসলামী ফাউন্ডেশন, আলেম-ওলামাসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে এবং টিভিসি তৈরি, ইউটিউবসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভিডিও আপলোড করে এ বিষয়ে প্রচার ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে বলে সভায় সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

সভায় শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন বলেন, চীনে করোনা ভাইরাস বিস্তারের ফলে দেশীয় চামড়া শিল্প যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেজন্য সরকার বিকল্প বাজার অনুসন্ধান করছে। ইউরোপের বাজারে দেশীয় চামড়াজাত পণ্য রপ্তানির লক্ষ্যে ট্যানারিগুলোকে লেদার ওয়ার্কিং গ্রুপ্র (এলডব্লিউজি)-এর সার্টিফিকেশন অর্জন করতে হবে। এজন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে সাভারে চামড়া শিল্প নগরীতে সিইটিপি স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। সার্টিফিকেশন অর্জনে অন্যান্য শর্ত পূরণে ট্যানারি মালিকদের আরো সক্রিয় হতে হবে।

বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী বলেন, কোরবানির চামড়ার সাথে ধর্মীয় অনুভূতি জড়িত। দেশীয় চামড়া শিল্পের স্বার্থে ট্যানারিগুলোকে রক্ষা করতে হবে। সে সঙ্গে কোরবানির চামড়া যাতে নষ্ট না হয় এবং তৃণমূলের চামড়া ব্যবসায়ীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে বিষয়টিও দেখতে হবে। সকলের স্বার্থ রক্ষায় যা করণীয় সরকার সেটি করবে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন কোরবানির সময় চামড়া সংক্রান্ত সমস্যাসমূহ নিয়ন্ত্রণে সকল অংশীজনদের পারস্পরিক আস্থা বজায় রেখে একসাথে কাজ করার আহবান জানান।

শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার বলেন, ট্যানারিগুলো যাতে ইউরোপের বাজার ধরতে পারে সেজন্য তাদের ঋণ প্রাপ্তিতে সহযোগিতাসহ অন্যান্য বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পক্ষ হতে সবধরনের সহায়তা প্রদান অব্যাহত থাকবে। তিনি বলেন, হাজারীবাগে ট্যানারি মালিকদের জমি ফিরিয়ে দেয়া হবে। প্রতিমন্ত্রী সাভারে অবস্থিত চামড়া শিল্পনগরীর অভ্যন্তরীণ রাস্তাঘাট ও অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণসহ সকল কাজ দ্রুত সমাপ্ত করার জন্য প্রকল্প পরিচালককে নির্দেশনা প্রদান করেন।

সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম, শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুল হালিম, অতিরিক্ত সচিব বেগম পরাগ ও অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মফিজুল হক, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. শাখাওয়াত হোসেন, মৎস্য ও প্রানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, জন নিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম, বাংলাদেশ এ্যাক্রেডিটেশন বোর্ডের মহাপরিচালক মো. মনোয়ারুল  ইসলাম, বিসিকের পরিচালক ড. মোহাঃ আব্দুস ছালাম,  বাংলাদেশ ফিনিশড লেদার, লেদার গুডস এন্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টাস এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মাহিন, বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশনের সচিব মো. নূরুল ইসলাম, ইপিবি’র  পরিচালক মো. জাকির হোসেন, বিডা’র নির্বাহী সদস্য মোহসিনা ইয়াসমিন, বুয়েটের অধ্যাপক ড. মো. দেলোয়ার হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান ড. মো. রিয়াজুল হক, বিল্ডের সিনিয়র রিসার্চ এসোসিয়েট কানিজ ফাতেমা, সাভারে অবস্থিত ঢাকা চামড়া শিল্প নগরীর প্রকল্প পরিচালক জিতেন্দ্র নাথ পাল উপস্থিত ছিলেন।

পরে শিল্পমন্ত্রী নূরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ূন সভার সিদ্ধান্তসমূহ সাংবাদিকদের অবহিত করেন। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুন্সী, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

This post has already been read 3586 times!