Friday 29th of March 2024
Home / উদ্যোক্তা কথন / ইটভাটাতে বিদেশি ফলের বাগান গড়ে আলোচিত চাঁদপুরের হেলাল উদ্দিন

ইটভাটাতে বিদেশি ফলের বাগান গড়ে আলোচিত চাঁদপুরের হেলাল উদ্দিন

Published at ডিসেম্বর ২৫, ২০২০

মাহফুজুর রহমান (চাঁদপুর প্রতিনিধি) : চাঁদপুর শহরতলীর শাহতলী গ্রামে নিজেদের ৬০ বছরের লাভজনক ইটভাটা ছেড়ে ভিনদেশী ফলের বাগানে লাভবান হয়েছেন সিনিয়র সাংবাদিক ও নতুন কৃষি উদ্যোক্তা হেলাল উদ্দিন। ঢাকায় দীর্ঘ ৩৭ বছরের সাংবাদিকতা ছেড়ে দেশে এসে তিনি গড়ে তুলেছেন ‘ফ্রুটস ভ্যালি’ নামের এগ্রো প্রকল্প। বাগানটির দুর্লভ জাত ও স্বাদের বিশ্বখ্যাত নানান সব ফল দেখার জন্য প্রতিদিনই দূর-দূরান্ত থেকে অসংখ্য মানুষ ছুটে আসছেন এই ফ্রুটস ভ্যালিতে।

প্রায় ৬০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মাটি, কাঠ পুড়িয়ে তৈরি করা হয়েছে ইট। আর এতে দখল-দূষণ হয়েছে পরিবেশের কোমল জমি। ইট তৈরির চিমনির বিষাক্ত কালো ধোঁয়ায় যেখানে বিদেশি ফল-তো দূরের কথা, স্বাভাবিক ফসলের উৎপাদনের চিন্তাই ছিল অসম্ভব ব্যাপার।

আর সেই জমিতেই এখন চাষ হচ্ছে দুর্লভ জাতের বিভিন্ন জাতের আম, পারসিমন, ব্লাড অরেঞ্জ, গ্র্যাপ ফ্রুটস, হলুদ,লাল, পিংক, বেগুনি এবং গোল্ডেন ড্রাগন ফল, বারোমাসি ভিয়েতনামের মাল্টা, কমলা, স্ট্রবেরিসহ বিখ্যাত ক্যান্টালোপ বা রকমেলন। শুধু তাই নয়, মাস্কমেলন, সাম্মাম, হানিডিউ ও আইসবক্স ইয়েলোসহ হরেক রকমের রসালো ও সুস্বাদু তরমুজসহ রয়েছে অরেঞ্জ, অস্ট্রেলিয়ান হানিগোল্ড, আলফানসো, ব্যানানা, নামডকমাই, কাটিমন, কিং অব চাকাপাত, মিয়াজাকি সহ নয় জাতের আম গাছ। চাষ হচ্ছে কেপসিকামসহ নানান জাতের ফল।

একদিকে ডাকাতিয়া নদী, অন্যদিকে রেলপথ।ডাকাতিয়া নদীর তীর ঘেষা আশিক মাওলানা বাড়ির এই জায়গাটিতে প্রায় ৬০ বছর ধরে ইটভাটা ছিলো। সাত একরের এই জায়গাটি বালু দিয়ে ভরাট করে বাগান নির্মাণের পর এখন মাচায় মাচায় শুধু দেখা মিলবে ঝুলতে থাকা বিচিত্র রঙের সারি সারি তরমুজ। তরমুজের পরই চোখে পড়বে ড্রাগন আর কেপসিকাম। শুধু তাই নয়, এসব জমির পাশে নতুন করে রোপণ করা হচ্ছে আরো নানা জাতের বিদেশি ফলের চারা।

এ নিয়ে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে বাগান মালিক হেলাল উদ্দিন। ‘ফ্রুটস ভ্যালি’র বাম্পার ফলনের খবর ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়ায় পুরো জেলায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। রসালো সব ফল কিনে এই প্রকল্পের প্রথম ক্রেতা হয়েছেন চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক।

বাগান মালিক হেলাল উদ্দিন জানান, ৬০ বছরের পুরনো দুটি ইটভাটা ছিলো এখানে। লোকালয় বিস্তৃত হওয়ায় এবং ভাটায় ইট পোড়ালে পরিবেশ দূষণের কবলে পড়বে। এমন আশঙ্কা থেকেই বন্ধ করে দেওয়া হয় ইটভাটাগুলো। তারপর মাত্র তিনমাস আগে সেখানে ফল বাগান তৈরি করতে তার উপযোগী পরিবেশ করা হয়।

তিনি আরও জানান, দেশে-বিদেশ থেকে যেসব ফল আমদানি করা হচ্ছে তার যেমন উচ্চমূূল্য। এছাড়া এসব ফলের মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সুতরাং বিদেশি আমদানি নির্ভরতা কমাতে এবং স্বল্পমূল্যে বাজারজাত করতে সেই বিদেশি ফলগুলোই দেশে উৎপাদনের উদ্যোগ নিয়েছি। এরমধ্যে বাণিজ্যিকভাবে বাজারজাত করতে রাজধানী ঢাকার নামিদামি বেশকিছু শপিংমল তার বাগান থেকে তরমুজসহ অন্যান্য ফল সরবরাহ করার জন্য আগাম বুকিং দিয়েছে বলেও জানান তিনি। অনলাইনে আগাম বুকিং দিলে সরাসরি বাগান থেকেও তাজা ফল সরবরাহ করা হবে। আমাদের লক্ষ্য থাকবে প্রকল্পের প্রথম ফলন থেকে নামমাত্র মূল্যে ক্রেতার কাছে তাজা ফল সরবরাহ করা। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ফ্রুটস ভ্যালি নামে এই বাগান থেকে প্রতিবছর উৎপাদন ব্যয় ছাড়াই অর্ধকোটি টাকা লাভের আশা করছেন মো. হেলাল উদ্দিন।

এদিকে ইটখোলার এ জমিতে এমন ফলন দেখে হতবাক হয়েছেন কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা বলেছেন, চাঁদপুরের মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বিদেশি জাতের ফল উৎপাদনে বেশ সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এরইমধ্যে এই বাগানের বিদেশি নানা জাতের তরমুজ বিক্রি শুরু হয়েছে। বেলে মাটিতে বিদেশি তরমুজের ফলন বেশ আশার আলো জাগিয়েছে।

This post has already been read 2584 times!