Friday 19th of April 2024
Home / অন্যান্য / কলারোয়ায় উৎপাদিত মাটির টালী: সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

কলারোয়ায় উৎপাদিত মাটির টালী: সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত

Published at ফেব্রুয়ারি ৪, ২০১৯

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা): সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত কলারোয়ায় উৎপাদিত মাটির টালী রপ্তানীতে। আর এই রপ্তানী হচ্ছে মংলা সমুদ্রবন্দর দিয়ে। মংলা বন্দরে প্রতি মাসে গড়ে ৫০ হাজার ডলার মূল্যের মাটির টালী রপ্তানী হচ্ছে বিশ্বের সাতটি দেশে। সাতক্ষীরা জেলার কলারোয়া উপজেলার মুরারীকাটি ও শ্রীপতিপুরে মাটির কারিগররা গড়ে তুলছে বাহারী রংয়ের টালী। এখানে গড়ে উঠেছে ২০ টির বেশি মাটির টালী কারখানা। এ সকল কারখানা থেকে উৎপাদিত টালী দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশ থেকে নিয়ে আসছে ডলার ও ইউরো। এসব কারখানায় প্রতিদিন ৫’শ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে। মাটির তৈরি টালীর জন্য কলরোয়ার দিনকে দিন পরিচিতি পেয়েছে ইতালী নগর নামে।

স্থানীয় সূত্র জানান, ২০০৩ সালে কলরোয়ার উৎপাদিত মাটির টালী প্রথমে রপ্তানি হয় ইটালীতে। রুহুল আমীন নামের এক ব্যবসায়ী প্রথমে টালী রপ্তানী করেন। এরপর থেকে আরনো এক্সপোর্ট ইনপোর্ট, শুভ ট্রেড লিমিটেড, এফ এইচ খান লিমিটেড, মা কটেজ, নিকিতা ইন্টারন্যাশনাল, কটো ইনোভেটর, জে কে ইন্টারন্যাশনাল, পলো ইপো অরগানিক, ডি চন্দ্র পাল নামক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রায় আট বছর যাবৎ বিদেশি ক্রেতাদের চাহিদা পূরণ করে আসছে। প্রতিষ্ঠানগুলো ইটালী, দুবাই, ফ্রান্স, ইউ কে, অস্ট্রলিয়া, জার্মানী ও নেদারল্যান্ডে টালী রপ্তানী করে থাকে।

রপ্তানী উন্নয়ন ব্যুরো, খুলনার সূত্র থেকে জানা যায়, ২০১৮ সালের জুন মাসে ৩০ হাজার ১৫২ ডলার, জুলাই মাসে ৫৬ হাজার ৩৫৫ ডলার, আগষ্ট মাসে ৬১ হাজার ৮৪২ ডলার, সেপ্টেম্বর মাসে ৫২ হাজার ৩৬৪ মার্কিন ডলার, একই মাসে ১৪ হাজার ৪৮৯ ইউরো মূল্যের টালী বিদেশে রপ্তানী হয়েছে।

জে কে ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্যিক) আরিফুল ইসলাম বলেন, বিদেশিরা এখনকার টালী মেঝে ও দেওয়ালে ব্যবহার করছে। দুবাইতে বাংলাদেশী মুদ্রায় প্রতি পিস টালী ২৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। বর্ষা মৌসুম বাদে বছরের অন্যান্য সময় প্রতিটি কারখানায় গড়ে ৪০জন মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়।

তৎকালিন বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান ডব্লিউ মজিনা এই এলাকার টালী কারখানা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে তিনি পালপাড়ার বিভিন্ন ডিজাইনের টালী দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেন। কাররা এক্সপোর্ট-ইম্পোর্ট প্রাইভেট লিমিটেডের সত্ত্বাধিকারি রুহুল আমিন জানান, তিনি ইতালীতে টালী রপ্তানীর জন্য ভালো মাটি খুঁজতে থাকেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। অবশেষে তার সেই কাঙ্খিত মাটির সন্ধান পান এই মুরারীকাটি এলাকাতেই। রুহুল আমিনই সর্ব প্রথম এ এলাকায় রপ্তানীযোগ্য টালী ব্যবসার পথ দেখান।

কলারোয়া উপজেলা টালী মালিক সমিতির সভাপতি ও ক্লে টাইলস ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারি গোস্ট চন্দ্র পাল অপর এক গণমাধ্যমকে জানান, ১৯৪৭ সাল থেকে তারা টালী তৈরি করছেন। তাদের পূর্ব পুরুষরাও এ শিল্পের সাথে জড়িত ছিলেন। তিনি বলেন, গত বছর বিদেশে টালী রপ্তানি করে কলারোয়া টালী শিল্প পল্লীর কারখানা মালিকরা আয় করেছেন প্রায় ১২ কোটি টাকা। তিনি আরো বলেন, ইউরোপের বিভিন্ন দেশে দিন দিন আমাদের তৈরি করা টালীর চাহিদা বাড়ছে। তবে টালী কারখানার সংখ্যা বেশি হয়ে যাওয়ায় স্টক থেকে যাচ্ছে বেশি। গোষ্ঠ গোপাল আরও বলেন, প্রতি বছর এখান থেকে ৩-৪’শ কন্টেইনার টালী মংলা সমুদ্র বন্দর দিয়ে ইতালী যায়। বছরে ৬ থেকে ৭ মাস টালী তৈরি ও বিক্রয় হয়। সাধারণত বছরের অক্টোবর মাস থেকে শুরু হয় টালী তৈরি মৌসুম। চলে মে-জুন পর্যন্ত। বাকি সময় বর্ষাকাল থাকায় টালি তৈরি করা যায় না।

একেকটি টালীর একেক রকম নাম। রেক্ট্যাঙ্গগুলার, স্টেপ টাইলস, হেক্সা গোনার, স্কাটিং প্রভেন সালেহ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। প্রতি পিস টালীর দাম ৫টাকা থেকে ৭৫ টাকা পর্যন্ত। ৩০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য ২০ সেন্টিমিটার প্রস্থ ও ৩ সেন্টিমিটার পুরু একটি স্কয়ার টালীর দাম ১০ টাকা। ৫০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য ২৫ সেন্টিমিটার প্রস্থ ও ৩ সেন্টিমিটার পুরু রেকট্যাংগুলার টালির দাম ৩৫ টাকা, বহুল প্রচলিত ৩০ সেন্টিমিটার দৈর্ঘ্য ১৫ সেন্টিমিটার প্রস্থ ও আড়াই সেন্টিমিটার পুরু একটি রেকট্যাংগুলার টালীর দাম ৬ টাকা। আবার ৪০ সেন্টিমিটার প্রস্থ ও ৩ সেন্টিমিটার পুরু একটি স্কয়ার টালীর দাম ৪০ টাকা। স্কয়ার টালী সাধারণত দেয়ালের শোভা বর্ধনে ঘরের চালের ছাউনিতে ব্যবহার করে থাকে বিদেশীরা। ঘরের মেঝে সাজানোর জন্য রয়েছে ফুলের আকারে প্রভেন সালেহ। প্রতি পিস প্রভেন সালেহর দাম ২৫ টাকা। এভাবে একেকটি টালীর নকশা, গঠন ও আকার অনুযায়ী দামের হেরফের রয়েছে। ঘর সাজানোর জন্য সার্কেল টাইলস। ৪টি সার্কেল টাইলস নিয়ে একটি সেট।

This post has already been read 3556 times!