Friday 29th of March 2024
Home / সোনালী আঁশ / আমরণ অনশনে ৫৮৫ পাটকল শ্রমিক হাসপাতালে!

আমরণ অনশনে ৫৮৫ পাটকল শ্রমিক হাসপাতালে!

Published at জানুয়ারি ১, ২০২০

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : ১১ দফা দাবিতে খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলের শ্রমিকরা দ্বিতীয় দফায় আন্দোলন আমরণ অনশন শুরুর তৃতীয় দিন পার করে নতুন বছরে আজ চতুর্থ দিন । চতুর্থ দিনে প্রচন্ড ঠান্ডা জনিত কারনে অনশনরত প্রায় ৫৮৫ জন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে পড়েন। এদের মধ্যে গুরুতর ১৪ জন শ্রমিককে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছেন। বুধবার (১ জানুয়ারি) আন্দোলনের চতুর্থ দিনে খুলনা সদর উপজেলার খালিশপুরে অনশনকালে শ্রমিকরা অসুস্থ হয়ে পড়েন।

জানা যায়, জেলা সদরের খালিশপুরে অবস্থান নিয়ে শান্তি পূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছিল পাটকল শ্রমিকরা। আন্দোলনের একপর্যায়ে পাটকল শ্রমিকরা একে একে অসুস্থ হতে শুরু করে। মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) বিকাল পর্যন্ত গুরুতর অসুস্থ হয়ে নয়জন খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়। এছাড়া পাঁচজন শ্রমিক বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হয়। আহতদের মধ্যে রয়েছে- প্লাটিনাম জুট মিলের আটজন ও স্টার জুট মিলের চারজন এবং ক্রিসেন্ট ও খালিশপুর জুট মিল থেকে একজন। আহতরা হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে কমপক্ষে ৫০ জন শ্রমিককে হাসপাতালে স্যালাইনসহ প্রয়োজনীয় ওষুদ দেওয়া হয়েছে।

শ্রমিক নেতারা জানান,ইতোমধ্যে আমরণ অনশন আন্দোলনের চতুর্থ দিনে প্রায় ৫৮৫ জন শ্রমিক অসুস্থ হয়ে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। এর মধ্যে প্লাটিনাম জুট মিলের ৩০৬ জন, স্টার জুট মিলের ১৭৭ জন, ক্রিসেন্ট জুট মিলের ৭৬ জন, খালিশপুর জুট মিলের চারজন। এছাড়া বাকি ২২ জন অন্যান্য জুট মিলের শ্রমিক।

উল্লেখ,পাটখাতে প্রয়োজনীয় অর্থবরাদ্দ, বকেয়া মজুরী- বেতন পরিশোধ, জাতীয় মজুরী ও উৎপাদনশীলতা কমিশনের রোয়েদাদ ২০১৫ বাস্তবায়ন, অবসর প্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ ও গ্র্যাচুইটির অর্থ পরিশোধ, চাকুরীচ্যুত শ্রমিক-কর্মচারীদের পূর্নবহাল সহ ১১ দফা দাবিতে গত ১৭ নভেম্বর ৬ দিনের কর্মসূচীর ডাক দেয় রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল সিবিএ-নন সিবিএ সংগ্রাম পরিষদ। এ কর্মসূচীর অংশ হিসাবে ১০ ডিসেম্বর থেকে অনশন কর্মসূচী পালন করে শ্রমিকরা। অনশনের চতুর্থ দিন ১৩ ডিসেম্বর রাতে স্থানীয় সংসদ সদস্য ও শ্রম ও কর্মসস্থান প্রতিমন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানের প্রতিশ্রুতিতে আন্দোলনরত শ্রমিক নেতারা তাদের কর্মসূচী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত স্থগিত করেছিল । প্রতিশ্রুতি ধারাবাহিকতায় পরবর্তীতে ১৫ ডিসেম্বর বিজেএমসিতে ও ২৬ ডিসেম্বর শ্রম ও কর্মসস্থান মন্ত্রনালয়ে শ্রমিক নেতাদের সাথে বৈঠকে দাবির ব্যাপারে কোন সমাধান না হওয়ায় আবারও অনশন কর্মসূচীর ডাক দেয় সংগ্রাম পরিষদের নেতারা। ২৮ ডিসেস্বের খুলনা-যশোর অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকলের মিলগুলোতে শ্রমিক সভার মাধ্যমে অনির্দিষ্ট কালের জন্য অনশন কর্মসূচীর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেন সংগ্রাম পরিষদের নেতারা।

খালিশপুর শিল্প এলাকার বিআইডিসি রোডে ক্রিসেন্ট, প্লাাটিনাম, খালিশপুর, দিঘলিয়ার ষ্টার, খালিশপুর, দৌলতপুর আটরা শিল্প এলাকার আলীম, ইষ্টার্ন এবং নওয়াপাড়া শিল্প এলাকার কার্টেং ও জেজেআই মিলের শ্রমিকরা স্ব স্ব মিল গেটে সারা রাত খোলা আকাশের নীচে অবস্থান নিয়ে চতুর্থ দিনে অনশন কর্মসূচী পালন করছে। কর্মসূচী চলাকালে খালিশপুর, আটরা ও রাজঘাট এলাকায় দফায় দফায় শ্রমিক সমাবেশ ও বিক্ষোভ করে পাটকল শ্রমিকরা। দুনিয়ার মজদুর একহও, ১১ দফার ভিক্তিতে লড়তে হবে একসাথে, আমাদের দাবি আমাদের দবি, মানতে হবে মেনে নাও! শ্রমিকদের এই বুক ফাটা শ্লোগানে ভারী হয়ে ওঠে গোটা শিল্পাঞ্চল সহ আশ-পাশ এলাকা।

শ্রমিক সমাবেশে বক্তব্য দেন- রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল সিবিএ ননসিবিএ সংগ্রাম পরিষদের যুগ্ম আহবায়ক মোঃ মুরাদ হোসেন, মোঃ সোহরাব হোসেন, শাহানা শারমিন, হুমায়ুন কবির খান, আবু দাউদ দ্বীন মোহাম্মদ, শ্রমিক নেতা কাওসার আলী মৃধা, মোঃ খলিলুর রহমান, সেলিম আকন, সেলিম শিকদার,মনিরুল ইসলাম শিকদার, মোঃ আবু হানিফ, সাহাজান সিরাজ মোঃ তরিকুল ইসলাম, মিজানুর রহমান ও মিন্টু মিয়া, ষ্টার জুট মিলের আবু হানিফ, তবিবর রহমান, আলমগীর হোসেন, সিরাজুল ইসলাম লিয়াকত হোসেন ,খালিশপুর জুট মিলের সহ-সম্পাদক কামাল হোসেন সেন্টু। সমাবেশে বক্তারা অবিলম্বে শ্রমিকদের ১১ দফা বাস্তবায়নের জন্য বিজেএমসি কর্তৃপক্ষের কাছে জোড় আহবান জানান।

খালিশপুর শিল্পাঞ্চলের চারটি জুট মিলসহ রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল শ্রমিকরা ক্রিসেন্ট গেটে অনশন প্যান্ডেলে আসেন এবং অনশনে যোগ দেন। কাঁথা-বালিশ, লেপ, কম্বল নিয়ে অনশন পালনকারী শ্রমিকরা রাত যাপন করেছে রাস্তায়। শ্রমিকরা বলেন, আমরা দীর্ঘদিন থেকে বকেয়া মজুরি পরিশোধ ও মজুরি কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়ন, সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের সিদ্ধান্ত বাতিল ও অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের পিএফ ও গ্র্যাচুইটির টাকা দেওয়াসহ ১১ দফার দাবি জানিয়ে আসছি। এ নিয়ে দীর্ঘদিন আন্দোলন চললেও এ পর্যন্ত শ্রমিকদের দাবি দাওয়া পূরণ হয়নি। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমরণ অনশন কর্মসূচি চালিয়ে যাব। প্রয়োজনে জীবন দিবো তবুও দাবী আদায় না হওয়া পর্যন্ত মিলের উৎপাদনের চাঁকা ঘুবে না ।

This post has already been read 2800 times!