Thursday 25th of April 2024
Home / তারকা কৃষক / অভাবী থেকে যেভাবে স্বচ্ছল হলেন কৃষক কল্লোল গোস্বামী

অভাবী থেকে যেভাবে স্বচ্ছল হলেন কৃষক কল্লোল গোস্বামী

Published at জুলাই ১১, ২০১৮

ফকির শহিদুল ইসলাম (খুলনা) : অল্প জমিতে অধিক ফসল উৎপাদন করে অধিক আয়ে স্বচ্ছল হয়েছেন খুলনার কৃষক কল্লোল গোস্বামী। এ এলাকার জমিতে আমন চাষ যেমন ব্যায় ও কষ্টকর কিন্তু লাভ সীমিত। অন্যদিকে কৃষক কল্লোল গোস্বামীর পর্যাপ্ত কৃষি জমিও নেই। সে প্রেক্ষিতে অল্প জমিতে অধিক ফসল অধিক আয় করে সংসারের অভাব অনটন মেটাতে হবে। রয়েছে বিভিন্ন এনজিওর ঋণের বোঝা। ঋণের বোঝা ঘোচাতে এবং সংসারের অভাব অনাটন মেটাতে শুরু করেছিলেন নতুন করে জীবন যুদ্ধে। এ জীবন যুদ্ধে সফলও হয়েছেন খুলনার দাকোপ উপজেলার কৈলাশগঞ্জ ইউনিয়নের হরিণটানা গ্রামের কৃষক কল্লোল গোস্বামী।

কৃষক কল্লোল ভাবলেন, কিভাবে স্বল্প জমিতে ফসল ফলিয়ে বেশী লাভ করা যায়? এমনই ভাবনা থেকে খুঁজে পান নতুন দিগন্তের পথ। দাকোপ উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কৃষি প্রশিক্ষণ নিয়ে কল্লোাল তাঁর ভাগ্যের নতুন দিগন্তের পথে চলা শুরু করেন।

প্রশিক্ষণ শেষে প্রথমে তিনি সবজি চাষের জন্য ধানের জমি থেকে দশ কাঠা জমিতে ছোট একটি পুকুর কেটে পোতা (পুকুর পাড়) উঁচু করে নিলেন। পুকুরটা এমনভাবে গভীর করলেন যেন গরমের সময় পানি থাকে। এরপর উঁচু পোতাটিকে ভালো করে ঘিরে দেয়া হয় যাতে গবাদিপশু প্রবেশ করতে না পারে। এরপর শুরু করলেন পরিকল্পিতভাবে এবং নিবিড় পরিচর্যার মাধ্যমে সবজি চাষ। জ্যৈষ্ঠ মাসে ভিটে উঁচু করার পর আষাড় মাসে ছোট ছোট মাদা তৈরি করে সেখানে জৈব সার দিয়ে করলেন শশার চাষ। কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী গাছে প্রয়োজনীয় সেচ, সার ও কীটনাশক দিতে থাকেন কৃষক কল্লোল। এক মাস বয়স থেকেই শশা ধরতে শুরু করে। শশার আশাতীত ফলন দেখে স্বপ্ন পূরণের নতুন দিগন্তের পথ খুঁজে পান কৃষক কল্লোল। ভাদ্র মাস পর্যন্ত শশা বিক্রি করে সে সব খরচ বাদে প্রায় ৪০ হাজার টাকা লাভ করেন।

শশার বাম্পার ফলনের পর আশ্বিন মাসে ক্ষেত ভালোভাবে পরিষ্কার করে রৌদ্রে শুকিয়ে সেখানে প্রথমে বেগুনের চারা রোপন করেন। চারা রোপনের পর নিয়মিত সেচ, সার প্রয়োগ ও কীটনাশক ছিটাতে থাকেন। চারাগুলি দেখতে দেখতে আশ্বিন মাসের মধ্যে ডালপালা বিস্তার করে বেশ বড় হয়ে গেল। আশ্বিনের শেষ সপ্তাহের দিকে তাতে ফুল ধরা শুরু হয়। তারপর ফুল থেকে বড় বড় বেগুনের ফলন। অগ্রহায়ণ মাসে বেগুন বিক্রির মাধ্যমে তার আয় বৃদ্ধি পায়।

কৃষক কল্লোল এগ্রিনিউজ২৪.কম কে বলেন, ‘প্রতি সপ্তাহে ২ মন করে বেগুন বিক্রয় করেছি। বেগুনের বাজার দরও বেশ ভালো ছিল। তার উপর রাসায়নিক সার ও কীটনাশক বেশী প্রয়োগ না করার কারণে এলাকাতে আমার ক্ষেতের বেগুনের চাহিদা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি ছিল। খুব অল্প সময়ে ৩০ হাজার টাকার বেগুন বিক্রি করি। এমনভাবে সপ্তাহ সপ্তাহ বেগুন উঠিয়ে সেগুলো বিক্রি করি চৈত্র মাস পর্যন্ত।’

কথা বলতে বলতে কল্লোলের সাথে হাঁটতে হাঁটতে সেই বেগুন ক্ষেতে পরিদর্শন করতে যাই। সেখানে দেখা যায়- চারপাশে লাউ, কুমড়া, টমেটো, পুঁইশাক এবং ওলকপির ফলনও প্রচুর পরিমানে। ক্ষেতে দাঁড়িয়ে কল্লোল জানান, বেগুন এবং শশা বাদে অন্যান্য সবজি বিক্রয় হয়েছে ১০ হাজার টাকার। তিনি জানান, এ সবুজ বাগানকে ঘিরে ছিল নিজেকে স্বাবলম্বী ও স্বচ্ছল হয়ে ওঠার স্বপ্ন। বর্তমানে কল্লোলের গ্রামের প্রধান সড়কের পাশে সবুজ এবং সাজানো গুছানো বাগানটি দেখতে শুধু ক্রেতারা নয়, আসেন এলাকার অনেক কৃষক ও দর্শনার্থীরা।

কল্লোল বলেন, বাগানটি দেখতে এসেছিলেন কৈলাশগঞ্জের ইউপি চেয়ারম্যান মিহির মন্ডল। তিনি বাগানটি দেখে মুগ্ধ হয়েছেন এবং ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোষ্ট করেছেন। তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশ কৃষি প্রধান দেশ। একমাত্র কৃষিই পারে দেশের মানুষের খাদ্যাভাব দূর করতে। অনেক সাফল্যের মাঝে তিনি দুঃখ করে বলেন, কৃষি জমি নষ্ট করে এলাকায় রাতারাতি শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে এটা ঠিক নয়। কৃষি জমিকে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। যা আমাদের মত চাষিরা ব্যবহার করে স্বাবলম্বী হতে পারেন।

এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোছাদ্দেক হোসেন বলেন, কৃষি ক্ষেত্রে খুলনার দাকোপ উপজেলা একটি মডেল। লবনাক্ত দাকোপের মাটিতে একসময় শুধু আমন ধান ছাড়া আর কিছুই হত না সেখানে মাঠে এখন বারোমাস ফসল থাকে। গরীব কৃষকরা পেয়েছেন অর্থের সন্ধান। এটি সম্ভব হয়েছে এলাকার প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি এবং কল্লোল গোস্বামীর মত একদল উদ্যমি কৃষকের আগ্রহ ও সহযোগিতায়।

This post has already been read 3200 times!