Thursday 28th of March 2024
Home / ফসল / উপকূলীয় লবণাক্ত জমিতে বাদাম চাষে আমূল পরিবর্তনের ছোঁয়া

উপকূলীয় লবণাক্ত জমিতে বাদাম চাষে আমূল পরিবর্তনের ছোঁয়া

Published at এপ্রিল ২৩, ২০১৯

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা): উপকূলীয় জনপদ কয়রায় লবণাক্ত জমিতে এই প্রথম বাদাম চাষ করে সফলতা দেখিয়েছে উত্তর বেদকাশির কৃষক শহিদুল ইসলাম। আর এটিকে কৃষি ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তনের ছোঁয়া বলে দেখছেন কয়রা প্রত্যন্ত এ জনপদের কৃষকরা। সরেজমিন কৃষি গবেষণা সুত্রে জানা গেছে, বাদাম একটি অর্থকরী ফসল। এটি অধিকাংশ মানুষের মুখরোচক খাবার।

এছাড়াও এটি একটি উৎকৃষ্ট ভোজ্য তেল বীজ। বীজে ৪৮-৫০ শতাংশ তেল ও ২২-২৯ শতাংশ আমিষ রয়েছে। এজন্য প্রত্যেক মানুষের বাদাম খাওয়ার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, কয়রা উপজেলার উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নের কৃষক মো. শাহিদুল ইসলাম ১ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করে সফল পেয়েছে। তিনি জানান, তার এ সফলতার পিছনে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর সরেজমিন গবেষণা বিভাগ এমএলটি সাইট কয়রার বিশেষ অবদান রয়েছে। তাদের সার্বিক তত্ত্বাবধানে উপকূলীয় এ এলাকায় কৃষি ক্ষেত্রে পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। গোপালগঞ্জ জেলায় বিএআরআই এর কৃষি গবেষণা কেন্দ্র স্থাপন ও দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পরিবেশ-প্রতিবেশ উপযোগী গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে।

ফলে কৃষি উন্নয়ন প্রকল্পের আর্থিক সহযোগিতায় স্থানীয় কৃষকরা বাদাম চাষের পাশাপাশি ধান, সূর্যমুখী, গমসহ কৃষি ক্ষেত্রে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা পাচ্ছে। তাদের এ ধরনের মহতী উদ্যোগে সাধুবাদ জানিয়েছে কয়রা জনপদের সাধারণ মানুষ। উত্তর বেদকাশির কৃষক মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, এই অঞ্চলে প্রথম বাদাম চাষ করতে আগ্রহী ছিলাম না। তার পরেও কৃষি গবেষণা বিভাগের পরামর্শে বাদাম চাষাবাদের জন্য আগ্রহী হয়ে উঠি। চাষাবাদের পর সুন্দর গাছ দেখে ও গাছের গোড়ায় বাদাম দেখে অতি উৎসাহী হয়ে স্থানীয় আরো অনেক কৃষককে বামাদ চাষের জন্য পরামর্শ দিয়েছি।

তিনি কৃষি গবেষণার কাছে বছরে ৩ বিঘা জমি চাষের বীজ দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। সরেজমিন গবেষণা বিভাগের এমএলটি সাইট কয়রার বৈজ্ঞানিক সহকারী মো. জাহিদ হাসান বলেন, বাদাম চাষের জন্য বেলে দোআঁশ মাটির প্রয়োজন। সেই হিসেবে উত্তর বেদকাশী ইউনিয়নকে বেছে নেই এবং এই বছর বাদামের ৩টি জাত বপন করেছি। এর ভিতর লবণাক্ত এলাকায় যে জাতটি বেশি ফলন হবে পরবর্তীতে সেটি বেশি করে বীজ দেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবি জানাবো। উত্তর বেদকাশি এলাকায় বাদাম বপনের পর সমস্ত জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ার পরও এত সুন্দর মাঠ দেখে অনেক কৃষক গবেষণা অফিসে এসে বাদাম চাষে আগ্রহ প্রকাশ করছে।

আগামীতে বেশি এলাকায় বাদাম চষের জন্য সহযোগিতা করা যায় সে ব্যাপারে সবার্ত্মক চেষ্টা করা হবে। তথ্যমতে বাংলাদেশে প্রায় ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে বাদাম চাষ করা হয়। বাদামের মোট উৎপাদন প্রায় ৪৭ হাজার মেট্রিক টন। এভাবে গবেষণার মাধ্যমে উচ্চ ফলনশীল জাতের ব্যবহার ও উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদের মাধ্যমে বাংলাদেশে চীনাবাদামের উৎপাদন বাড়ানো সম্ভব হবে বলে আশা করছে এ সকল গবেষণা প্রতিষ্ঠান।

সরেজমিন গবেষণা বিভাগ খুলনার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক ড. মো. হারুনর রশিদ বলেন, বর্তমান সরকার কৃষি বান্ধব সরকার, তারই লক্ষ্যে কয়রায় অনেক জমি আমন ধান কাটার পর পড়ে থাকে বিধায় উত্তর বেদকাশীতে গবেষণা করা হচ্ছে বাদামের বিভিন্ন জাতের উপযোগিতা যাচাই করার জন্য।এছাড়াও চলমান প্রকল্পের মাধ্যমে গম, সরিষা, তরমুজ, ভুট্রা ও সুর্যমুখির বিভিন্ন জাতের উপযোগিতা যাচাই করে গবেষণা করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, চলতি মাসে ওল ও মুখি কচুর বিভিন্ন জাতের উপযোগিতা যাচাইয়ের জন্য রোপন করা অব্যাহত রয়েছে। বর্তমান সরকারের ২০৪১ সালের রুপকল্প অনুযায়ী এক ফসলী জমিকে দুই ফসলী জমিতে এবং দুই ফসলী জমি ব্যবহার করে তিন ফসলীতে নিয়ে আসতে পারি এর জন্য গবেষণা কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। উপকুলীয় জনপথে কৃষকদের বাদাম চাষে বেশি আগ্রহী হওয়ায় এ অঞ্চলে বাদাম চাষ ভিক্তিক নতুন কৃষি অর্থনীতি সম্ভাবনার নতুন দ্বার খুলে যাবে বলে তিনি জানান।

This post has already been read 2779 times!