Thursday 25th of April 2024
Home / আঞ্চলিক কৃষি / অনুর্বর ও পাহাড়ি জমি কৃষির আওতায় এনেছেন রামগড়ের সদ্য বিদায়ী ইউএনও বদরুদ্দোজা

অনুর্বর ও পাহাড়ি জমি কৃষির আওতায় এনেছেন রামগড়ের সদ্য বিদায়ী ইউএনও বদরুদ্দোজা

Published at আগস্ট ১৮, ২০২০

আ ন ম বদরুদ্দোজা (ইনসেটে)

খাগরাছড়ি সংবাদদাতা: খাগরাছড়ি’র রামগড়ে শত শত বিঘা উষর জমি ও পাহাড় কৃষির আওতায় এনে মহামারী’র এই দুর্যোগের সময়ও কর্মসংস্থান ও দারিদ্র বিমোচনের বিরল দৃষ্টান্ত  স্থাপন করেছেন উপজেলার সদ্য বিদায়ী নির্বাহি অফিসার আ ন ম বদরুদ্দোজা।

সরেজমিন দেখা যায়, পার্বত্য অঞ্চলের অন্যান্য পাহাড়ের মতই রামগড়ের বেশিরভাগ পাহাড় অনাবাদি ও বুনো। যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকার পরও পর্যাপ্ত উদ্যোগের অভাবে পাহাড়গুলোতে শুধু কচুমুখী চাষ হয়, যা পরিবেশের জন্যে ভাল নয় এবং একই সাথে এই ফসল হতে স্থানিয় বাংগালি, আদিবাস সবার মুনাফাও হয়না বললেই চলে। খুব অল্প সংখ্যক পাহাড়ে কিছু ফলজ ও বনজ গাছের বাগান রয়েছে। যথাযথ পরিচর্যার অভাবে এ বাগানগুলোতেও আশানুরুপ ফলন হয় না ।

সদ্য বিদায়ী ইউএনও আ.ন.ম বদরুদ্দোজা জানান, তিনি গত ফেব্রুয়ারিতে রামগড়ে যোগদান করেন। যোগদানের কিছু দিনের মদ্ধেই সুদুর কুমিল্লা, চাদপুর, চট্টগ্রাম, ঢাকা থেকে বিভিন্ন্ ব্যাবসায়িকে এই উষর পাহাড়ে বিনিয়োগে উদবুদ্ধ করেন।

তিনি রামগড়ে যোগদানের কিছু দিনের মধ্যেই সারাদেশে কভিড-১৯ এর প্রকোপ শুরু হয়। এরমধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দেন “এক ইঞ্চি ভূমিও অনাবাদী রাখা যাবে না”। জানা যায়, এই ঘোষনায় অনুপ্রাণীত হয়ে বিদায়ী ইউএনও পাহাড়ী অনাবাদী ভূমিগুলোকে আবাদী করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন। তিনি উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় এলাকার কৃষকদের বাগান করতে উদ্বুদ্ধ করেন। এছাড়া সরকারি ত্রাণ বিতরণে বিভিন্ন প্রত্যন্ত পাহাড়ী এলাকায় গিয়েও এলাকাবাসীকে বাগান করতে অনুপ্রাণিত করেন। তার অনুপ্রেরণায় বিভিন্ন জেলার বেশ কিছু উদ্যোক্তা স্থানীয় মানুষ হতে শত শত একর জমি লিজ নিয়ে গড়ে তুলছেন ফল ও মসলার বাগান।

কুমিল্লার ব্যাবসায়ী বোরহান উদ্দদীন জানান, তারা কয়েকজন উদ্যোক্তা মিলে পনের একর জমি ৩০ বছরের জন্য লীজ নিয়েছেন এবং সেখানে দেশি বিদেশি বিভিন্ন ফল ও মসলার প্রায় ৮ হাজার চারা রোপন করেন। এই বাগানে প্রতিদিন প্রায় ৩০-৩৫ জন শ্রমিক কাজ করে। তারা জংগল পরিস্কার করে বাগান করায় আশেপাশের অনেকেই উদ্বুদ্ধ হয়ে বাগান করা শুরু করেছেন। ফলে অনাবাদী পাহাড় পরিণত হচ্ছে ফলজ বাগানে।

বোরহান বলেন, কাজু বাদামের এক বিশাল সম্ভাবনা আছে রামগড়ের পাহাড়ে। সরকারী সাহায্য পেলে সেখানে তারা কাজুবাদাম প্রসেসিং প্লান্ট খুলবেন।

দিনমজুর জ্যোতি রানী ত্রিপুরার সাথে কথা বলে জানা যায়, চারদিকে এ রকম বাগান হওয়ায় তাদের মতো মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তারা নিজেরাও তাদের মালিকানাধিন পাহাড় লিজে দিচ্ছেন।

স্থানিয় মুসা মিয়া ও মো: শাহাজানের সাথে কথা বলে জানা যায়, বছরের পর বছর এসব পাহাড় ও জমি থেকে তাদের কোনো আয় নেই। এখন জমি ইজারা থেকেও আয় হচ্ছে আবার এই পাহাড়ী বাগানের রক্ষনাবেক্ষনের কাজ নিজেরায় করায় তাদের কর্মসংস্থানের ব্যাবস্থাও হচ্ছে।

স্থানীয় ফলজ নার্সারী ব্যবসায়ী মো জাহিদ হোসেইন জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রায় ৪ গুন চারা বেশি বিক্রি হয়েছে যা ইউএনও স্যারের অবদান। তিনি জানান এ পর্যন্ত ২০ লাখ টাকার অধিক চারা বিক্রয় করেছেন।

উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার নাছির উদ্দীন বলেন, প্রশাসন ও সম্প্রসারণ অফিসের মিলিত উদ্যোগে মাত্র পাচ মাসে প্রায় তিন শত একর উষর পাহাড় ও তৎসংলগ্ন জমি কৃষির আওতায় এসেছে। তিনি বলেন, এই প্রক্রিয়া চলমান থাকবে। “প্রধানমন্ত্র্রি’র নির্দেশ অনুযায়ী রামগড়ের সকল অব্যবহৃত উষর পাহাড় ও জমি ফল, মসলা ও অন্যান্য সব্জির আওতায় আনার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি”, নাছির বলেন।

এছাড়া বিদায়ী ইউএনও রামগড়ের ঐতিহ্যবাহী রামগড় লেকটিকে সংস্কার ও আলোকসজ্জার মাধ্যমে পুরানো রুপে ফিরিয়ে এনেছেন। পুরো উপজেলা ক্যাম্পাসে স্থাপন করেছেন সিসিটিভি ক্যামেরা। এছাড়া রামগড় সোনাইপুল টোল প্লাজার ব্যাপক অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছেন।

This post has already been read 3153 times!